শিরোনাম
◈ এলডিসি উত্তরণের পর সর্বোচ্চ সুবিধা পাওয়ার প্রস্তুতি নিতে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ ◈ ড. ইউনূসকে নিয়ে শিক্ষামন্ত্রীর বক্তব্য দুঃখজনক: আইনজীবী  ◈ ত্রিশালে বাসের ধাক্কায় বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রসহ অটোরিকশার ৩ যাত্রী নিহত ◈ জলদস্যুদের হাতে জিম্মি জাহাজ মুক্ত করার বিষয়ে  সরকার অনেক দূর এগিয়েছে: পররাষ্ট্রমন্ত্রী  ◈ এসএসসি পরীক্ষায় আমূল পরিবর্তন, বদলে যেতে পারে পরীক্ষার নামও ◈ পঞ্চম দিনের মতো কর্মবিরতিতে ট্রেইনি ও ইন্টার্ন চিকিৎসকরা ◈ অর্থাভাবে পার্লামেন্ট নির্বাচনে লড়বেন না ভারতের অর্থমন্ত্রী ◈ কখন কাকে ধরে নিয়ে যায় কোনো নিশ্চয়তা নেই: ফখরুল ◈ জনপ্রিয়তায় ট্রাম্পের কাছাকাছি বাইডেন ◈ আদালত থেকে জঙ্গি ছিনতাই মামলার তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়ার নতুন তারিখ ৮ মে

প্রকাশিত : ১০ ডিসেম্বর, ২০১৮, ০৪:৪৪ সকাল
আপডেট : ১০ ডিসেম্বর, ২০১৮, ০৪:৪৪ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

এরা খুঁজে দেখেননি সমস্যার শিকড় কোথায়?

খোন্দকার আতাউল হক : আজকাল ইলেক্ট্রনিক, প্রিন্ট মিডিয়া দেশের বেশকিছু ব্যক্তির নামের আগে বিশেষ বিশেষণযুক্ত করে বুদ্ধির বিশেষজ্ঞ অর্থাৎ বুদ্ধিজীবী হিসেবে উপস্থাপন করা হচ্ছে। প্রশ্ন হচ্ছে বুদ্ধির বিশেষজ্ঞ বুদ্ধিজীবী হবার মাপকাঠি বা সূত্র কি? কি কি গুণাবলীর কারণে বুদ্ধিজীবী বিশেষণ শব্দটি ঐসব ব্যক্তির নামের আগে ব্যবহার করা হয়। যদিও রাষ্ট্র, রাজনীতি, শাসনব্যবস্থা আন্দোলন-সংগ্রাম এমনকি আমাদের স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধ এই সব বুদ্ধিজীবীদের কথায় পরিচালিত হয়নি।

বলতে পারেন কেউ, এই বিশেষ বলে বিশেষণযুক্ত করে টিভির পর্দায় সমাজে যাদের পরিচয় করিয়ে দেয়া হচ্ছে; তারা কি কোনো দিন, কখনো, কোনো সময় জাতির ক্লান্তিকালে বা দু:সময়ে কোনো জাতীয় সমস্যার সমাধান করতে পেরেছেন? অথবা সমাধানের জন্য কার্যকর ভুমিকা গ্রহণ করেছেন? গর্ববোধ হয় এমন কিছু নিদর্শন জাতির সামনে কি তারা উপস্থাপন বা উদাহরণ সৃষ্টি করতে পেরেছেন? এমন কি একটি কল্যাণকর আধুনিক রাষ্ট্রীয় কাঠামো ও শাসনব্যবস্থা প্রণয়নে কোনো তথ্য-প্রযুক্তি ভিত্তিক অবকাঠামো জাতির সামনে উত্থাপন করতে পেরেছেন? না পারেননি। ৪৭ বছরে আমাদের বিশেষণযুক্ত এই বুদ্ধিজীবীরা এমন কোনো উদাহরণ সৃষ্টি করে জাতিকে উদ্ধার ব্যর্থ হয়েছেন। যা কিছু হয়েছে রাজনৈতিক নেতৃত্বের মাধ্যমেই হয়েছে।

আমাদের এই বিশেষ বিশেষণযুক্ত বিশেষজ্ঞ বুদ্ধিজীবী এবং সুশীল কখনোই রাষ্ট্রের দুর্যোগ বা ক্লান্তিকাল-সে রাজনৈতিক বা সামাজিক বা অর্থনৈতিক হোক এর কোনোটির স্থায়ী সমাধান দিতে পারেননি। বরং এটাকে পুঁজি করে তারা ‘টকশো’ বাণিজ্য করছেন। তারা বিষয়টি নিয়ে বিতর্কের খোরাক সৃষ্টি করেছেন। তারা সবসময়ই কেউ সরকার পক্ষ, কেউ বিরোধী দলের পক্ষে যুক্তি তুলে বিষয়টিকে আরো বিতর্কিত করে তুলেছেন। কখনোই তারা সমাজ এবং শাসনব্যবস্থার অভ্যন্তরে গণতন্ত্রিক ব্যবস্থা, মানুষের অধিকার আদায়ের যুক্তিযুক্ত কথা জাতির সামনে তুলে ধরেননি। বুদ্ধিজীবীরা নির্লজ্জভাবে কোনো না কোনো রাজনৈতিক দলের মুখপত্র হয়ে যান। তারা কখনোই খুঁজে দেখেন না সমস্যার শিকড় কোথায়। পঁচনকৃত দ্রব্য ফেলে না দিলে যে দুর্গন্ধ ছড়ায় তা তারা কখনোই বলেন না। বরং ওটাকে নিয়ে তারা বুদ্ধিবৃত্তির চর্চা করেন। জনগণকে ভুল ম্যাসেজ দেন।

আমাদের এই বিশেষ বিশেষণযুক্ত বিশেষজ্ঞ বুদ্ধিজীবী এবং সুশীল সমাজ রাষ্ট্রের মূল সমস্যার শিকড় যদি খুঁজে দেখতেন, তবে অবশ্যই তারা বলতেন আমাদের মূল সমস্যাটা রাষ্ট্রীয় কাঠামো ও শাসনব্যবস্থা। সাংবিধানিকভাবে রাষ্ট্রের তিনটি অঙ্গে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ধারণ করতে হবে। প্রতিষ্ঠিত করতে হবে আধুনিক রাষ্ট্রকাঠামো, বিজ্ঞান ভিত্তিক আধুনিক রাষ্ট্রীয় শাসনব্যবস্থা এবং গণতন্ত্র।

বুদ্ধিজীবীরা কখনোই বলেন না, দেশকে মধ্যম আয়ে উন্নীত করতে হলে রাষ্ট্রের সংবেদনশীল প্রশাসনিক মৌলিক বিষয়গুলোকে যুগোপযোগী করতে হবে। ব্রিটিশ-পাকিস্তানের রেখে যাওয়া ঔপনিবেশিক অবকাঠামো এবং আইনের আমূল সংশোধন প্রয়োজন। ১৮৬১ সালের ব্রিটিশের আইন যেটা পাকিস্তান আমলে ‘পিপিসি’ এবং ‘১৯৭২ সালে বাংলাদেশ স্বাথীনতা উত্তর ‘বিপিসি’র আইনগুলো কমিশন দ্বারা সংশোধন করতে হবে। বাংলাদেশে প্রচলিত আইনের সংখ্যা প্রায় ১২০০শো। এর সবকটি ব্রিটিশ আমলে প্রণীত এবং পাকিস্তান আমলেও চালু ছিল। বুদ্ধিজীবীরা বলেন না এসব আইন সংস্কার ছাড়া দেশের অগ্রগতি ও রাজনৈতিক স্থিতিশীল এবং গণতন্ত্র বাস্তবায়ন সম্ভব নয়।

আমাদের এই বিশেষ বিশেষজ্ঞ, বুদ্ধিজীবী এবং সুশীল সমাজ একবারও বলেন না যে অধিক জনসংখ্যা অধ্যূষিত বাংলাদেশে এখন প্রয়োজন ক্ষমতা বিকেন্দ্রিকরণ। প্রয়োজন এককেন্দ্রীক শাসনব্যবস্থার পরিবর্তে ‘ফেডারেল’ পদ্ধতির কেন্দ্রীয় সরকারব্যবস্থা এবং ‘দুইকক্ষ’ বিশিষ্ট পার্লামেন্ট। প্রয়োজন ‘প্রদেশ এবং নির্বাচিত প্রাদেশিক সরকারব্যবস্থা’, ‘স্ব-শাসিত স্থানীয় সরকারব্যবস্থা’। প্রয়োজন গভীর ‘সমুদ্র বন্দর’, আধুনিক কৃষিব্যবস্থা, পৌরসভা ও উপজেলা ভিত্তিক শিল্পাঞ্চল এবং ‘উপ-আঞ্চলিক অর্থনৈতিক’ জোট গঠন।

উল্লেখিত বিষয়গুলো সাংবিধানিকভাবে প্রণীত এবং বাস্তবায়িত হলে রাষ্ট্রে যেমন রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ফিরে আসবে, তেমন অতি স্বল্প সময়ের মধ্যে বাংলাদেশ হবে বিশ্বে মধ্যম আয়ের একটি আধুনিক রাষ্ট্র। আমাদের এই বিশেষ বিশেষজ্ঞ, বুদ্ধিজীবী এবং সুশীল সমাজ এসব নিয়ে ভাবেন না। কারণ রাষ্ট্র যদি স্থিতিশীল হয় এবং অর্থনীতিতে যদি সমৃদ্ধশীল হয় তাহলে তাদের টক শোতে বুদ্ধিচর্চার স্থানটি বেকার থাকবে। সেই সাথে টি ভি চ্যানেলগুলোতে বিশেষ বিশেষজ্ঞ, বুদ্ধিজীবী এবং সুশীল সমাজের উৎপাদন কার্যত বন্ধ হয়ে যাবে।

আমাদের এই বিশেষ বিশেষণযুক্ত বিশেষজ্ঞ, বুদ্ধিজীবী এবং সুশীল সমাজ রাষ্ট্রের মূল চালিকা শক্তি কৃষক, শ্রম-কর্ম-পেশার মানুষ ও নারীর অর্থনৈতিক উন্নয়নের কথা ‘টকশো’তে কখনো বলেন না। অথচ রাষ্ট্র ও সমাজ গঠনে এদের অবদান সব চেয়ে বেশি। এরাই রাষ্ট্রের মূল চালিকা শাক্তি ও রাষ্ট্রীয় অর্থের মূল যোগানদাতা। রাষ্ট্রের জিডিপি বৃদ্ধির নায়ক। এরাই মহান স্বাধীনতা আন্দোলনে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছে, ভোট কেন্দ্রে গিয়ে পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিয়েছে। এরাই সীমিত জমিতে ফসল ফলিয়ে খাদ্য-সমগ্রীতে স্বয়ং সম্পূর্ণ করেছে, এদের শরীরের ঘামের বিনিময়ে গড়ে উঠেছে বিভিন্ন মাত্রার শিল্প-কলকারখানা এবং রেমিটেন্সে বৃদ্ধি পেয়েছে। অথচ এই দেশ গড়ার কারিগরদের কথা ‘টকশো’তে একবারও আলোচনা হয় না। আলোচনা হয় দেশের ‘খলনায়ক’ রাজনীতিবিদ,সম্মানহানী হবে বলে যে সব পদস্থ আমলা, বুদ্ধিজীবীরা ভোট কেন্দ্রে যেতে চান না তাদের জন্য।

এই তথাকথিত বিশেষ বিশেষণযুক্ত বিশেষজ্ঞ, বুদ্ধিজীবী এবং সুশীল সমাজের ব্যক্তিরা ‘টকশো এবং গোলটেবিল বৈঠকে অংশগ্রহণ করে পক্ষপাততুষ্ট হয়ে বিতর্কের অবতারণা করেছেন। সমস্যার সমাধান না করে দলীয় দৃষ্টিকোণ থেকে অনাকাঙ্খিত বক্তব্য দিয়ে জাতিকে বিভাজন এবং উস্কানিমূলক কর্মকান্ডে উৎসাহিত করেন। ফলে তাদের এই বিতর্ক জনমনে কখনো হতাশা, কখনো সন্ত্রাস, নাশকতা, প্রতিহিংসা সৃষ্টিতে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ উত্তেজনা সৃষ্টি করে। তাই বলে তাদের যে বুদ্ধি নেই বা তারা যে বুদ্ধিজীবী নন তা বলছি না। কারণ এটাও তো এক ধরনের বুদ্ধির খেয়ালী প্রতিফলন।

পরিশেষে বলতে চাই দেশবাসী দেখেছে ১৯৫২-র ভাষা আন্দোলন, ‘৬২-র কুখ্যাত হামিদুর রহমান শিক্ষা কমিশন আন্দোলন, ‘৬৬-র ৬ দফার আন্দোলন থেকে ‘৬৯ ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের ১১ দফা ভিত্তিক গণঅভ্যূত্থান আন্দোলন এবং ‘৭১-এর মহান মুক্তিযুদ্ধ, ‘৭৫-র বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান-এর সপরিবারে হত্যা, ‘৯০-র গণঅভ্যূত্থান, ‘৯৬ ও ২০০৭ এবং ২০১৪ সালের সহিংস-নষ্ট রাজনৈতিক পরিস্থিতি। বুদ্ধিজীবী, বিশেষজ্ঞ বা সুশীলসমাজ তখনো কি সুষ্ঠু, শান্তিপূর্ণ গ্রহণযোগ্য সমাধান কি দিতে পেরেছেন কী? হয়তো এক কথায় উত্তর হবে পারেননি।

এসব আন্দোলন, সংগ্রাম, লড়ায়ে সক্রিয় অংশগ্রহণ ও নেতৃত্ব দিয়েছেন কৃষক, ছাত্র, শ্রমিক এবং রাজনীতিবিদগণ। সমস্যার সমাধানও করেছেন রাজনীতিবিদগণ। তারাই আন্দোলনের সুফল ঘরে তুলে এনেছেন। এখানে বুদ্ধিজীবী, বিশেষজ্ঞ বা সুশীল সমাজের কোনোই কৃতিত্ব বা অবদান নেই। এরা শুধু তথাকথিত বুদ্ধিজীবী, বিশেষজ্ঞ বা সুশীল সমাজের ব্যক্তি হয়ে বেঁচে আছেন ও থাকতে চান।

[RTF bookmark start: }_GoBack[RTF bookmark end: }_GoBack

লেখক: মুক্তিযোদ্ধা, সাংবাদিক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক।

সম্পাদনা : ইকবাল খান

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়