শিরোনাম
◈ ইফতার পার্টিতে আওয়ামী লীগের চরিত্রহনন করছে বিএনপি: কাদের ◈ বাংলাদেশে কারাবন্দী পোশাক শ্রমিকদের মুক্তির আহ্বান যুক্তরাষ্ট্রের ফ্যাশন লবি’র ◈ দক্ষিণ আফ্রিকায় সেতু থেকে তীর্থ যাত্রীবাহী বাস খাদে, নিহত ৪৫ ◈ ভারত থেকে ১৬৫০ টন পেঁয়াজ আসছে আজ! ◈ ২২ এপ্রিল ঢাকায় আসছেন কাতারের আমির, ১০ চুক্তির সম্ভাবনা ◈ ইর্ন্টান চিকিৎসকদের দাবি নিয়ে প্রধানমন্ত্রী’র সঙ্গে কথা বলেছি: স্বাস্থ্যমন্ত্রী ◈ উন্নয়ন সহযোগীদের একক প্ল্যাটফর্মে আসা প্রয়োজন: পরিবেশমন্ত্রী ◈ ড. ইউনূসের পুরস্কার নিয়ে ভুলভ্রান্তি হতে পারে: আইনজীবী  ◈ ত্রিশালে বাসের ধাক্কায় বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রসহ অটোরিকশার ৩ যাত্রী নিহত ◈ এসএসসি পরীক্ষায় আমূল পরিবর্তন, বদলে যেতে পারে পরীক্ষার নামও

প্রকাশিত : ০৯ ডিসেম্বর, ২০১৮, ১২:০২ দুপুর
আপডেট : ০৯ ডিসেম্বর, ২০১৮, ১২:০২ দুপুর

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

অস্বাভাবিক অর্থপ্রবাহ বাড়বে ভোট ঘিরে

আলোকিত বাংলাদেশ : প্রায় সব বড় দলের অংশগ্রহণে ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। এ নির্বাচন সরকার ও বিরোধী পক্ষের জন্য সমান গুরুত্বপূর্ণ। এতে বড় দুই দলই চাইবে যে কোনোভাবে জয়লাভ করতে। আর তাই নির্বাচনে অস্বাভাবিকভাবে অর্থপ্রবাহ বাড়তে পারে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

বিশ্লেষকরা বলছেন, দশম সংসদ নির্বাচন বিরোধী দল বর্জনের কারণে ভোটের অর্থনীতিতে মন্দাভাব সৃষ্টি হয়েছিল। একাদশ সংসদ নির্বাচন যত এগিয়ে আসছে ততই বড় হচ্ছে ভোটের অর্থনীতি। এবার অন্তত শতাধিক ব্যবসায়ী নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন, প্রতিদ্বন্দ্বিতাও বেড়েছে, এক আসনে একাধিক প্রার্থী রয়েছেন, ফলে আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে অনেক বেশি অর্থ ব্যয় হবে। এ ব্যয় প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে। গ্রামীণ অর্থনীতিতেও সাময়িক তেজিভাব থাকবে। তবে তা সার্বিক অর্থনীতিতে বড় ধরনের কোনো প্রভাব ফেলবে না। মূল্যস্ফীতির ওপর সাময়িক চাপ ফেলতে পারে, তাও খুব বেশি হবে না।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, সর্বনি¤œ হিসাব ধরলে, এ বছর মোট প্রার্থী প্রায় ২ হাজার ৪০০ জন। প্রত্যেকে ন্যূনতম ২৫ লাখ খরচ করলেও এর পরিমাণ দাঁড়ায় ৬০০ কোটি টাকা। ১০ কোটি ৪১ লাখ ভোটার, ভোটারপ্রতি সর্বোচ্চ ব্যয় ১০ টাকা এবং প্রতি আসনে ৮ জন করে প্রার্থী ধরলেও মোট নির্বাচনি ব্যয় দাঁড়ায় ৮০০ থেকে ৯০০ কোটি টাকা। কিন্তু বাস্তবতা বিবেচনায় এ টাকার কয়েকগুণ বেশি অর্থ খরচ করেন প্রার্থীরা। বাড়তি ব্যয়ের বিষয়টি অনেকটাই ‘ওপেন সিক্রেট’।

তারা বলছেন, নির্বাচনের অন্যতম প্রধান শর্ত কর্মী লালন। প্রতিটি আসনে একজন প্রার্থীর পুরো নির্বাচনি এলাকায় কমপক্ষে ৫০০ কর্মী থাকবে। দিনে প্রত্যেকের পেছনে ১ হাজার টাকা করে হলেও প্রতিদিন প্রার্থীকে খরচ করতে হবে ৫ লাখ টাকা। আর নির্বাচনের পুরো মাসজুড়েই কর্মীরা কাজ করছেন। এ হিসাবে শুধু কর্মীর পেছনেই খরচ হতে পারে কমপক্ষে দেড় কোটি টাকা। তাছাড়া ব্যানার, পোস্টার, মাইকিং, জনসভা ইত্যাদি তো রয়েছে। তবে সব প্রার্থী সমান খরচ করবে না। আবার আসনের আকার ভেদেও কম-বেশি হবে ব্যয়। এ হিসাবে একেকজন প্রার্থীর ব্যয় ১ থেকে ১০ কোটি টাকাও ছাড়িয়ে যাবে। তবে গড়ে ৩ কোটি টাকা খরচ হলেও আসছে নির্বাচনে ২ হাজার ৪০০ প্রার্থীর খরচ হবে প্রায় ৭ হাজার কোটি টাকার বেশি।

এবার সারা দেশের ৩০০ আসনে মোট ভোটার ১০ কোটি ৪১ লাখ ৯০ হাজার ৪৮০ জন। সেই হিসাবে আসনপ্রতি গড় ভোটার দাঁড়ায় ৩ লাখ ৪৭ হাজার ৩০১ জন। আইনগতভাবে নির্বাচনে একজন প্রার্থী ভোটার প্রতি খরচ করতে পারবেন ১০ টাকা, সর্বোচ্চ ব্যয় করতে পারবেন সর্বোচ্চ ২৫ লাখ টাকা। যেমনÑ এবার ঝালকাঠী-১ আসনে সবচেয়ে কম ভোটার ১ লাখ ৭৮ হাজার ৭৮৫ জন। এ আসনে প্রার্থীরা ভোটারপ্রতি ব্যয় করতে পারবেন প্রায় ১৪ টাকা। অপরদিকে সবচেয়ে বেশি ভোটারের আসন ঢাকা-১৯ এ, ভোটার সংখ্যা ৭ লাখ ৪৭ হাজার ৩০১ জন; যা ঝালকাঠী-১ এর চারগুণের বেশি। এলাকায় প্রার্থী ব্যয় করতে পারবেন প্রার্থীপ্রতি মাত্র ৩ টাকা। এ টাকায় নির্বাচন সম্ভব নয় বলেই মনে করেন বিশ্লেষকরা। এর আগে ২০১৫ সালে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের টিআইবি) এক গবেষণা প্রতিবেদনে দাবি করা হয়, সিটি নির্বাচনে প্রার্থীরা বেঁধে দেওয়া নির্বাচনি ব্যয়ের সর্বোচ্চ ২১ গুণ বেশি ব্যয় করেছিলেন। ‘ঢাকা উত্তর, ঢাকা দক্ষিণ ও চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচন ২০১৫ : প্রক্রিয়া পর্যবেক্ষণ’ শীর্ষক ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের জন্য নির্ধারিত ৩০ লাখ টাকার বিপরীতে তিনজন মেয়র প্রার্থীর একজন সর্বোচ্চ ৬ কোটি ৪৭ লাখ টাকা পর্যন্ত ব্যয় করেছেন।

টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, নির্বাচনে অর্থ ও পেশির ব্যবহার রাজনৈতিক সংস্কৃতির অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এতে যে জিনিসটি বেশি উদ্বেগের তা হলো অর্থবিত্তের মালিক তারা রাজনীতির অঙ্গনটাকে দখল করে রেখেছে। নির্বাচনের আইনের মাধ্যমে নির্বাচন কমিশন যে সীমা দিয়েছে তা আইনগতভাবে ইতিবাচক পদক্ষেপ। তবে নির্বাচনের প্রচারণায় প্রার্থীরা যে ব্যয় করে, সেই হিসাব নির্বাচন কমিশন কখনোই করে না। এর ফলে তারা নিজেদের আইন নিজেরাই লংঘন করেন। এমনকি নাগরিক সমাজ ও টিআইবির মতো প্রতিষ্ঠান বিভিন্ন সময় প্রতিবেদন প্রকাশ করলেও তা তেমন গুরুত্ব দেন না। তাই ব্যয় সীমা নির্ধারণ আনুষ্ঠানিকতায় দাঁড়িয়েছে। এতে নির্বাচনে অর্থের প্রভাব নিজস্ব গতিতেই চলছে। যারা বিনিয়োগের মতোই নির্বাচনে টাকা খরচ করে জয়ী হয়ে আসেন।

রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও জাতীয় নির্বাচন পর্যবেক্ষণ পরিষদের চেয়ারম্যান ড. নাজমুল আহসান কলিমুল্লাহ বলেন, নির্বাচনে খরচ বা লেনদেন শুরু হয় মনোনয়ন বাণিজ্য থেকেই। তবে এসব বিষয়ের কোনো প্রমাণ থাকে না, আবার লেনদেন হয় ক্যাশ, সবই অনুমাননির্ভর। প্রার্থীর যে পরিমাণ অর্থ খরচের সীমা রয়েছে, তা দিয়ে কিছুই হয় না। বাস্তবতা হচ্ছে ন্যূনতম ১০ কোটি টাকার নিচে কোনো নির্বাচন করা যায় না। যারা টাকা নেয় তারা ভোগের পেছনেই ব্যয় করে। তবে এতে সমাজের নি¤œতম পর্যায়েও কিছু টাকা যায়। তবে প্রার্থী থেকে মধ্যম সারিই বেশি অর্থ ভোগ করে, তবুও বেশ কিছু টাকা ভোটার পর্যন্ত যায়। এ অর্থ গ্রামীণ এলাকায় সাময়িক অর্থনীতি চাঙ্গা রাখে।

সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার বলেন, নির্বাচন মানেই টাকার খেলা। বর্তমানে টাকার বিনিময়েই গণতন্ত্র কেনা যায়। এখন টাকা দিয়ে মনোনয়ন কিনতে হয়, টাকা দিয়ে ভোট কিনতে হয়। টাকা ছাড়া কর্মী পালন করা যায় না। এসব বিবেচনায় খরচের সীমায় নির্বাচন করা সম্ভব হবে না। ২৫ লাখ টাকায় নির্বাচন স্বপ্ন মাত্র। তবে শোনা যায়, মনোনয়ন কিনতেই কয়েক কোটি টাকা খরচ করতে হয়, তাহলে নির্বাচনে জিততে কত খরচ হবে তা অনুমান করা যায়। এর মাধ্যমে যা হয়, সাধারণ মানুষ ভোট দিতে পারলেও তাদের প্রতিনিধি হওয়ার কোনো সুযোগ থাকছে না।

এদিকে অর্থনীতি বিশ্লেষকরা বলছেন, নির্বাচনে বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যয় হলে তাতে অর্থনীতিতে একটি সাময়িক প্রভাব পড়বে। যানবাহনের যাতায়াত বাড়বে। দ্রুত যাতায়াতের জন্য অভ্যন্তরীণ পথে বিমানের মতো ব্যয়বহুল যানও ব্যবহার করছেন প্রার্থী ও তার আশপাশের লোকজন। এছাড়া ভোট উপলক্ষে সারা দেশে ৭ হাজার প্রিন্টিং প্রেসে কয়েক কোটি পোস্টার, লিফলেট, ব্যানারের পেছনে ব্যয় হবে দুই থেকে তিনশ’ কোটি টাকা। জনসভায় খাবারের ব্যবস্থা, মাইকিং করা হবে, সামাজিক গণমাধ্যমে প্রচারণায় বেশ ব্যয় হবে। এতে সামগ্রিকভাবে গ্রামীণ পর্যায়ে কিছুটা প্রণোদনা সৃষ্টি হবে। কিছু সময়ের জন্য ভোটারদের হাতে টাকা আসবে। আবার গেল সংসদ নির্বাচনে প্রায় অর্ধেক প্রার্থীর কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী ছিল না। তাতে তারা এলকায় বেশি পরিচিতিও নন। অনেকেই জনবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ছেন। এজন্য বেশিরভাগ টাকা ভোট কেনার জন্যও ব্যয় হতে পারে।

মনোনয়ন পাওয়ার আগেই বিশাল অঙ্কের অর্থ ব্যয় করেছেন অনেকে। তাছাড়া এক আসনে একাধিক প্রার্থী রয়েছেন। তাই দল মনোনীত প্রার্থীকে বিজয়ী করতে অন্য প্রার্থীকে খুশি করার ব্যাপারও থাকছে। আবার ভোট আদায়ে ক্লাব, সমিতি, ধর্মীয় ও সামাজিক প্রতিষ্ঠানে টাকা দিতে হবে প্রার্থীদের। সবকিছু মিলে নির্বাচনকে ঘিরে অর্থপ্রবাহ আরও বাড়বে।

বিশ্বব্যাংকের ঢাকা কার্যালয়ের মুখ্য অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন বলেন, এ পর্যন্ত নির্বাচনে সরাসরি কোনো নেতিবাচক প্রভাব অর্থনীতিতে খুব একটা লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। নির্বাচনের কারণে অতীতে অনেক গ-গোল হয়েছে। এবার এখনও শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বিরাজ করছে। নির্বাচনের যে খরচ হচ্ছে তা আলাদাভাবে বড় অঙ্কের মনে হতে পারে। তবে তা অর্থনীতি বা বাজেটের আকারের তুলনায় অত বেশি না। এর ফলে অর্থনীতিতে কোনো দৃশ্যমান প্রভাব, মূল্যস্ফীতি, বাজেট ঘাটতিতে, ঋণগ্রহণের ক্ষেত্রে বা সরকারি অন্য ব্যয়ে খুব বড় মাপের কোনো প্রভাব দেখি না। তবে নির্বাচন কালীন ব্যয় ও খরচ বৃদ্ধি মূল্যস্ফীতির উপর কিছুটা চাপ আনলেও আনতে পারে। তবে তা খুব বেশি না। বর্তমানে সার্বিক মূল্যস্ফীতি ৫.৪ শতাংশের মধ্যেই রয়েছে।

এদিকে নির্বাচন কমিশন সূত্র বলছে, আসন্ন নির্বাচনে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) প্রকল্পের আংশিক বাস্তবায়নে প্রায় ২ হাজার কোটি টাকা ব্যয় হবে। কমিশনের জন্য অনুমোদিত ব্যয় ৭৩২ কোটি টাকা। এর মধ্যে নির্বাচন পরিচালনা ক্ষেত্রে ৩০০ কোটি টাকা এবং বাকিটা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পেছনে ব্যয় হবে। এর বাইরে গোয়েন্দা সংস্থার প্রস্তুতিমূলক ব্যয় ৩০ কোটি টাকা, আনসারদের বর্ধিত ভাতায় ব্যয় হবে ২৪৩ কোটি টাকা। এদিকে মনোনয়ন ফরম কিনতে প্রার্থীদের এ বছর ব্যয় হয়েছে ৩২ কোটি টাকা। এবার সারা দেশে ৪০ হাজার ১৯৯টি সম্ভাব্য ভোট কেন্দ্রে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এতে ৪০ হাজার ১৯৯ জন প্রিসাইডিং অফিসার, ৮০ হাজার সহকারী প্রিসাইডিং অফিসার এবং পাঁচ থেকে ছয় লাখ পোলিং অফিসারসহ প্রায় সাত লাখ নির্বাচন পরিচালনাকারী কর্মী সম্পৃক্ত থাকবেন।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়