শিরোনাম
◈ উন্নয়ন সহযোগীদের একক প্ল্যাটফর্মে আসা প্রয়োজন: পরিবেশমন্ত্রী ◈ জিয়াউর রহমানের সময়ই দেশে বিভেদের রাজনীতির গোড়াপত্তন হয়: ওবায়দুল কাদের  ◈ এলডিসি উত্তরণের পর সর্বোচ্চ সুবিধা পাওয়ার প্রস্তুতি নিতে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ ◈ ড. ইউনূসকে নিয়ে শিক্ষামন্ত্রীর বক্তব্য দুঃখজনক: আইনজীবী  ◈ ত্রিশালে বাসের ধাক্কায় বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রসহ অটোরিকশার ৩ যাত্রী নিহত ◈ জলদস্যুদের হাতে জিম্মি জাহাজ মুক্ত করার বিষয়ে  সরকার অনেক দূর এগিয়েছে: পররাষ্ট্রমন্ত্রী  ◈ এসএসসি পরীক্ষায় আমূল পরিবর্তন, বদলে যেতে পারে পরীক্ষার নামও ◈ পঞ্চম দিনের মতো কর্মবিরতিতে ট্রেইনি ও ইন্টার্ন চিকিৎসকরা ◈ অর্থাভাবে পার্লামেন্ট নির্বাচনে লড়বেন না ভারতের অর্থমন্ত্রী ◈ কখন কাকে ধরে নিয়ে যায় কোনো নিশ্চয়তা নেই: ফখরুল

প্রকাশিত : ১১ ডিসেম্বর, ২০১৮, ০৫:০৯ সকাল
আপডেট : ১১ ডিসেম্বর, ২০১৮, ০৫:০৯ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

নির্বাচনের দৃশ্যকল্প ও ইশারা-হি ক্কাফি

কাকন রেজা : বিগত বিএনপির শাসনামলে যে কয়জন মন্ত্রীর কথা আজ পর্যন্ত মানুষ মনে রেখেছেন, তাদের একজন হলেন এহসানুল হক মিলন। শিক্ষার এই দুর্গতির কালে যে মানুষটিকে আজো আমজনতা মনে করে। এরশাদের আমলে শুরু হওয়া নকলের মহোৎসবকে পুরোপুরি বন্ধ করেছিলেন তিনি। নকল বন্ধ হওয়ায় শিক্ষার্থীরা ক্লাসে ফিরে গিয়েছিলো। ফিরেছিলেন শিক্ষকরাও। কোচিং বাণিজ্যের ধান্দা বাদ দিয়ে ক্লাসে ফিরতে হয়েছিলো তাদের। শিক্ষাবান্ধব একটি পরিবেশ গড়ে উঠেছিল দেশে। এমন একটি মানুষ এবার বিএনপির মনোনয়নবঞ্চিত হয়েছেন, আমজনতার অংশ হিসেবে সঙ্গতই দুঃখ হয়। সাবেক এই শিক্ষামন্ত্রীর যতোটা না প্রশংসিত হয়েছেন তার কাজের জন্য, তারচেয়ে বেশি হয়েছে দল। আজ যখন তার মনোনয়নের জন্য বিক্ষোভ করতে হয়, তখন মিলনের নয় অর্জনটা ম্লান হয় বিএনপিরই। তার বিপরীতে দল মালোয়েশিয়ার এক ব্যবসায়ীকে মনোনয়ন দিয়েছে, এমনটাই গণমাধ্যম থেকে জানা। মনোনয়ন বাণিজ্যের যে অপবাদ আওয়ামী লীগ-বিএনপির বিরুদ্ধে দেয়, তাও কিন্তু নজর-আন্দাজ করা যায় না এমন ঘটনায়।

দুই. মাহী বি. চৌধুরী এখন একটি আলোচিত নাম। তিনি ঐক্যফ্রন্টকে ভারসাম্যের একটি ফর্মুলা দিয়েছিলেন। ফর্মুলাটি ছিলো ফিফটি ফিফটির। অর্থাৎ বিএনপি রাখবে একশ পঞ্চাশটি আসন, তারা রাখবে একশ পঞ্চাশটি। পরে অবশ্য কিছুটা পরিবর্তন করে বলেছিলেন, বিএনপির অর্ধেক আর তারাসহ ঐক্যফ্রন্টের বাকিরা অর্ধেক। এতে নাকি ক্ষমতার ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা হবে। আরো নানা দাবি ছিলো তার এবং তাদের। কিন্তু ঐক্যফ্রন্ট তাদের ‘ডজ’ দিয়েছে। তিনি নিজেই বলেছেন, ‘ড. কামাল তাদের বাড়িতে দাওয়াত দিয়ে নিজেই বাড়িতে ছিলেন না।’ সেই দুঃখে তিনি আওয়ামী লীগের মহাজোটে যোগ দিয়েছেন। কিন্তু এখানে তার ক্ষমতার ভারসাম্য প্রতিষ্ঠার দাবি কতোটা কার্যকর হয়েছে, এমন প্রশ্ন উঠে এসেছে গণ ও সামাজিকমাধ্যমে।

মহাজোট থেকে বিকল্পধারাকে দেয়া হয়েছে তিনটি আসন। তারমধ্যে জামাই-শ্বশুর মানে মাহী ও অবসরপ্রাপ্ত মেজর মান্নান পেয়েছেন দুটি। অন্যটি পেয়েছেন বিএনপি থেকে মনোনয়ন বঞ্চিত হয়ে সদ্য দলে যোগ দেয়া একজন। একটি মাধ্যমে দেখলাম ‘এক পার্সেন্ট পেয়ে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করলেন মাহী’ এ ধরনের একটি খবর। অর্থাৎ তিনশ আসনের মধ্যে মাহীদের দেয়া হয়েছে তিনটি আসন। পার্সেন্টেজের হিসাবে এক পার্সেন্ট। পঞ্চাশ পার্সেন্টের দাবিদার মাহী বি. চৌধুরী এক পার্সেন্টে কতোটা খুশি এবং ভারসাম্যের ফর্মুলা কতোটা সফল হয়েছেÑ এমনটা মানুষ জানতে চাইতেই পারে।

তিন. এরশাদকে নিয়ে গত নির্বাচনেও রহস্য ছিলো, এবারও আছে। জাতীয় পার্টিতে হঠাৎ করে মহাসচিব পরিবর্তন, বাতিল মহাসচিবকে আবার এরশাদের বিশেষ সহকারি নিয়োগ, এরশাদের হাসপাতাল বিষয়ক কেচ্ছা-কাহিনী, এসব নিয়ে এখন চলছে জোর আলোচনা। তবে এরশাদের হঠাৎ করেই পার্টি অফিসে গিয়ে, তাকে চিকিৎসা করতে দেয়া হচ্ছে না এবং তাকে দমিয়ে রাখা যাবে না, এমন কথায় মূল চিত্রের কিছুটা হলেও দর্শকদের দৃষ্টিগোচর হয়েছে। পুতুল নাচের অদৃশ্য সুতাটা ক্রমেই দৃশ্যমান হচ্ছে মানুষের কাছে। তবে এরশাদকে নিয়ে শেষ কথা বলার এখনো সময় আসেনি। এরশাদ মহাজোটের গলার মালা না কাঁটা, তা বোঝা যাবে আরো পরে।

চার. সিপিবির সাথে আওয়ামী লীগের গাটছড়ার ব্যাপারটি প্রচলিত কথা হিসেবে ছিলো। অনেকেরই ধারণা ছিলো মূলত সিপিবি আওয়ামী রাজনীতির একটি সম্পূরক চ্যাপ্টার। কিন্তু সেই ধারণায় হঠাৎই সংশয় সৃষ্টি হয়েছে। এবারের নির্বাচনকে সামনে রেখে অনেকটাই বিপরীতমুখি যাত্রা সিপিবির। ৮ ডিসেম্বর শনিবারে এক সংবাদ সম্মেলনে সিপিবি সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম অত্যন্ত দৃঢ়ভাবে সুষ্ঠু নির্বাচনের সম্ভাবনাকে নাকচ করেছেন। সাথে নির্বাচন কমিশনকে অভিযুক্ত করেছেন চরম পক্ষপাতিত্বের দায়ে।

সেলিম বলেছেন, ‘সিপিবি নির্বাচনকে আন্দোলনের অংশ হিসেবে নিয়েছে। সিপিবির এক পা নির্বাচনে, এক পা আন্দোলনে।’ একই কথা বলছে ঐক্যফ্রন্টও। অথচ ওবায়দুল কাদের যখন সিপিবি কার্যালয়ে গিয়েছিলেন, তখন অনেকে ভেবেছিলেন সিপিবি হয়তো তার পুরানো ট্র্যাকেই হাঁটবে। কিন্তু এখন পর্যন্ত সিপিবি হাঁটছে উল্টো ট্র্যাকেই। যারা রাজনীতি বোঝেন, তারা এ থেকে অনেক কিছুই উপলব্ধি করতে পারবেন। আসলে ছোটখাটো কিছু ঘটনা অনেক বড় কিছু বোঝার বিষয়ে ইশারা করে। আর কথাতো আছেই, ‘আক্কেলমান্দ কা লিয়ে ইশারা-হি ক্কাফি’।

লেখক : সাংবাদিক ও কলাম লেখক

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়