আমিন মুনশি : একাদশ সংসদ নির্বাচনের তৎপরতা শুরু হওয়ার পর থেকেই ধর্মভিত্তিক কিছু দলকে আওয়ামী লীগ কাছে টানার চেষ্টা শুরু করে। এর মধ্যে প্রয়াত মুফতি ফজলুল হক আমিনীর ইসলামি ঐক্যজোট, মোস্তফা আমির ফয়সালের জাকের পার্টি, বাহাদুর শাহ মোজাদ্দেদীর ইসলামিক ফ্রন্ট ও মিছবাহুর রহমান ও এম এ আউয়ালের ইসলামিক ডেমোক্রেটিক অ্যালায়েন্স অন্যতম। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাদের কোনো আসনে ছাড় দেয়নি আওয়ামী লীগ। যদিও নজিবুল বশরের নেতৃত্বে বাংলাদেশ তরীকত ফেডারেশন আওয়ামী লীগের কাছ থেকে দুইটি আসন পেয়েছে, যেখানে এই দলের প্রার্থীরা নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করবেন।
আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী সূত্র বলছে, এই দলগুলোর ভোট আওয়ামী লীগের বাক্সে পড়বে না। মূলত তারা যাতে বিএনপি জোটে না ভিড়ে যায়, সে জন্যই তাদেরকে কাছে টানার কৌশল নেয় আওয়ামী লীগ।
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা এবং দলের প্রেসিডিয়ামের সাবেক সদস্য নূহ-উল-আলম লেনিন বিবিসি বাংলার এক সাক্ষাতকারে এই বাস্তবতা স্বীকার করে বলেছেন, সমাজে ধর্মের প্রভাব বৃদ্ধির বাস্তবতার সাথে তাদের দলকে খাপ খাইয়ে নিতে হচ্ছে।
‘৭২ থেকে ৭৫ পর্যন্ত ধর্মরিপেক্ষতার বোধ সমাজে যতটা ধারালো ছিল, এখন তা নেই। ৭৫ এ বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর সংবিধান থেকে ধর্মনিরপেক্ষতাকে বাদ দেয়া হয়। একের পর এক সরকার ধর্মনিরপেক্ষতার বিরোধিতা করেছে এবং ধর্মীয় রাজনীতির পৃষ্ঠপোষকতা করেছে, এসবের প্রভাব তো সমাজে পড়েছেই।’
তিনি বলেন, এখন দুনিয়াব্যাপী মৌলবাদী ধর্মের প্রভাব বাড়ছে। বাংলাদেশের মুসলমানরাও তার বাইরে নয়। ‘আওয়ামী লীগের কর্মী সমর্থকদের বেশিরভাগই তো মুসলিম। তাদের মধ্যেও ধর্মান্ধতা না হোক, মৌলবাদ না হোক, ধর্মের প্রভাব তো বেড়েছেই, এটা নিঃসন্দেহে বলতে পারি।’
তিনি আরো বলেন, পঞ্চদশ সংশোধনী আনতে গিয়েও আওয়ামী লীগ ধর্মের বাস্ততাকেই কার্যত মেনে নিয়েছে। আমরা সংবিধানে ধর্মনিরপেক্ষতা ফিরিয়ে এনেছি, কিন্তু একই সাথে ‘বিসমিল্লাহির রাহমানের রহিম’ রেখে দিয়েছি। রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম তা রেখে দেওয়া হয়েছে। কারণ, এগুলো মানুষের ধর্মীয় আবেগের সাথে জড়িত। পরিস্থিতির পরিবর্তন, ধর্মাশ্রয়ী রাজনীতির প্রভাবের কারণে আমাদের এ্যাডজাস্টমেন্ট, আপোষ করতে হয়েছে।
হেফাজতে ইসলাম প্রসঙ্গে লেনিন বলেন, তাদের সঙ্গে ভোটের বিবেচনায় নয়, বরঞ্চ ‘বিপজ্জনক ধর্মীয় রাজনীতি থেকে দেশকে বাঁচানোর’ কৌশল হিসাবে তার দল কিছুটা আপোষ করেছে।
তার বক্তব্য, ধর্মের নামে যে রাজনীতি হচ্ছে, তা থেকে যদি ধর্মে বিশ্বাসী বা ধর্মীয় বড় একটি গোষ্ঠীকে আমরা দুরে রাখতে পারি, সেটা ইতিবাচক। এবং সেটা করতে আমাদের কিছুটা আপোষ করতে হয়। আমরা সেটা করেছি। আমরা মনে করি এর ভেতর দিয়ে আমাদের প্রতিপক্ষ জামায়াত যারা ধর্মীয় রাষ্ট্র কায়েম করতে চায়, তাদের কাছ থেকে যদি সমাজের আমরা একটি অংশকে দুরে রাখতে পারি, সেটা আমাদের উন্নয়ন এবং গণতন্ত্রের জন্য ভালো।’
আপনার মতামত লিখুন :