শিরোনাম
◈ বাংলাদেশের রাজনীতির অবনতি দুঃখজনক: পিটার হাস ◈ সয়াবিন তেলের দাম লিটারে বাড়লো ১০ টাকা  ◈ নির্বাচনি ইশতেহারের আলোকে প্রণীত কর্মপরিকল্পনা দ্রুত বাস্তবায়নের আহবান শিল্পমন্ত্রীর  ◈ প্রচণ্ড গরম থেকেই ঘটতে পারে মানবদেহের নানা রকম স্বাস্থ্য ঝুঁকি ◈ অবশেষে রাজধানীতে স্বস্তির বৃষ্টি  ◈ ইসরায়েল পাল্টা হামলা করলে কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে জবাব দেবে ইরান: উপপররাষ্ট্রমন্ত্রী ◈ মিয়ানমারের আরও ১৫ সেনা সদস্য বিজিবির আশ্রয়ে ◈ সয়াবিনের দাম বাড়ানোর সুযোগ নেই: বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী ◈ উপজেলা নির্বাচন বর্জনের সিদ্ধান্ত বিএনপির ◈ কেউ যেন নিরাপত্তাহীনতায় না থাকি, আইনের শাসনে জীবনযাপন করি: ড. ইউনূস

প্রকাশিত : ০৩ ডিসেম্বর, ২০১৮, ০৮:২৪ সকাল
আপডেট : ০৩ ডিসেম্বর, ২০১৮, ০৮:২৪ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

সাদপন্থীদের শাস্তি দাবি

কালের কন্ঠ : গাজীপুরের টঙ্গীতে ইজতেমা মাঠের দখল নিয়ে তাবলিগ জামাতের বিবদমান দুই পক্ষের রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের ঘটনায় গতকাল রবিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত দুই পক্ষের কেউ মামলা করেনি। তবে পুলিশের কাজে বাধা দেওয়ার অভিযোগে একটি মামলা হয়েছে। তাবলিগের আমির মাওলানা সাদ কান্ধলভীর অনুসারীদের হামলায় মুসল্লি ইসমাইল মণ্ডল নিহত হয়েছেন দাবি করে তাদের শাস্তিসহ ছয় দফা দাবি জানিয়েছে সাদবিরোধীরা। এই দাবিতে তারা ঢাকা, নোয়াখালী ও নাটোরে বিক্ষোভ করেছে। এ ছাড়া আজ সোমবার সারা দেশে জেলা প্রশাসক বরাবর স্মারকলিপি দেওয়ার কর্মসূচি দিয়েছে সাদবিরোধীরা।

হেফাজত ইসলাম বাংলাদেশের আমির আল্লামা শাহ আহমদ শফীও সংঘর্ষের জন্য সাদপন্থীদের দায়ী করে ঘটনার নিন্দা জানিয়েছেন।

উল্লেখ্য, সাদ কান্ধলভীকে তাবলিগের আমির মানা-না মানা নিয়ে তাবলিগ জামায়াতের দুই পক্ষের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলে আসছে। মাওলানা সাদকে তাবলিগের আমির মানেন না দেওবন্দপন্থী আলেমরা। এই আলেমদের সমর্থন করে হেফাজতে ইসলাম। ‘জোড় ইজতেমা’ করার জন্য টঙ্গীর তুরাগ নদের তীরে বিশ্ব ইজতেমা মাঠে অবস্থান নিয়েছিল সাদবিরোধী মুসল্লিরা। গত শনিবার সেখানে সাদপন্থীরাও এসে জড়ো হয়। একপর্যায়ে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ বেধে যায়। ইজতেমা মাঠে সংঘর্ষে ইসমাইল মণ্ডল নামে মুন্সীগঞ্জের এক মুসল্লি নিহত হন। আহত হয়েছে কয়েক শ মুসল্লি। এর আগেও ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থানে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে।

ঘটনার পর ইসমাইল মণ্ডলের ছেলে জাহিদ হাসান বলেছিলেন, তাঁর বাবা সাদপন্থী। জাহিদ তাঁর বাবার সঙ্গে ইজতেমা মাঠে এসেছিলেন।

ইজতেমা মাঠ ফাঁকা: সংঘর্ষের ঘটনার পর আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সাদপন্থী ও সাদবিরোধী দুই পক্ষকে বের করে দেয়।

আমাদের টঙ্গী (গাজীপুর) প্রতিনিধি গতকাল সরেজমিনে বিশ্ব ইজতেমা মাঠে গিয়ে দেখেছেন সেখানে পুলিশ ও র‌্যাব অবস্থান নিয়েছে। ইজতেমা মসজিদ এবং বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে মুসল্লিদের জামা-কাপড়, বিছানাপত্র ও অন্যান্য মালামাল। সকালে মুসল্লিরা ইজতেমা মাঠের প্রধান ফটকে এসে জড়ো হয় তাদের ফেলে যাওয়া মালামাল নিতে। পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদ ও যাচাই-বাছাই করে মুসল্লিদের ভেতরে নিয়ে মালামাল হস্তান্তর করে।

গাজীপুর মহানগর পুলিশের কমিশনার এম ওয়াই বেলালুর রহমান জানান, ইজতেমা মাঠে মুসল্লিদের সার্বিক বিষয় তদারকি এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য ৯ সদস্যের একটি কমিটি করা হয়েছে। তারা মুসল্লিদের ফেলে যাওয়া জিনিসপত্র দেখভাল ও বুঝিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করছে।

তবে সংঘর্ষের ঘটনায় গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত দুই পক্ষের কেউ মামলা করেনি বলে জানিয়েছেন টঙ্গী পশ্চিম থানার ওসি এমদাদুল হক। তিনি জানান, পুলিশ বাদী হয়ে একটি মামলা করেছে। পুলিশের কাজে বাধা দেওয়ার অভিযোগে করা এই মামলায় অজ্ঞাতপরিচয় ২০-২৫ হাজার জনকে আসামি করা হয়েছে।

এদিকে বিভিন্ন হাসপাতাল থেকে আহত মুসল্লিদের বেশির ভাগই চলে গেছে। টঙ্গী শহীদ আহসানউল্লাহ মাস্টার জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) পারভেজ হোসেন জানান, আহতদের আত্মীয়-স্বজন এসে অনেককে নিয়ে গেছে।

সাদবিরোধীদের বিক্ষোভ, সংবাদ সম্মেলন : সাদপন্থীরা লাঠিসোঁটা নিয়ে ইজতেমা মাঠে হামলা করেছে বলে দাবি করেছে সাদবিরোধী মাওলানা জুবায়ের আহমেদের অনুসারীরা। তারা সাদপন্থী ওয়াসিফুল ইসলাম ও শাহাবুদ্দিনকে দ্রুত আইনের আওতায় এনে শাস্তির দাবিও জানিয়েছে।

নিজস্ব প্রতিবেদক জানান, গতকাল দুপুর ২টায় রাজধানীর পল্টনে হোটেল জাফরানে সংবাদ সম্মেলন করে ছয় দফা দাবি জানিয়েছে মাওলানা সাদবিরোধীরা। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য দেন মাওলানা আমানুল হক।

লিখিত বক্তব্যে দাবি করা হয়, ইজতেমা ময়দানে হামলার নির্দেশদাতা ওয়াসিফুল ইসলাম ও শাহাবুদ্দিন নাসিমসহ আরো কয়েকজন। হামলার সঙ্গে জড়িত সবাইকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়ার দাবি জানানো হয়। এ ছাড়া হতাহতদের ক্ষতিপূরণ ও চিকিৎসার ব্যবস্থা করা, টঙ্গী ময়দান এত দিন যেভাবে তাবলিগের শূরা ভিত্তিক তাবলিগের সাথি ও ওলামায়েকেরামের অধীনে ছিল তাদের কাছেই হস্তান্তর করা, সাদপন্থী ওয়াসিফ ও নাসিমদের কাকরাইল মসজিদের সব কর্মকাণ্ড থেকে বহিষ্কার করা, সারা দেশে ওলামায়েকেরাম ও শূরা ভিত্তিক পরিচালিত তাবলিগের সাথিদের ওপর হামলা-মামলা বন্ধ করে পূর্ণ নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং আগামী ১৮, ১৯ ও ২০ ডিসেম্বরের মধ্যেই বিশ্ব ইজতেমা অনুষ্ঠানের কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানানো হয় লিখিত বক্তব্যে।

সংবাদ সম্মেলনে ইজতেমা মাঠে সংঘর্ষের ঘটনায় পুলিশ প্রশাসনের ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ বলে দাবি করা হয়। হামলায় নিহত মুন্সীগঞ্জের ইসমাইল মণ্ডল ও আহত পাঁচ শতাধিক মুসল্লি তাদের অনুসারী দাবি করে লিখিত বক্তব্যে আমানুল হক আরো জানান, হামলাকারীরা মাদরাসা ভবন ও মুরব্বিদের আসবাবপত্র ভেঙে তছনছ করেছে।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন তাবলিগের সাদবিরোধী অংশের শূরা সদস্য মাওলানা জুবায়ের আহমদ ও মাওলানা ওমর ফারুক। এ ছাড়া ঢাকা মহানগর হেফাজতের সভাপতি নূর হুসাইন কাসেমী, হেফাজত নেতা মাওলানা আশরাফ আলীসহ আরো অনেকেই উপস্থিত ছিলেন।

সংবাদ সম্মেলনের পর বায়তুল মোকাররম মসজিদের সামনে পল্টন এলাকায় মাওলানা জুবায়েরের অনুসারীরা বিক্ষোভ করে।

নাটোর প্রতিনিধি জানান, গতকাল সকাল ১১টার দিকে নাটোর প্রেস ক্লাবের সামনে প্রতিবাদ সমাবেশ ও মানববন্ধন করেছে মাওলানা জুবায়ের আহমেদের অনুসারীরা। কর্মসূচিতে একাত্মতা জানান আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য শফিকুল ইসলাম শিমুল। তিনি আলেম-উলামাদের পাশে থেকে সমস্যা সমাধানের আশ্বাস দেন। এরপর বিক্ষোভকারীরা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শাহ রিয়াজের কাছে স্মারকলিপি দেয়।

নোয়াখালী প্রতিনিধি জানান, সাদপন্থীদের শাস্তি চেয়ে জেলা শহর মাইজদীর জেলা জামে মসজিদ মোড় থেকে বিক্ষোভ মিছিল করে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে যান তাবলিগের লোকজন। পরে জেলা প্রশাসককে স্মারকলিপি দেয়।

আল্লামা আহমদ শফীর নিন্দা ও প্রতিবাদ : হাটহাজারী (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি জানান, গতকাল বিকেলে হাটহাজারীতে নিজ কার্যালয়ে এক জরুরি বৈঠক করেন আল্লামা আহমদ শফী। তিনি বলেন, মাওলানা সাদের অনুসারীরা টঙ্গীর মাঠ দখল করার জন্য লাঠিসোঁটা ও অস্ত্র নিয়ে হামলা করেছে। মাঠে অবস্থানরত তাবলিগি সাথি ও মাদরাসাছাত্রদের শহীদ ও মারাত্মকভাবে আহত করেছে। এ ধরনের ন্যক্কারজনক ঘটনা দেশের ইতিহাসে ঘটেনি। এটা সম্পূর্ণ পূর্বপরিকল্পিত। শান্তিপূর্ণভাবে বিশ্বব্যাপী ইসলামের দাওয়াতের কাজ স্তব্ধ করতে এবং মুসলমানদের মাঝে বিভেদ তৈরির জন্য এ হামলা হয়েছে।

বৈঠকে হাটহাজারী মাদরাসার সিনিয়র মুহাদ্দিস আল্লামা শেখ আহমদ, আল্লামা জুনাইদ বাবুনগরী, মুফতি জসীমুদ্দীন, মাওলানা ওমর, মাওলানা ইয়াহইয়া, মাওলানা ফোরকান আহমদ, মাওলানা নূরুল ইসলাম, মাওলানা মুহাম্মাদ আনাস মাদানীসহ তাবলিগের স্থানীয় মুরব্বি ও সাথিরা উপস্থিত ছিলেন।

বৈঠক শেষে প্রতিবাদ কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। সে অনুসারে আজ সোমবার সকাল ১০টায় প্রতিটি উপজেলায় নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করা হবে। বিকেল ৪টায় প্রতিবাদ মিছিল হবে। দেশের প্রতিটি মসজিদে দোয়া কর্মসূচি পালনের জন্য আলেম-উলামা, তাবলিগি সাথি ও ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের প্রতি আহ্বান জানান আহমদ শফী। তিনি টঙ্গী মাঠে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ ফিরিয়ে আনা এবং বিশ্ব ইজতেমার পূর্বঘোষিত তারিখ অনুযায়ী পালনে সরকারের সহযোগিতা কামনা করেন।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়