রাশিদ রিয়াজ : ইরানের প্রেসিডেন্ট ড. হাসান রুহানি ইউরোপের দেশগুলোকে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন তার দেশের প্রতিরক্ষা বিষয়ে কোনো ধরনের আলোচনা হবে না। বুধবার সেমনান প্রদেশে এক জনসভায় বলেছেন, "ইউরোপীয়রা যদি ইরানের প্রতিরক্ষা সক্ষমতার বিষয়ে কোনো কথা বলতে চায় তা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। কারণ এটা শত্রুর আগ্রাসন মোকাবেলায় ইরানকে রক্ষার একটি গুরুত্বপূর্ণ হাতিয়ার।" এদিকে, ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোহাম্মদ জাওয়াদ জারিফও সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, ইরানের মতো একটি বৃহৎ ও স্বাধীন দেশের প্রতিরক্ষা শক্তি নিয়ে প্রশ্ন তোলার অধিকার কোনো দেশের নেই।
সম্প্রতি পরমাণু সমঝোতা টিকিয়ে রাখার জন্য যখন ইরান ও ইউরোপের মধ্যেকার আলোচনা বহুদূর এগিয়ে গেছে তখন এটাকে ক্ষতিগ্রস্ত করার জন মার্কিন কর্মকর্তারা নতুন করে ষড়যন্ত্র শুরু করেছেন। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও দাবি করেছেন ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা পরমাণু সমঝোতার বিষয়ে নিরাপত্তা পরিষদে গৃহীত ২২৩১ নম্বর প্রস্তাবের লঙ্ঘন। অথচ বাস্তবতা হচ্ছে পরমাণু চুক্তিতে ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষার বিষয়ে কোনো বিধি-নিষেধ আরোপ করা হয়নি বরং বলা হয়েছে ইরান পরমাণু ওয়ারহেড বহনে সক্ষম কোনো ক্ষেপণাস্ত্রের পরীক্ষা চালাতে পারবে না।
যাইহোক, পরমাণু ওয়ারহেড বহনে সক্ষম ক্ষেপণাস্ত্রের পরীক্ষা চালানোর কোনো ইচ্ছা ইরানের কখনই ছিল না। ইরান কেবল নিখুঁতভাবে নিক্ষেপযোগ্য প্রচলিত ক্ষেপণাস্ত্রের পরীক্ষা চালাচ্ছে এবং শত্রুর হুমকি মোকাবেলায় নিজের প্রতিরক্ষা শক্তি বাড়ানোই এর প্রধান উদ্দেশ্য। বাস্তবতা হচ্ছে, মার্কিন কর্মকর্তারা এসব অযৌক্তিক বিতর্ক উত্থাপন করে পরমাণু সমঝোতা থেকে বেরিয়ে যাওয়া এবং নিরাপত্তা পরিষদে গৃহীত ২২৩১ নম্বর প্রস্তাব লঙ্ঘনের কেলেঙ্কারী ধামাচাপা দিতে পারবে না।
ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষার বিষয়ে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর এ দাবির একই সময়ে কৌশলগত গবেষণা বিষয়ক আন্তর্জাতিক একটি থিঙ্ক ট্যাংকের নির্বাহী পরিচালক মার্ক ফিতয্ প্যাট্রিক বলেছেন, ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা নিরাপত্তা পরিষদের ২২৩১ নম্বর প্রস্তাবের লঙ্ঘন নয়। তিনি আরো বলেন, "ওই প্রস্তাবে এটাও বলা হয়েছে পরমাণু সমঝোতাকে দুর্বল করতে পারে এমন পদক্ষেপ নেয়া থেকে সবাইকে বিরত থাকতে হবে। কিন্তু তারপরও আমেরিকা এ চুক্তি বানচাল করার চেষ্টা করছে।"
ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচিকে সীমিত করার জন্য আমেরিকা সবসময়ই চেষ্টা চালিয়ে আসছে। এ লক্ষ্যে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প চেষ্টার কোনো ত্রুটি করেননি। ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচি থেকে ইরানকে বিরত রাখার জন্য প্রথমে তিনি পরমাণু সমঝোতা থেকে সরে আসেন এবং এখন ইরান ভীতি সৃষ্টির পাশাপাশি ইরান বিরোধী নিষেধাজ্ঞায় ইউরোপকে শামিল করার চেষ্টা চালাচ্ছে। যদিও এখন পর্যন্ত ইউরোপকে রাজি করাতে তিনি ব্যর্থ হয়েছেন।
পর্যবেক্ষকরা বলছেন, এ অবস্থায় ইউরোপের উচিত হবে না আমেরিকার পাতা ফাঁদে পা দেয়া এবং পরমাণু সমঝোতা টিকিয়ে রাখা হবে তাদের ঐতিহাসিক দায়িত্ব। ইউরোপ যদি আমেরিকার সঙ্গে তাল মেলায় তাহলে এটা হবে তাদের দ্বিমুখী আচরণ। কারণ নিরাপত্তা পরিষদের ২২৩১ নম্বর প্রস্তাবে ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা চালানোর ওপর কোনো বিধি নিষেধ আরোপ করা হয়নি। বরং পরমাণু সমঝোতা অনুযায়ী প্রতিশ্রুতি পালনের জন্য সংশ্লিষ্ট সব দেশের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে। পার্সটুডে
আপনার মতামত লিখুন :