শিরোনাম
◈ জলদস্যুদের হাতে জিম্মি জাহাজ মুক্ত করার বিষয়ে  সরকার অনেক দূর এগিয়েছে: পররাষ্ট্রমন্ত্রী  ◈ এসএসসি পরীক্ষায় আমূল পরিবর্তন, বদলে যেতে পারে পরীক্ষার নামও ◈ পঞ্চম দিনের মতো কর্মবিরতিতে ট্রেইনি ও ইন্টার্ন চিকিৎসকরা ◈ অর্থাভাবে পার্লামেন্ট নির্বাচনে লড়বেন না ভারতের অর্থমন্ত্রী ◈ কখন কাকে ধরে নিয়ে যায় কোনো নিশ্চয়তা নেই: ফখরুল ◈ জনপ্রিয়তায় ট্রাম্পের কাছাকাছি বাইডেন ◈ আদালত থেকে জঙ্গি ছিনতাই মামলার তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়ার নতুন তারিখ ৮ মে ◈ সেনা গোয়েন্দাসংস্থার বিরুদ্ধে ৬ পাক বিচারপতির ভয় দেখানোর অভিযোগ ◈ নিরস্ত্র ফিলিস্তিনিরা সাদা পতাকা উড়াচ্ছিল, তাদের বূলডোজার দিয়ে মাটি চাপা দিল ইসরায়েলী সেনারা ◈ যুক্তরাষ্ট্রে পুলিশের গুলিতে বাংলাদেশি তরুণ নিহত

প্রকাশিত : ১১ ডিসেম্বর, ২০১৮, ১০:৫০ দুপুর
আপডেট : ১১ ডিসেম্বর, ২০১৮, ১০:৫০ দুপুর

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

মুক্তি কিধার হ্যায়-মুক্তি আতাহে কিধারছে…..

মাহাফুজ নান্টু : রাত প্রায় পৌনে বারটা। আগের রাতের নারকীয় তান্ডবের গন্ধ এখনো বাতাসে ভাসছে। পানিশূণ্য শুকনো ডোবায় শরীর মাটির সাথে লাগিয়ে মাথা তুলে সামনের দিকে তাকিয়ে আছে চারজন কিশোর মুক্তিযোদ্ধ। দু’জনের হাতের মুঠোয় দু’টি থ্রি নট থ্রি রাইফেল,আর বাকি দু’জনের হাতে দু’টি পিনটানা গ্রেনেড। চোখেমুখে চাপা ভয় আর উত্তেজনা।

দূর থেকে ভেসে আসছে গুলির ঠা ঠা শব্দ। চার কিশোর মুক্তিযোদ্ধার একজন আবদুস সামাদ। আদর্শ সদর উপজেলার শিমড়া গ্রামের সন্তান আবদুস সামাদ। প¦ার্শবর্তী ভরাসার উচ্চ বিদ্যালয়ে অষ্টম শ্রেনী থেকে নবম শ্রেনীতে পা রাখা কিশোর সামাদ দেশকে স্বাধীন করার জন্য প্রায়ই গেরিলা আক্রমণ চালাতো। বুদ্ধিদীপ্ত গেরিলা আক্রমনগুলো ছিলো বেশ চমকপ্রদ ও সাফল্যময়।

২৬ মার্চ স্বাধীনতার ঘোষনা হলেও দেশের কিছু এলাকায় তখনোও পাকিস্থানী হানাদার বাহিনী বিভিন্ন জনপদ থেকে নর-নারী ধরে এনে লাইনে দাড় করিয়ে গুলি করে মাটি চাপা দিতে লাগলো। সকালে স্কুলে যাওয়ার পথে কিশোর মুক্তিযোদ্ধা আবদুস সামাদের কাছে খবর এলো আজ রাতেও পাকিস্থানীরা সাধারণ মানুষ-বিশেষ করে মুক্তিযোদ্ধাদের উপর হামলা চালাবে। বেলা বারোটায় স্কুল ফাঁকি দিয়ে বাড়ীতে চলে আসে আবদুস সামাদ। সঙ্গী বাকি তিন সহযোদ্ধা। রসুল বদ্ধভূমির পাশে রেকি করতে লাগলো। কিভাবে পাকিস্থানী হানাদার বাহিনীকে আ্যাম্বুশ করে গেরিলা হামলা চালাবে সন্ধ্যা পর্যন্ত সে রকম পরিকল্পনা করতে লাগলো।

রাত সাড়ে এগারোটা থেকে পৌনে বারটা হবে। আদর্শ সদর উপজেলার রসুলপুর রেলওয়ে ষ্টেশন থেকে তিন’শ মিটার উত্তরে রসুলপুর বদ্ধভূমি। আর বদ্ধভূমির পাশে পানিশূন্য ডোবায় চার কিশোর মুক্তিযোদ্ধা। মুক্তিযোদ্ধ শুরুর সময় থেকেই বিভিন্ন এলাকা থেকে মানুষজন ধরে এনে এই বদ্ধভুমিতে নারকীয় হত্যাযজ্ঞ চলায় পাকিস্থানীরা। সন্ধ্যার পর থেকে সাই করে একটি জিপ থামলো রসুলপুর বদ্ধভূমিতে। একে একে চারজন বাঙ্গালীকে নামিয়ে আনা হলো। এর মধ্যে একজন কিশোরী ছিলো। ছিন্নভিন্ন জামা কাপড় স্পষ্ট জানান দিচ্ছিলো কিছুক্ষন আগে তার শরীরটার উপর দিয়ে কি নির্যাতনটা গেছে। ক্লান্ত শরীরটা নিয়ে চলতে পারছিলো না। তবুও মায়া হয়নি হায়েনাদের। বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে বদ্ধভূমিতে আনা হলো।

লাইনে দাড় করিয়ে রাখা হলো। দ্বিধান্বিত কিশোর মুক্তিযোদ্ধা আবদুস সামাদ ও তার সঙ্গীরা। যাদেরকে হত্যার জন্য জন্য ধরে আনলো তাদের খুব কাছে থাকার কারনে গ্রেনেড নিক্ষেপ করতো পারলো না, আবার হামলায় যদি একটু ভুল হয় তাহলে তাদেরকেও মরতে হবে। পাকিস্থানীরা ছয়জন। ভারী অস্ত্র-শস্ত্র সাথে। তাই আক্রমন করতে হবে খুব কৌশলে। কিশোর মুক্তিযোদ্ধা আবদুস সামাদ তার হাতে থাকা গ্রেনেডের চাবিটিতে ধরে আছে। পাশের জনের হাতে একটি গ্রেনেড। আর দু’জনের হাতে দু’টি থ্রি নট থ্রি রাইফেল। এগুলোও পাকিস্থানীদেও ক্যাম্পে গেরিলা হামলা করে ছিনিয়ে এনেছিলো। এখন শত্রুর অস্ত্র দিয়ে শত্রু বধ করার পালা। হঠাৎ আকাশ বাতাস প্রকম্পিত করে ব্রাশ ফায়ার করলো।

এক মুহূর্তেই মাটিতে লুটিয়ে পড়লো ধরে চারজন বাঙ্গালী। রাগে ক্ষোভে স্থির থাকতে না পেরে আদেশের আগেই গ্রেনেড ছুড়ে মারলো পাকিস্থানী হায়েনাদের উপর আবদুস সামাদের পাশের কিশোর মুক্তিযোদ্ধা। ছয়জনের মধ্যে দুজন পাকিস্থানী হায়েনা সাথে সাথে মারা যায়,বাকি চারজনের মধ্যে দুজন আহত হয়। বেঁচে যাওয়া দু’জন এবার এলোপাথারি গুলি চালাতে লাগলো। রাতের নিকোশ কালো অন্ধকারে হায়েনারদল বুঝতে পারেনি কোন দিক থেকে গ্রেনেড ছুড়া হয়েছে। কিছুক্ষন এলোপাথারি গুলি ছুড়ার পরে আহত সঙ্গীদের গাড়িতে তুলতে গিয়ে রাগে গরগর করছিলো এক পাকিস্থানী। গেরিলা হামলা আর নিজেদের পরাজয়ে বেশ বিরক্তমুখে বলতে লাগলো মুক্তি কিধার হ্যায়..কাহাছে আতাহে ইয়ে মুক্তি অওর কাহাছে যাতাহে কুচ মালুম নেহি...

পৌষ-মাঘের পাতাঝরা নিস্তবব্দ দিনশেষে গাছে গাছে নতুন কুঁড়ি আর ফুলের গন্ধ প্রকৃতিতে ফাগুনের আগমনী বার্তা জানান দিচ্ছিলো। ভোরে দূর মসজিদ থেকে আজানের ধ্বনি কানে এসে লাগলো। কিছুক্ষন পরে পূব আকাশে সবুজ গাছের পাতার মাঝে লাল সূয়্যেও আলোকচ্ছটা ডোবায় শুয়ে থাকা চার কিশোরে চোখেমুখে একে দেয় যুদ্ধ জয়ের আনন্দ। লাল সবুজের আনন্দ-স্বাধীনতার আনন্দ।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়