শিরোনাম
◈ আওয়ামী লীগ সবচেয়ে বড় ভারতীয় পণ্য: গয়েশ্বর ◈ সন্ত্রাসীদের ওপর ভর করে দেশ চালাচ্ছে সরকার: রিজভী ◈ ইফতার পার্টিতে আওয়ামী লীগের চরিত্রহনন করছে বিএনপি: কাদের ◈ বাংলাদেশে কারাবন্দী পোশাক শ্রমিকদের মুক্তির আহ্বান যুক্তরাষ্ট্রের ফ্যাশন লবি’র ◈ দক্ষিণ আফ্রিকায় সেতু থেকে তীর্থ যাত্রীবাহী বাস খাদে, নিহত ৪৫ ◈ ২২ এপ্রিল ঢাকায় আসছেন কাতারের আমির, ১০ চুক্তির সম্ভাবনা ◈ ইর্ন্টান চিকিৎসকদের দাবি নিয়ে প্রধানমন্ত্রী’র সঙ্গে কথা বলেছি: স্বাস্থ্যমন্ত্রী ◈ উন্নয়ন সহযোগীদের একক প্ল্যাটফর্মে আসা প্রয়োজন: পরিবেশমন্ত্রী ◈ ড. ইউনূসের পুরস্কার নিয়ে ভুলভ্রান্তি হতে পারে: আইনজীবী  ◈ ত্রিশালে বাসের ধাক্কায় বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রসহ অটোরিকশার ৩ যাত্রী নিহত

প্রকাশিত : ০৯ ডিসেম্বর, ২০১৮, ০৫:০৩ সকাল
আপডেট : ০৯ ডিসেম্বর, ২০১৮, ০৫:০৩ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

রাজনীতির মাঠ বনাম কোরবানির হাট

অ্যাডভোকেট তৈমূর আলম খন্দকার

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন আগামী ৩০ ডিসেম্বর। এখনো পর্যন্ত এমনটিই নির্ধারিত। নির্বাচনে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ডের কথা উঠছে, কিন্তু প্রার্থী মনোনয়নের ক্ষেত্রে উঠছে আরও অনেক অনেক কথা, যা শুনলে রাজনীতির প্রতি শ্রদ্ধার ক্ষেত্রে টানাপড়েন শুরু হয়। বাণিজ্য অর্থাৎ রিমা- বাণিজ্য, কমিটি বাণিজ্য, গণগ্রেফতার বাণিজ্য, টেন্ডার বাণিজ্যের চেয়ে নমিনেশন বাণিজ্যের কথা রসালোভাবেই গ্রামগঞ্জে হাঁট-বাজারে আলোচিত হয়, যা নিয়ে কথা বলা আমার আজকের লেখার উদ্দেশ্য নয়। বরং এ নিয়ে কথা বলতে উৎসাহ বোধ করি না, কারণ এ সব বিষয় শুনতে শুনতে গা সওয়া হয়ে গেছে। যারা রাজনীতিতে গুণগতমান উন্নয়নের কথা বলেন তারাও এ সব বাণিজ্যের অংশীদার অথবা নির্বোধ-নির্বাক হয়ে পড়েছেন, যা জ্ঞান পাপীর ভূমিকার সমতুল্য।

নির্বাচন কমিশনের ৭শ কোটি টাকা ব্যয়ের এ জাতীয় নির্বাচন ছাড়াও দেশের ভাগ্য নির্ধারণ, সরকার গঠন, দেশবাসীকে নিরাপত্তাসহ লালন পালন, আন্তর্জাতিক পরিম-লে রাষ্ট্রের অবস্থান সঠিক রাখাসহ সার্বিক বিষয় বিবেচনায় জাতীয় সংসদ নির্বাচন একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় যা হেলাফেলা হিসেবে দেখলে হবে না। পূর্বাপর ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায় যে, রাজনীতির মাঠে বিচরণ করা মানুষগুলোই রাজনৈতিক নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতো। কারণ তারা জনগণের দাবি-দাওয়া নিয়েই মাঠে থাকে, বৃষ্টিতে ভিজে, রৌদ্রে শুকায় এবং তাদেরকেই নির্বাচন নামক ভোটের মাঠে লড়াই করতে দেখা যেতো। কিন্তু সম্প্রতিকালে বাস্তব দৃশ্য হচ্ছে ভিন্নতর। সরকারি দলে মধু বেশি, অন্যদিকে পুলিশি নির্যাতন নেই, মামলা হামলার তো প্রশ্নই আসে না। ফলে হালুয়া-রুটির ভাগ বাটোয়ারার জন্য সরকারি দলে নমিনেশন বিক্রির হিড়িক পড়েছে। কিন্তু বিরোধী দলেও নমিনেশন ফর্ম কম বিক্রি হয়নি। এর কারণ শেখ হাসিনা সরকারের দুঃশাসনে ভুক্তভোগী নির্যাতিত-নিপীড়িত মানুষের ঢল নেমেছে নমিনেশন ক্রয়ের জন্য, এ বিষয়টি সাধারণ মানুষ একটি উৎসব বলেই মনে করছিলো। কিন্তু উচ্চ পর্যায়ে হেভিওয়েট প্রার্থীরা এমপি হওয়ার জন্য নির্বাচনী মাঠকে যে ভাবে কোরবানির হাটে পরিণত করেছে তা নিতান্তই রঙ্গমঞ্চের তামাশার মতোই মনে হচ্ছে যেমনটি সার্কাসের ‘সং’ নামক নটরাজদেরও হার মানায়। ১/১১ সরকারের একজন খল নায়ক লে. জে. (অব.) মাসুদউদ্দিন বলেছেন যে, ‘শেখ হাসিনা ক্ষমতায় না আসলে পিঠের চামড়া থাকবে না’। অথচ তিনি দাঁড়িয়েছেন লাঙ্গল মার্কায়। এ সম্পর্কে তিনি বলেছেন যে, যা করছি শেখ হাসিনার নির্দেশেই করছি। জাতীয় নির্বাচন আসলে ওপর তালার নটরাজদের রাজনৈতিক চরিত্র কতোপ্রকার ও কি কি তা সহজেই অনুমান করা যায়। তাদের এ চরিত্রকে কোরবানির গরুর হাটের সাথে তুলনা করে একজন রাজনৈতিক কর্মী হিসেবে নিজেকে ছোট করতে না চাইলেও এর চেয়ে ভালো উপমা দেয়া উপযুক্ত বলে মনে হচ্ছে না।

জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নমিনেশন পাওয়া দলের কর্মীর ন্যায্য অধিকার, দলের দায়িত্ব কর্মীকে নেতায় পরিণত করা ও কর্মীর পেছনে জনভিত্তি দাঁড় করানোর দায়িত্ব দলের। কিন্তু রাজনৈতিক দল সে কাজটি না করে দলীয় নেতৃত্ব পকেট ভারী করার খবর বিভিন্নভাবে চাউর হচ্ছে। নমিনেশন একটি স্বীকৃতি। এই স্বীকৃতি কাদের পাওয়া উচিত?

রাজনীতির মাঠটি দিনে দিনে যেন কোরবানির গরুর হাটে পরিণত হয়েছে। নিয়ম-নীতি ও আদর্শের এখানে কোনো বালাই নেই। গরুর হাট সব সময় জমে না, কোরবানির ঈদের সময় যতোটা জমে। কাক্সিক্ষত মূল্যে গাবতলীর হাটে বিক্রি না হলে মিরপুরের হাটে তো হবেই, ফলে পাইকার বা দালালদের আশার অন্ত থাকে না। নিজে যে আদর্শকে বিশ্বাস করে তা বাস্তবায়নের জন্য মানুষ রাজনীতি করে। নীতিবান মানুষের জন্য আদর্শিক রাজনীতি লুটেরাদের জন্য যা ভিন্ন কথা। অর্থনীতিতে চাহিদা ও সরবরাহ বলে একটি সংজ্ঞা রয়েছে। সে সংজ্ঞাতে বলা হয়েছে যে- খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, চিকিৎসা, শিক্ষা প্রভৃতি মৌলিক চাহিদা যখন একজন ব্যক্তির পূরণ হয়ে যায় তখন সে নাম/সুনাম ক্রয় করার চেষ্টা করে। অনুরূপ পার্লামেন্ট কি এবং পার্লামেন্টে কথা বলার যোগ্যতা আছে কি নেই তা বিবেচনা না করে যার টাকা আছে সেই কোরবানির হাটের মতো বিভিন্ন হাটে একটি টিকেটের জন্য ঘুরপাক খেতে থাকে। দলগুলোও তাদের লুফে নেয় যাদের টাকা আছে এবং এ অবস্থায় টাকা বৈধ না অবৈধ তা পর্যালোচনার প্রয়োজন মনে করে না, যদিও নেতারা মুখে মুখে আদর্শ ও নীতি বাক্য আওড়াতে কম যায় না।

লেখক : আইনজীবী ও রাজনীতিবিদ

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়