ডেস্ক রিপোর্ট : জাতীয় রফতানি ট্রফি বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রদত্ত প্রধান অতিথির ভাষণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে আমরা যে সুযোগটা পেয়েছি তাতে আমাদের ঋণ গ্রহণের সুবিধা হবে, ব্যবসা-বাণিজ্যের সুবিধা হবে।
এ সুযোগ গ্রহণ করে ব্যবসায়ী সম্প্রদায়ের প্রতি তিনি রফতানি বাণিজ্য বৃদ্ধিতে আরও তৎপর হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। উল্লেখ্য, কিছুদিন আগে স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশের তালিকায় প্রবেশের প্রথম ধাপ অতিক্রম করেছে বাংলাদেশ।
২০২১ সালে অনুষ্ঠেয় মধ্যবর্তী পর্যালোচনায় বাংলাদেশ তার অবস্থান ঠিক রাখতে পারলে ২০২৪ সালে আমরা চূড়ান্তভাবে উন্নয়নশীল দেশের তালিকায় উত্তীর্ণ হতে পারব।
বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হলে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে আমাদের মর্যাদা ও অবস্থান আগের তুলনায় বাড়বে ও সুসংহত হবে। কোনো দেশ যখন অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে এ ধরনের সাফল্য অর্জন করে তখন বৈশ্বিক পর্যায়ে ধরে নেয়া হয় সেই দেশটি অর্থনৈতিকভাবে শক্তিশালী হয়েছে। আন্তর্জাতিক বাজারে তার প্রতিযোগিতার সক্ষমতা বেড়েছে। এর অবশ্যই অনেক ইতিবাচক দিক রয়েছে।
তবে তার সুফল পেতে প্রতিযোগিতা সক্ষমতা কেবল বৃদ্ধি পাওয়াই যথেষ্ট নয়, প্রমাণ করে দেখিয়ে দিতে হবে আমরা উন্নত দেশের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে পারি। সেজন্য আমাদের ব্যবসা-বাণিজ্য ও রফতানির সম্প্রসারণ ঘটাতে হবে। যদিও উন্নয়নশীল দেশের কাতারে উত্তরণের ফলে আন্তর্জাতিক বাজারে স্বল্পোন্নত দেশ হিসেবে বাংলাদেশ যে বিশেষ কিছু সুবিধা পেত তা আর পাবে না। যেমন, বাংলাদেশ স্বল্প সুদে আন্তর্জাতিক সংস্থা এবং বিভিন্ন দেশ থেকে ঋণ পেত। নির্দিষ্ট সময় পর বাংলাদেশের জন্য সেই সুবিধা আর থাকবে না। কাজেই এ পরিস্থিতি মোকাবেলায় আমাদের প্রস্তুত থাকতে হবে। আগেভাগেই নিতে হবে সেই প্রস্তুতি।
পাশাপাশি উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পাওয়ায় বাংলাদেশের সামনে নতুন সম্ভাবনা ও সুযোগ তৈরি হবে। যেমন আন্তর্জাতিক বাজারে উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে ভাবমূর্তি উন্নয়নের ফলে বৈদেশিক ঋণ পেতে সুবিধা হবে। বিদেশি উদ্যোক্তারা বাংলাদেশে বিনিয়োগে উৎসাহিত হবেন। এ সুযোগকে আমাদের কাজে লাগাতে হবে।
এ লক্ষ্যে সবার আগে যা প্রয়োজন তা হল দেশে ব্যবসা-বাণিজ্যের পরিবেশ উন্নত করা। শিল্পপ্রতিষ্ঠানে গ্যাস-বিদ্যুতের সংকট দূর করা। অবকাঠামোর উন্নতি করা। ব্যবসা ক্ষেত্রে আমলাতান্ত্রিক দীর্ঘসূতার অবসান ঘটানো। স্বল্প সুদে ব্যাংক ঋণ প্রাপ্তির ব্যবস্থা করা। মোট কথা, দেশে একটি ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ গড়ে তুলতে হবে।
স্বল্পোন্নত থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণ মসৃণ ও টেকসই করতে দেশে অভ্যন্তরীণ সুশাসন ও স্থিতিশীলতার বিষয়টিও গুরুত্বপূর্ণ। এসব নিশ্চিত করতে হবে সব সরকারকেই। যখন যারাই ক্ষমতায় থাকুক, তাদেরকে এ ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখতে হবে।
পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রী ব্যবসায়ীদের প্রতি রফতানি বৃদ্ধিতে আরও তৎপর হওয়ার যে আহ্বান জানিয়েছেন, তা বাস্তবায়নে ব্যবসায়ীদেরও উদ্যোগী হতে হবে। উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে প্রতিযোগিতা সক্ষমতা টিকিয়ে রাখতে গার্মেন্ট ছাড়াও আরও অনেক রফতানি পণ্য উৎপাদনে এগিয়ে আসতে হবে।
বাড়াতে হবে শ্রমিকের উৎপাদনশীলতাও। তবে এসব অর্জন তখনই অর্থবহ হবে যখন দেশের সিংহভাগ মানুষ ভোগ করবে এর সুফল। দুর্নীতি ও বৈষম্য কমিয়ে আনার মাধ্যমে তা সম্ভব হতে পারে।
সূত্র : যুগান্তর
আপনার মতামত লিখুন :