মাসুদ মিয়া : আর ১৯দিন বাদে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোটের মাঠে থাকছেন এক হাজার ৮৪১ প্রার্থী। এরমধ্যে রাজনৈতিক দলের প্রতীক নিয়ে লড়াই করবেন এক হাজার ৭৪৫ জন। স্বতন্ত্র প্রার্থী ৯৬ জন। রিটার্নিং অফিসারদের পাঠানো তথ্য বিশ্লেষণ করে গতকাল সোমবার রাতে নির্বাচন কমিশনের নির্বাচন পরিচালনা শাখা এ তথ্য জানিয়েছে। এর আগে, রোববার ছিল প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ সময় দিন।
এবারের সংসদ নির্বাচনে মোট ৩ হাজার ৬৫ জন প্রার্থী মনোনয়নপত্র দাখিল করেন। রিটার্নিং অফিসারদের যাচাই-বাছাই শেষে এর সংখ্যা দাঁড়ায় প্রায় ২ হাজার ৩০০। পরে নির্বাচন কমিশন ও উচ্চ আদালতে আপিল করে আড়াই শত’র মতো প্রার্থী তাদের প্রার্থিতা ফেরত পান। এবার সর্বোচ্চ কুমিল্লা-৩ আসনে সর্বোচ্চ ১৫ জন ও সর্বনিম্ন কয়েকটি আসনে তিনজন করে প্রার্থী রয়েছেন। সবচেয়ে বেশি প্রার্থী রয়েছে কুমিল্লা-৩ আসনে সবচেয়ে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী রয়েছে। আর সবচেয়ে কম হিসাবে ৩ জন করে রয়েছে চট্টগ্রাম-৬, বান্দরবান, ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৪, গোপালঞ্জ-২, মাদারীপুর-৩, রাজবাড়ি-১, ময়মনসিংহ-১, শেরপুর-২, ভোলা-৪, ভোলা-২, সাতক্ষীরা-৩, ঝিনাইদহ-১, মাগুরা-২, রাজশাহী-৪, সিরাজগঞ্জ-১, চাপাইনবাবগঞ্জ-২, নীলফামারী ৩ আসনে।
এ হিসেবে দুইটি আসনে মহাজোটের একাধিক প্রার্থী রয়েছে। অন্যদিকে বিএনপি ২৪২টি আসনে তাদের প্রার্থী দিয়েছে। তাদের দুই জোট সঙ্গীর মধ্যে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টকে ১৯টি এবং ২০ দলীয় জোটকে ৩৯টি আসন দিয়েছে। জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের দলগুলোর মধ্যে ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বাধীন গণফোরামকে ৭টি, আ স ম আব্দুর রবের নেতৃত্বাধীন জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল জেএসডিকে ৪টি, মাহমুদুর রহমান মান্নার নেতৃত্বাধীন নাগরিক ঐক্যকে ৪টি এবং বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকীর কৃষক শ্রমিক জনতা লীগকে ৪টি আসন ছেড়ে দেয়া হয়েছে।
অন্যদিকে ২০ দলীয় জোটের শরিকদের মধ্যে জামায়াতে ইসলামীকে ২২টি, কর্ণেল (অব.) অলি আহমেদের লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টিকে (এলডিপি) ৫টি, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ ৩টি, খেলাফত মজলিসের ২টি, বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি ১টি, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি ১টি, এনপিপি ১টি, পিপিবি ১টি, জাতীয় পার্টি (কাজী জাফর) ২টি এবং লেবার পার্টি ১টি আসন পেয়েছে। বিএনপি জোটের প্রার্থীদের মধ্যে ২৯৮জন ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করলেও চট্টগ্রাম-১৪ আসনে ২০ দলীয় জোটের প্রার্থী কর্ণেল (অব.) অলি আহমেদ লড়বেন তার নিজের দলের প্রতীক ছাতা নিয়ে এবং কক্সবাজার-২ আসনে জামায়াতের হামিদুর রহমান আযাদ লড়বেন স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে। এ হিসেবে এই দুই আসনে বিএনপির প্রতীক ধানের শীষের কোন প্রার্থী থাকছে না। বিএনপির প্রার্থীদের মধ্যে কেবল দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশারফ হোসেন দুটি করে আসনে ভোট করছেন।
গত কয়েক দিনে আলোচনা-পর্যালোচনা করে দল ও জোটের প্রার্থী চূড়ান্ত করা হয়। এ নিয়ে দুই জোটে ক্ষোভ-বিক্ষোভ দেখা গেছে। দলের সিদ্ধান্ত অমান্য করে প্রার্থী হয়েছেন অনেকে। এর মধ্যে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীদের অনেককে আলোচনার মাধ্যমে প্রার্থিতা প্রত্যাহার করানো হয়েছে। তবে শেষ মুহূর্তেও কয়েকজন প্রার্থী স্বতন্ত্র হিসেবে মাঠে আছেন। এদিকে মহাজোটের শরিক জাতীয় পার্টির সঙ্গে ২৯ আসনে সমঝোতার কথা বলা হলেও দলটি ১৭৪টি আসনে প্রার্থী দিয়েছে।
প্রচার-প্রচারণা শুরু: প্রতীক পাওয়ার পর প্রার্থীদের আর ঘরে বসে থাকার কোন সুযোগ নেই। নির্বাচনী তফসিল অনুয়ায়ি আজ থেকে শুরু হচ্ছে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রচার-প্রচারণা। যদিও এই একদিনও অনেকে অপেক্ষা করেননি। গতকালই রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছ থেকে প্রতীক বরাদ্দ পাওয়ার পর নেমে পড়েন প্রচারণায়। অনেকেই নিজ নিজ নির্বাচনী এলাকায় চালিয়েছেন গণসংযোগ, উঠান বৈঠক, পথসভা, মিছিলসহ নানা কর্মসূচি। কেউ কেউ আবার প্রার্থীদের হাতে আগে থেকে তৈরি করে রাখা প্রতীক সম্বলিত লিফলেট বিতরণ করেছেন। নির্বাচনী এলাকাগুলোতেও দেখা গেছে দলের প্রধান, প্রার্থী ও প্রতীক সম্বলিত পোস্টার সাটানো হয়েছে। চায়ের দোকানে, হাট-বাজার, গ্রামে-গঞ্জে, মানুষে-মানুষে, নারী-পূরুষ, কৃষক-শ্রমিক, শিক্ষক-শিক্ষার্থী, সবার মুখে মুখে এখন নির্বাচনী আলোচনা। কোথাও প্রার্থীদের পক্ষে আলোচনা বা কোথাও বিপক্ষে। কেউ তুলে ধরছেন প্রার্থীর অতীত কার্যক্রম তো কেউ তুলে ধরণে নতুন প্রার্থী নির্বাচিত হলে কি হবে। এভাবেই চলবে নির্বাচনের আগ পর্যন্ত।
নির্বাচন বিশ্লেষকরা বলছেন, এতদিন ধরে চলা আলোচনা-সমালোচনার একটি চিত্র বোঝা যাবে প্রচার-প্রচারণার শুরু থেকে। প্রার্থীরা নির্বিঘ্নে প্রচার-প্রচারণা চালাতে পারবেন কিনা এ প্রশ্ন রয়েছে বিরোধী রাজনৈতিক দল ও ভোটারদের মাঝে।
যদিও নির্বাচনের মাঠে প্রশাসনকে নিরপেক্ষ থাকার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নূরুল হুদা। তিনি নির্বাচনে দায়িত্বপ্রাপ্ত জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটদের উদ্দেশ্য করে বলেন, আপনারা সাংবিধান ও আইনের ভিত্তিতে দায়িত্ব পালন করবেন। আপনি স্বাধীন, আপনি নিরপেক্ষ, আপনি বিচারক, বিচারকের মাইন্ড আপনাকে অ্যাপ্লাই করতে হবে।
নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে, এবার ১৯ দিন প্রচার কাজ চালানোর জন্য সময় পাচ্ছেন প্রার্থী-সমর্থকরা। ভোটগ্রহণের ৩২ ঘণ্টা আগে সব ধরনের প্রচারণা বন্ধ হয়ে যাবে। এ হিসেবে ২৮ ডিসেম্বর মধ্য রাত ১২টায় প্রচারণা শেষ হবে। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ, বিএনপি, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ও জাতীয় পার্টি সবচেয়ে বেশি প্রার্থী দিয়েছে।
আপনার মতামত লিখুন :