শিরোনাম
◈ চুয়াডাঙ্গায় তাপমাত্রা ৪১ দশমিক ৩ ডিগ্রি, হিট এলার্ট জারি  ◈ ঢাকা শিশু হাসপাতালের আগুন নিয়ন্ত্রণে ◈ ইরানে ইসরায়েলের হামলার খবরে বিশ্বজুড়ে উত্তেজনা, তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের আতঙ্ক ◈ বিমানবন্দরের থার্ড টার্মিনালের বাউন্ডারি ভেঙে বাস ঢু‌কে প্রকৌশলী নিহত ◈ জাতীয় পতাকার নকশাকার শিব নারায়ণ দাস মারা গেছেন ◈ ইরানের ইস্পাহান ও তাব্রিজে ইসরায়েলের ড্রোন হামলা, ৩টি ভূপাতিত (ভিডিও) ◈ ভেটোর তীব্র নিন্দা,মার্কিন নীতি আন্তর্জাতিক আইনের নির্লজ্জ লংঘন : ফিলিস্তিন ◈ স্কুল পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের গল্প-প্রবন্ধ নিয়ে সাময়িকী প্রকাশনা করবে বাংলা একাডেমি ◈ দক্ষিণ ভারতে ইন্ডিয়া জোটের কাছে গো-হারা হারবে বিজেপি: রেভান্ত রেড্ডি ◈ ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিনয় মোহন কোয়াত্রার ঢাকা সফর স্থগিত

প্রকাশিত : ০৯ ডিসেম্বর, ২০১৮, ০৫:৩৮ সকাল
আপডেট : ০৯ ডিসেম্বর, ২০১৮, ০৫:৩৮ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

বিদ্যুৎ উৎপাদন : লক্ষ্য থেকে অনেক পিছিয়ে নবায়নযোগ্য জ্বালানি

বণিক বার্তা : ক্যাপটিভ পাওয়ার ও আমদানিসহ দেশে বর্তমানে বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা ২০ হাজার মেগাওয়াট। বিদ্যুৎ খাতের মহাপরিকল্পনা অনুযায়ী, ২০১৫ সালের মধ্যে মোট বিদ্যুতের ৫ শতাংশ নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাত থেকে উৎপাদনের লক্ষ্য ছিল। সে হিসেবে তিন বছর আগেই এ খাত থেকে ১ হাজার মেগাওয়াট ছাড়িয়ে যাওয়ার কথা। অথচ বর্তমানে মাত্র ৫৫৯ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আসছে নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাত থেকে। নবায়নযোগ্য জ্বালানি লক্ষ্যের চেয়ে পিছিয়ে থাকার পেছনে তেলভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে অতি বিনিয়োগকে দায়ী করছেন বিশেষজ্ঞরা।

বিদ্যুৎ বিভাগ সূত্রে জানা যায়, ২০০৯ সাল থেকে এখন পর্যন্ত বিদ্যুৎ খাতের বিনিয়োগ হয়েছে ২২ বিলিয়ন ডলার। এ অর্থের সিংহভাগ বিনিয়োগ হয়েছে জীবাশ্ম জ্বালানি তথা তেল ও গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে। এ বিনিয়োগে গত ১০ বছরে তেল ও গ্যাসভিত্তিক ৯৯টি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করা হয়েছে, যার সম্মিলিত সক্ষমতা প্রায় ১৫ হাজার। এছাড়া কয়লাভিত্তিক ১৯টি প্রকল্পেও বড় অংকের বিনিয়োগ হচ্ছে। কয়লাভিত্তিক এসব বিদ্যুৎকেন্দ্রের মোট সক্ষমতা ধরা হয়েছে ২০ হাজার ৬৭ মেগাওয়াট।

অন্যদিকে এ ১০ বছরে নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাত থেকে যোগ হয়েছে মাত্র ৩৩০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ, যার সিংহভাগ হচ্ছে সোলার হোম সিস্টেম। এখান থেকেই যোগ হচ্ছে ২৮৬ মেগাওয়াট। সোলার পার্ক, সোলার মিনি গ্রিড এবং রুফ টপ সোলারে উল্লেখযোগ্য কোনো সাফল্য নেই গত ১০ বছরে।

অথচ প্রতিবেশী দেশ ভারতে মোট বিদ্যুতের ১৭ দশমিক ৫০ শতাংশ উৎপাদন হচ্ছে নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাত থেকে, যার পরিমাণ ৬৯ হাজার মেগাওয়াট। ২০২২ সালে এ খাত থেকে ১ লাখ ৭৫ হাজার মেগাওয়াট উৎপাদনের লক্ষ্য স্থির করেছে দেশটি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে টেকসই ও নবায়নযোগ্য জ্বালানি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (স্রেডা) চেয়ারম্যান মো. হেলাল উদ্দিন বলেন, নবায়নযোগ্য জ্বালানি প্রকল্পের জন্য প্রচুর জমির দরকার। কিন্তু সেই পরিমাণ জমি আমাদের নেই। এছাড়া বায়ু বিদ্যুতের জন্য বাতাসের যে গতি প্রয়োজন সেটা বাংলাদেশের ভূখণ্ডে পাওয়ার সম্ভাবনা কম। যেভাবে নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতের উন্নয়ন সম্ভব, আমরা সেভাবে কাজ করছি। আমরা বাণিজ্যিক ভবনের ছাদে করার চেষ্টা করছি। এতে ২০২০ সালের মধ্যে নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাত থেকে মোট বিদ্যুতের ১০ শতাংশ উৎপাদনের লক্ষ্য অর্জনের চেষ্টা সহজ হবে।

বিদ্যুৎ খাতের মহাপরিকল্পনা অনুযায়ী, ২০২১ সালের মোট বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা নির্ধারণ করা হয়েছে ২৪ হাজার মেগাওয়াট। এ সক্ষমতায় গ্যাস, তেল ও কয়লাসহ নবায়নযোগ্য জ্বালানিকেও বিবেচনায় নেয়া হয়েছে। সৌর শক্তি, বায়ু, জল ব্যবহার করে বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে মোট বিদ্যুতের ১০ শতাংশ বা ২ হাজার ৪০০ মেগাওয়াট। আর ২০১৫ সালের মধ্যেই নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে ৫ শতাংশ বা ১০০০ মেগাওয়াটেরও বেশি বিদ্যুৎ উৎপাদনের কথা ছিল। অথচ বর্তমানে মোট বিদ্যুতের মাত্র ২ দশমিক ৭৯ শতাংশ আসছে এ খাত থেকে।

ভৌগোলিক অবস্থান এবং সীমাবদ্ধতাকেও নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতে অনগ্রসরতার জন্য দায়ী করছে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান। যদিও এসব সীমাবদ্ধতার মধ্যে থেকেই নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতের লক্ষ্য অর্জন সম্ভব বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

সরকার জমি ও ভৌগোলিক অবস্থানকে নবায়নযোগ্য জ্বালানির পিছিয়ে পড়ার কারণ হিসেবে দেখালেও বিশেষজ্ঞরা বলছেন ভিন্ন কথা। তাদের মতে, সূর্য রশ্মি ও বাতাসের যে গতি রয়েছে, তা ব্যবহার করে লক্ষ্যের চেয়ে বেশি জ্বালানি পাওয়া সম্ভব।

এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব এনার্জির পরিচালক ড. সাইফুল হক বলেন, জমি কোনো সমস্যাই না। যে পরিমাণ পতিত জমি রয়েছে, সেগুলো ব্যবহার করা হলে কৃষির কোনো ক্ষতি হবে না। এছাড়া নতুন পদ্ধতির মাধ্যমে সোলার প্যানেল স্থাপন করলে বিদ্যুৎ এবং ফসল দুটি একই সঙ্গে পাওয়া সম্ভব। আমাদের সব নদীবন্দর, সমুদ্রবন্দর, বিমান ও রেলওয়ে ভবনের ছাদে যে পরিমাণ খালি জায়গা আছে, সেখানে রুফ টপ স্থাপন হলে বিপুল পরিমাণ বিদ্যুৎ পাওয়া সম্ভব।

২০১৬ সালে বিদ্যুৎ খাত নিয়ে জাপানের আন্তর্জাতিক দাতা সংস্থার (জাইকা) করা বিদ্যুৎ খাতের মহাপরিকল্পনা খসড়ায় দেখানো হয়, নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাত থেকে মোট ৩ হাজার ৬৬৬ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন সম্ভব। এর মধ্যে শুধু সৌরশক্তি কাজে লাগিয়ে মোট ২ হাজার ৬৮০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের সক্ষমতা রয়েছে। এছাড়া বায়ু বিদ্যুৎ থেকে ৬৩৭ মেগাওয়াট, বায়োগ্যাস থেকে ২৮৫ মেগাওয়াট উৎপাদন করা সম্ভব।

অন্যদিকে পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) ‘মুভিং টু এ লো কার্বন অ্যান্ড রিনিউয়েবল এনার্জি ফিউচার’ শীর্ষক এক গবেষণায় বলা হয়, উদ্ভাবন ও প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে বাংলাদেশ আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে ৫ হাজার মেগাওয়াট সৌর বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে পারে।

যুক্তি হিসেবে প্রতিবেদনটিতে বলা হয়, বাংলাদেশের পোশাক খাতের বড় গ্রাহক পশ্চিমা বিশ্ব। এসব গ্রাহক কোনো কোম্পানির কাছ থেকে পণ্য কেনার আর কিছু শর্ত মেনে তৈরি পোশাক ক্রয় করে থাকে, যার একটি হচ্ছে ২০৩০ সালের মধ্যে কার্বন নির্গমন শূন্যে কমিয়ে আনার প্রচেষ্টা। ব্যবসা টিকিয়ে রাখার জন্য বাংলাদেশের সব পোশাক প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান তা মানতে আগ্রহী। সে হিসেবে সব পোশাক কোম্পানির কারখানার ছাদে ‘রুফ টপ সোলার’ প্যানেল স্থাপনের মাধ্যমে ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা যেতে পারে।

সোলার ইরিগেশন পাম্পকে নবায়নযোগ্য জ্বালানির আরেকটি সম্ভাব্য খাত হিসেবে ওই প্রতিবেদনে উল্লেখ করে পিআরআই। প্রতি বছর কৃষি জমিতে সেচ দেয়ার জন্য ২০ লাখ পাম্প ব্যবহার করা হয়, যেগুলো বিদ্যুৎ এবং ডিজেলে চলে। কিন্তু প্রতি জেলা থেকে ১০ হাজার কৃষককে ১০ কিলোওয়াটের সেচ পাম্পের আওতায় আনা হলে ৬৪টি জেলায় ৬ হাজার ৪০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন সম্ভব বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়। এছাড়া অর্থনৈতিক জোন এবং চা বাগানের বিশেষ অংশে সোলার প্যানেল ব্যবহার করে সৌর বিদ্যুৎ উৎপাদন সম্ভব বলেও ওই প্রতিবেদনে বলা হয়।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়