আরিফুল কাদের : ইউরোপজুড়ে মুসলিম স্থাপনা দেখতে এখনো প্রতিদিন ভিড় করেন লাখ লাখ পর্যটক। মুসলিম স্থাপত্যশৈলীর আসল আকর্ষণের দৃষ্টিনন্দন নকশা ও ডিজাইন। এসব স্থাপনার মাঝে ফুটে উঠেছে মুসলমানদের শৌখিন রুচিবোধের প্রকাশ। প্রমাণ দিয়েছে মুসলিম সংস্কৃতি অতীতকাল থেকেই স্থাপনা সংস্কৃতিতে শৌখিন ছিল। শত শত বছর ধরে আপন গৌরবে টিকে আছে এই মুসলিম স্থাপনাগুলো। সেসব স্থাপনার মধ্যে গৌরবান্বিত হয়ে আছে ‘আল-হামরা’। ওই প্রাচীন মুসলিম সভ্যতার পরিচিতি সংক্ষেপে তুলে ধরা হলো:
মধ্যযুগের সভ্যতা ও জ্ঞানের এক মহান অধ্যায় রচিত হয়েছিল আন্দালুসিয়া নামে খ্যাত স্পেন নগরীতে। জ্ঞান, ঐশ্বর্য, শিল্প ও বিত্ত-বৈভবের কোনো অভাব ছিলো না সেখানে। সেই বিত্ত-বৈভব, ঐশ্বর্য ও শিল্প-জ্ঞান দিয়েই নির্মিত হয়েছিলো ইসলামের স্থাপত্ব গৌরব আল-হামরা। হাজার বছর ধরে দাঁড়িয়ে থাকা জমকালো সেই প্রাসাদ তারই সাক্ষ্য বহন করছে। হিজরি চতুর্থ শতাব্দি মোতাবেক খ্রিস্টীয় ১০ শতকে প্রথম আবু আবদিল্লাহ মুহাম্মাদ ওরফে মুহাম্মাদ বিন ইউসুফ বিন মুহাম্মাদ বিন আহমাদ বিন নসর ইবনুল আহমার ১২৩৮ সালে তার বসবাস ও রাষ্ট্রীয় কার্য পরিচালনার জন্য নির্মাণ করেন এটি। মাদ্রিদের ২৬৭ মাইল (৪৩০ কি. মি.) দক্ষিণে দারু নদীর তীরে ছায়াঘেরা সবুজে ঢাকা এক পাহাড়ে অবস্থিত এটি। পরবর্তীতে তার যোগ্য উত্তরসূরীগণ ৩০০ বছর ধরে তা সম্প্রসারণ ও সংস্কার করে এর সৌন্দর্য ও শৌর্য-বীর্য আরও মোহময় করে তোলেন। অল্প দিনেই প্রাসাদের দ্যুতি বিশ্বময় ছড়িয়ে পড়ে।
মধ্যযুগীয় আরব সংস্কৃতি ও শাসনব্যবস্থার সুদৃঢ় ভিত এবং সুন্দরের প্রতীক ছিলো আল হামরা। এর নয়নাভিরাম সৌন্দর্য মন্ত্রমুগ্ধ ও মায়াগ্রস্থ করে যে কাউকেই কাছে টেনে নিবে। এমনটাই স্বীকৃতি দিয়েছেন স্পেনিশ প-িতগণ। পশ্চিমের কলা ও স্থাপত্ববিদদের ভাষায়- ‘এটি স্থাপত্বকলার বিস্ময়কর প্রায়গিক জ্ঞান।’
স্পেনের কলাবিদগণ একে ১৯৫২ সাল থেকে আল-হামরা মিনিফেস্ট্রু নামে আখ্যায়িত করে আসছেন এবং তাদের পাঠ্যপুস্তকে বাধ্যতামুলক পাঠ্য গণ্য করেছেন। ইউনেস্ক ১৯৯৪ সালে বিশ্ব ঐতিহ্য ঘোষণা দিয়েছে একে। আল হামরার চারপাশের দেয়ালের পরিধি দুই কিলোমিটার। এর অবকাঠামো ও নির্মাণ শৈলী স্বর্ণ-রৌপ্য খচিত এবং মূল্যবান কংক্রিট-কঙ্কর সমৃদ্ধ।
প্রাসাদের প্রতিটি ভবন ও প্রতিটি কক্ষে স্বর্ণ ও পাথরে খোদাই করা আরবি ক্যালিওগ্রাফির অদ্বিতীয় সব শিল্পকর্মের ছাপ। কুরআন, হাদিস, আরবি কবিতা ও উপদেশ সুশোভিত হয়ে আছে এখানকার প্রতিটি খুঁটি, দেয়াল, কক্ষ ও ভবনে। ঐশ্বরিক হাত যেনো তার সকল সৌন্দর্য এখানেই ঢেলে দিয়েছেন। জগতবাসীর কাছে এটি ছিলো শিল্প ও সৌন্দর্যের আধার। কেবল প্রাসাদের দেয়াল আর মসজিদের গম্বুজ চিত্রিত করে রাখলেই যে আল্লাহর সন্তুষ্টি পাওয়া যায় না তারও ঐতিহাসিক প্রমাণ স্পেনের শাসকগণ।
আপনার মতামত লিখুন :