শিরোনাম
◈ চলচ্চিত্র ও টিভি খাতে ভারতের সঙ্গে অভিজ্ঞতা বিনিময় হবে: তথ্য প্রতিমন্ত্রী ◈ উপজেলা নির্বাচনে প্রভাব বিস্তার করলেই ব্যবস্থা: ইসি আলমগীর  ◈ নির্বাচনের মাঝেই ভারতের পররাষ্ট্র সচিব শনিবার ঢাকা আসছেন ◈ বিএনপি নেতাকর্মীদের জামিন না দেওয়াকে কর্মসূচিতে পরিণত করেছে সরকার: মির্জা ফখরুল ◈ ব্রিটিশ হাইকমিশনারের সঙ্গে বিএনপি নেতাদের বৈঠক ◈ মিয়ানমার সেনার ওপর নিষেধাজ্ঞা থাকায় তাদের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করা সম্ভব হচ্ছে না: সেনা প্রধান ◈ উপজেলা নির্বাচন: মন্ত্রী-এমপিদের আত্মীয়দের সরে দাঁড়ানোর নির্দেশ আওয়ামী লীগের ◈ বোতলজাত সয়াবিনের দাম লিটারে ৪ টাকা বাড়লো ◈ মুজিবনগর সরকারের ৪০০ টাকা মাসিক বেতনের কর্মচারি ছিলেন জিয়াউর রহমান: পররাষ্ট্রমন্ত্রী ◈ রেকর্ড বন্যায় প্লাবিত দুবাই, ওমানে ১৮ জনের প্রাণহানি

প্রকাশিত : ০৯ ডিসেম্বর, ২০১৮, ০৩:৩৪ রাত
আপডেট : ০৯ ডিসেম্বর, ২০১৮, ০৩:৩৪ রাত

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

প্রার্থীদের অঙ্গীকার হোক শীতবস্ত্র!

চিররঞ্জন সরকার : আসি আসি করে শেষ পর্যন্ত আরেকটা শীতকাল বুঝি চলেই এলো। গ্রামেগঞ্জে শীতের অস্তিত্ব কয়েক সপ্তাহ ধরেই টের পাওয়া যাচ্ছিলো। কিন্তু রাজধানীতে আসতে একটু দেরি হলো। বাংলায় শীত হাতে-গোনা কদিনের। বাকি সারা বছরই ঘেমে-নেয়ে কাবু থাকতে হয়। বাঙালি মধ্যবিত্তের এই ক’দিন যেটুক সুখ ভোগ। ভোরের কুয়াশা, হিমেল বাতাস, গরম চাদর, রঙিন সোয়েটার, হাল-ফ্যাশনের জ্যাকেট, শীতের পিঠা। সেই সঙ্গে সার্কাস, পিকনিক, জঙ্গলে আর নদীর বুকে ভ্রমণ। শীতকাল এখন শহুরে নাগরিকদের জন্য ভ্রমণেরও কাল। একালের শিশুরা সারা বছর লেখাপড়ার চাপে থাকে। এই ডিসেম্বরেই তাদের কয়েকদিনের ছুটি।

পরীক্ষা শেষে ঘুরে বেড়াবার আয়োজন তাই শীতকালেই করতে হয়। ইতোমধ্যে অনেকে ভ্রমণ শুরু করে দিয়েছেন। দাদাবাড়ি, নানাবাড়ির পাশাপাশি পরিবারের সদস্যরা মিলে কুয়াকাটা, কক্সবাজার, রাঙামাটি, বান্দরবান, খাগড়াছড়ি কিংবা সিলেট, শ্রীমঙ্গলের উদ্দেশ্যে বাস বা ট্রেনে চড়ে বসার ব্যাপক আয়োজন চলছে। বাংলার সবচেয়ে বর্ণাঢ্য ঋতু বর্ষা; কিন্তু সবচেয়ে রূপসী ঋতু শীত। এর মতো এমন স্মৃতিকাতরতা আর কোনো ঋতুর নেই। স্বচ্ছ, সুন্দর নীলাকাশ, ঠাণ্ডা ঝিরঝিরে হাওয়া, সোনাঝরা মিষ্টি রোদ নিয়ে শীত আমাদের জীবনকে আনন্দময় করে তুলে। গ্রামবংলায় শীতের প্রকৃতির রূপই আলাদা। বাগানে ফোটে রংবাহারি মৌসুমী ফুল। ফলের দোকানে কমলালেবুর পাহাড়। সবজিবাজারে ফুলকপি, পালং, মটরশুঁটি, বেগুন। এ সময় নদীগুলো শীর্ণ ধারায় বইতে থাকে। আর দুই ধারে বেদনার মতো বালুচরগুলো চিকচিক করে। বকেরা ওড়াউড়ি করে, বিস্তীর্ণ জলাভূমির ধারে অতিথি পাখিরা ঘর বাঁধে। শীতে গ্রামের সর্বত্রই মধুবৃক্ষ খেজুর গাছ কাটার ধুম পড়ে যায়। মধুবৃক্ষ থেকে গাছিরা সংগ্রহ করে সুমিষ্ট খেজুর রস, তৈরি হয় লোভনীয় গুড় ও পাটালী। রস জ্বালিয়ে ভিজানো পিঠা পায়েস খাওয়ার ধুম পড়ে প্রতিটি পরিবারে।

শীত মানেই বনভোজন, বিয়েশাদি ভ্রমণ আর পিঠাপুলির উৎসব। কিংবা শীত মানে স্রেফ পথের ধারে দাঁড়িয়ে ধোঁয়া ওঠা এক কাপ আগুন গরম চা ধীরে ধীরে উপভোগ। শীত মানেই আনন্দ, ফুর্তি আর অলিখিত উৎসব। আমাদের সামর্থ্যে যতো সীমিতই হোক না কেন, এর মধ্যেও আমরা শীতকালকে উপভোগ করি। শীতের সকালে আয়েশ করে রোদ বা আগুন পোহানো, সুস্বাদু পিঠা খাওয়া, খেজুরের রস, পুকুরে মাছ ধরা কিংবা কুয়াশা মাখা সবুজ প্রান্তরে ঘুরে বেড়ানোর মজাগুলো ফিরে আসে। গরিবদের জন্য শীতকালটা বেশ কষ্টের। শহর বা গ্রামের নিঃস্ব মানুষ যারা তাদের শীতের কাপড় থাকে না। এই শীতে শিশু আর বৃদ্ধরা কষ্ট পায় সবচেয়ে বেশি। আমাদের সমাজে একদল মানুষ আছেন যারা বিলাসী জীবন যাপন করেন। প্রতি মাসে লাখ লাখ টাকা ব্যয় করেন নিজেদের নিজেদের ভোগ-বিলাসে। অথচ সমাজের আরেক দল মানুষ যারা শীতের নির্মম কষ্টে দিন কাটান। আমি-আপনি আমরা কী পারি না এই নিঃস্ব-নিরন্ন মানুষগুলোর কথা ভেবে একটু এগিয়ে আসতে? তাদের জন্য একটু শীতবস্ত্রের ব্যবস্থা করতে?

আমাদের দেশে এবার শীত এসেছে নির্বাচনকে সঙ্গী করে। পুরো দেশ জুড়ে শুরু হয়েছে নির্বাচনী উৎসব। এই নির্বাচনে কাড়ি কাড়ি টাকা ব্যয় হবে। ভোট বেচা-কেনা, শোভাযাত্রা, পোস্টার-ফেস্টুন, বেশুমার চা-নাস্তা ইত্যাদি যে সব বাহুল্য ব্যয়ের খাত আছে, সেখানে কিছুটা লাগাম টেনে আমাদের প্রার্থীরা কি পারেন না শীাতার্ত মানুষের জন্য কিছু ব্যয় করতে? নিজি নিজ এলাকায় একটি ব্যক্তিও যেন শীতের কষ্ট না পায়-সেই অঙ্গীকার করতে? আসুন, এবারের নির্বাচনে আমরা শপথ করি, শীতে আমরা একটি মানুষকেও কষ্ট পেতে দেবো না। আমাদের জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রার্থীরা প্রত্যেকেই যেন ওয়াদা করেন, নিঃস্ব-অতিদরিদ্র মানুষগুলোর জন্য শীতবস্ত্র সরবরাহের। দুনিয়া বারবার দেখেছে, এবার প্রকৃতিও দেখুক বাঙালিকে দমিয়ে রাখা যায় না!

লেখক : কলামিস্ট

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়