শিরোনাম
◈ ইরানে ইসরায়েলের হামলার খবরে বিশ্বজুড়ে উত্তেজনা, তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের আতঙ্ক ◈ বিমানবন্দরের থার্ড টার্মিনালের বাউন্ডারি ভেঙে বাস ঢু‌কে প্রকৌশলী নিহত ◈ জাতীয় পতাকার নকশাকার শিব নারায়ণ দাস মারা গেছেন ◈ ইরানের ইস্পাহান ও তাব্রিজে ইসরায়েলের ড্রোন হামলা, ৩টি ভূপাতিত (ভিডিও) ◈ ভেটোর তীব্র নিন্দা,মার্কিন নীতি আন্তর্জাতিক আইনের নির্লজ্জ লংঘন : ফিলিস্তিন ◈ স্কুল পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের গল্প-প্রবন্ধ নিয়ে সাময়িকী প্রকাশনা করবে বাংলা একাডেমি ◈ দক্ষিণ ভারতে ইন্ডিয়া জোটের কাছে গো-হারা হারবে বিজেপি: রেভান্ত রেড্ডি ◈ ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিনয় মোহন কোয়াত্রার ঢাকা সফর স্থগিত ◈ চিকিৎসকদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে সংসদে আইন পাশ করব: স্বাস্থ্যমন্ত্রী ◈ ব্রিটিশ হাইকমিশনারের সঙ্গে বিএনপি নেতাদের বৈঠক

প্রকাশিত : ০৯ ডিসেম্বর, ২০১৮, ১২:০৮ দুপুর
আপডেট : ০৯ ডিসেম্বর, ২০১৮, ১২:০৮ দুপুর

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

আয় কমছে : বাড়ছে ঋণ নির্ভরশীলতা

নয়া দিগন্ত : কাক্সিক্ষত হারে রাজস্ব আদায় হচ্ছে না। কাক্সিক্ষত হারে বাড়ছে না বৈদেশিক অনুদানও। কিন্তু এর পরেও শেষ মুহূর্তে সরকার একের পর এক প্রকল্প অনুমোদন করেছে। ফলে বাজেট অর্থায়নে ঋণ নির্ভলশীলতা বেড়ে যাচ্ছে। বাজেট ঘাটতি অর্থায়নে তিন মাসে সরকারের অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে ঋণ গ্রহণ বেড়েছে প্রায় সাড়ে চার হাজার কোটি টাকা, যা ৪৬ শতাংশ। এ পরিস্থিতিতে নগদ টাকার সঙ্কটে থাকা ব্যাংকগুলো পড়েছে মহাবিপাকে। ব্যাংকাররা জানিয়েছেন, এমনিতেই নগদ টাকার সঙ্কট, এর ওপর সরকারের ঋণগ্রহণের হার বেড়ে যাওয়ায় বেসরকারি বিনিয়োগ আরও সঙ্কুচিত হয়ে যাচ্ছে। এর সরাসরি প্রভাব পড়ছে কর্মসংস্থানের ওপর।
বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, চলতি অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে (জুলাই-সেপ্টম্বর) সরকার ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে নিট ঋণ নিয়েছে ৫০১ কোটি ৪০ লাখ টাকা। যেখানে আগের বছরের একই সময়ে ব্যাংক থেকে ঋণ না নিয়ে পরিশোধ করা হয়েছিল তিন হাজার ৭৭৩ কোটি টাকা। এ হিসেবে এ সময়ে সরকার ব্যাংকব্যবস্থা থেকে প্রকৃত ঋণ নিয়েছে প্রায় সাড়ে চার হাজার কোটি টাকা। আর বাজেট ঘাটতি অর্থায়নে ব্যাংক বহির্ভূত খাত থেকে ঋণ নিয়েছে ১৩ হাজার ৬৫৩ কোটি টাকা, যার মধ্যে সঞ্চয়পত্র থেকেই ঋণ নেয়া হয়েছে ১৩ হাজার ৪১২ কোটি টাকা। ফলে তিন মাসে বাজেট ঘাটতি অর্থায়নে সরকার অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে ঋণ নিয়েছে ১৪ হাজার ১৫৫ কোটি টাকা, যেখানে আগের বছরের একই সময়ে ছিল ৯ হাজার ৭৩০ কোটি টাকা। এ হিসেবে বাজেট ঘাটতি অর্থায়নে তিন মাসে সরকারের অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে ঋণ গ্রহণ বেড়েছে প্রায় সাড়ে চার হাজার কোটি টাকা, যা ৪৬ শতাংশ।

বাজেট ঘাটতি অর্থায়নে ঋণ নির্ভরশীলতা বেড়ে যাওয়ার কারণ হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, নির্বাচন সামনে রেখে সরকারের ব্যয় অস্বাভাবিক হারে বাড়লেও কাক্সিক্ষত হারে আয় বাড়ছে না। কাক্সিক্ষত হারে অবমুক্ত হচ্ছে না বিদেশী ঋণও। যেমন, চলতি অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে রাজস্ব আদায়ের প্রবৃদ্ধি হয়েছে মাত্র ৫ শতাংশ, যেখানে আগের বছরের একই সময়ে এ প্রবৃদ্ধি ছিল প্রায় ২৩ শতাংশ। আর আলোচ্য সময়ে বৈদেশিক ঋণ অবমুক্ত হয়েছে চার হাজার ৯০৫ কোটি টাকা, যেখানে আগের বছরের একই সময়ে ছিল চার হাজার ৯০৫ কোটি টাকা। আলোচ্য সময়ে বৈদেশিক ঋণ কম এসেছে ১৬০ কোটি টাকা।

কাক্সিক্ষত হারে রাজস্ব আদায় না হওয়ায় ও বৈদেশিক ঋণ অবমুক্ত না হলেও সরকারের ব্যয় থেমে নেই, বরং নির্বাচন সামনে রেখে ব্যয় অস্বাভাবিক হারে বেড়ে গেছে। এ জন্য ঋণ নির্ভরশীলতা বেড়ে যাওয়ায় বেড়ে গেছে ঋণ পরিচর্যা ব্যয়।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, শঙ্কার বিষয় হলো সরকারের ঋণ নেয়ার ভুলনীতির কারণে জাতির ঘাড়ে দেনার পরিমাণ বেড়ে যাচ্ছে। পদ্মা সেতুর মতো বড় প্রকল্পের অর্থ ব্যাংক ঋণ থেকে নেয়া হচ্ছে। বিশ্বব্যাংকসহ দাতাসংস্থার কাছ থেকে ঋণ নিলে দীর্ঘসময়ের গ্রেস পিরিয়ড পাওয়া যায়, সেই সাথে সুদ হার থাকে ১ শতাংশেরও কম। বলা চলে শূন্য দশমিক ৫ শতাংশের নিচে ঋণ পাওয়া যায়। দাতাসংস্থাগুলোর সাথে দূরত্ব সৃষ্টি হওয়ায় এসব প্রকল্পের ব্যয় মেটানো হচ্ছে নিজস্ব অর্থায়নে। সবচেয়ে শঙ্কার বিষয় হলো, এসব ঋণের বড় একটি অংশ মেটানো হচ্ছে সঞ্চয়পত্র থেকে ঋণ নিয়ে। সঞ্চয়পত্রে সুদহার যেখানে সাড়ে ১১ শতাংশ, সেখানে ব্যাংক থেকে ঋণ নিলে সুদ পরিশোধ করতে হয় ক্ষেত্রবিশেষ ৬ শতাংশের নিচে। তিন মাসে বাজেট ঘাটতি অর্থায়নে অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে ঋণ নেয়া হয়েছে ১৪ হাজার ১৫৫ কোটি টাকা। এর মধ্যে সঞ্চয়পত্র থেকেই নেয়া হয়েছে ১৩ হাজার ৪১২ কোটি টাকা। অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে বিশেষ করে সঞ্চয়পত্র থেকে অধিক হারে ঋণ নেয়ায় সরকারের সামগ্রিক সুদ ব্যয় বেড়ে যাচ্ছে।

বলা চলে জাতীয় বাজেটের বড় একটি অংশ চলে যাচ্ছে সরকারের সুদ পরিশোধে। যেমন, চলতি অর্থবছরের জন্য বাজেটের প্রায় বেশির ভাগ অর্থাৎ ৫১ হাজার ৩৪০ কোটি টাকাই বরাদ্দ রাখা হয়েছে সুদ পরিশোধের জন্য। যা কি না অনুন্নয়ন বাজেটের একক খাত হিসেবে সর্বোচ্চ ১৮ শতাংশ। আর সামগ্রিক বাজেটের ১১ দশমিক ১ শতাংশ। গত অর্থবছরেও সুদ ব্যয় পরিশোধ করা হয়েছে ৪০ হাজার কোটি টাকা।

বিশ্লেষকরা জানিয়েছেন, সরকারের ভুল নীতির কারণে এ সুদ ব্যয় বেড়ে যাচ্ছে। উচ্চ সুদে ঋণ নিয়ে ঘাটতি মেটানো হচ্ছে। অথচ নীতি পরিবর্তন করলে অপেক্ষাকৃত কম সুদে ঘাটতি বাজেটের অর্থায়ন করা যেতো। এটা অব্যাহত থাকলে সামনে সরকারি কর্মচারীদের বেতনভাতা ও সুদ পরিশোধেই বাজেটের সমুদয় অর্থ ব্যয় করতে হবে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, বাংলাদেশ ব্যাংকের সরকারি হিসাবে গত অর্থবছরের সেপ্টেম্বরে উদ্বৃত্ত ছিল ১০ হাজার কোটি টাকার বেশি। যে কারণে সরকার ওই সময়ে কোনো ঋণ না নিয়ে বরং আগের ঋণ পরিশোধ করেছে। চলতি অর্থছরের একই সময়ে সরকারের হিসাবে অতিরিক্ত অর্থের কোনো সংস্থান নেই। বরং ঘাটতি রয়েছে। এই ঘাটতি পূরণ করা হচ্ছে ঋণের মাধ্যমে।
সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে সরকারের ঋণগ্রহণ বেড়ে যাওয়ায় মূল্যস্ফীতির চাপ বেড়ে যাবে। এতে জনভোগান্তি বাড়বে। পাশাপাশি নানামুখী চাপে পড়বে অর্থনীতি। অপর দিকে ঋণ আদায় কমে যাওয়ায় ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণ বেড়ে গেছে। ফলে ব্যাংকের বিনিয়োগ সক্ষমতা কমে যাচ্ছে। এ পরিস্থিতিতে সরকারের ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে ঋণগ্রহণ বেড়ে গেলে বেসরকারি খাতের বিনিয়োগ আরো কমে যাবে, যা কর্মসংস্থানে বাধা সৃষ্টিসহ জাতীয় অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়