মুশফেকা আলম ক্যামেলিয়া : আমার এক পরিচিত নারী ঢাকার একটি ভালো কলেজে শিক্ষকতা করেন। তার স্বামীর সাথে ডিভোর্স হয়। ডিভোর্সের পর ষোড়শীকন্যা একবছর ধরে ধর্ষণের শিকার হচ্ছিলো তার বাবার বন্ধুর মাধ্যমে। যা তার মায়ের কানে এসেছে কয়েকদিন আগে। তার আগের স্বামীর কাছে তার দুই সন্তান ছিলো। কন্যাটি তার মায়ের কাছে কিছুদিন থাকার সুবাদে একসময় এমন ঘটনা জানায় ও কান্নায় ভেঙে পড়ে। এ ঘটনা শুনে আমার কাছে মেয়েটির মা হাউমাউ করে জানতে চাইলো, আমি এই মেয়েটির কাউন্সেলিংয়ে কোনো ভূমিকা রাখতে পারি কিনা? হতভম্ব আমি। প্রতিদিনের নাগরিক জীবনের খবর কাগজে পড়ার বাইরে এইসব নিয়ে কারো মুখোমুখি হইনি। আমি কি কাউন্সেলিং করবো! দুই তিনদিন পরে জানা গেলো, মেয়েটির মা মামলা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তার এই বিপর্যয় অবস্থা আমাকেও হিম করে দিলো। আমাদের মতো শিক্ষিত মায়ের সন্তানের যদি এই অবস্থার মুখোমুখি পড়তে হয়, সেক্ষেত্রে প্রান্তিক মেয়ে সন্তানেরা আসলেই বেঁচে আছে কী করে?
সমাজে দুটি মানুষের বিয়ে আর তাদের বিচ্ছেদ স্বাভাবিক ঘটনা। কিন্ত্র এ ক্ষেত্রে দোষারোপের দায় নিতে হয় অধিকাংশ ক্ষেত্রে নারীদেরই। ফলে বয়োসন্ধিকালের যেই সময়ে একজন কন্যা সন্তানের মাকে প্রয়োজন, ঠিক সেই সময়েই তাকে মায়ের সংশ্রব থেকে সরিয়ে দেয়া হয়েছিলো, মা যেহেতু অন্যত্র বিয়ে করেছিলেন। সমস্যা নতুন সংসারেও হতে পারতো, মায়ের নতুন স্বামী কর্তৃক। তাহলে বিচ্ছেদ কী সমাধান নয়? দুই মনের অমিল দেখা দিলেও মানুষ সংসার করে যাবে? অথবা বিচ্ছেদের পর দোষারোপ ও প্রতিহিংসার মাঝে থেকে সন্তানের লালন-পালনে উভয়ের ভূমিকাকে অস্বীকার করে সন্তানটিকে ফেলে দেবে নিরাপত্তাহীন কোনো জগতে?
আমরা আসলে আধুনিক নাগরিক জীবনের আস্বাদ গ্রহণ করি সেকেলে চিন্তাধারা নিয়ে। বিচ্ছেদের মতো আধুনিক মানসিকতা থাকার মানুষের বিচ্ছেদ-পরবর্তী সমস্যা নিয়েও আধুনিক চিন্তার প্রয়োজন। অন্তত সন্তান যার থাকে। এক্ষেত্রে বাবা-মায়ের কাউন্সেলিং একটি অত্যন্ত জরুরি বিষয়। আর তা ব্যক্তিকেন্দ্রিক চিন্তা দিয়েই শুধু নয়, একেবারে রাষ্ট্রীয়ভাবেই এ বিষয়ে পদক্ষেপ নেয়া জরুরি হয়ে পড়েছে। সেই ষোড়শী মেয়েটি কার কাছে নিরাপদ? যে তার আপন বাবা তিনি নিরাপত্তা দিতে পারেননি বা তার বন্ধুর কি মেয়ে বা বোন নেই ? না হলে এমন অন্যায় কীভাবে করেন? চুপ থাকার সময় নয়। মুখ খোলার সময় এখন মুখোশধারীদের বিরুদ্ধে।
লেখক : শিক্ষক
আপনার মতামত লিখুন :