দৈনিক আমাদেরসময়: পেটের অসুখের প্রধান লক্ষণ হলো ব্যথা। কিন্তু এ ব্যথা কেন হয়? কারণ খুব সহজ। এখানে খাওয়াদাওয়া একটি গুরুত্বপুর্ণ কারণ। অধিকাংশ ক্ষেত্রে পেটব্যথার কারণ হিসেবে খাবার বিরাট ভূমিকা পালন করে থাকে। যত্রতত্র খাবার গ্রহণ, যেমন হোটেল বা রেস্টুরেন্টের খাবার, বিয়েবাড়ি, বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠানে সরবরাহকৃত খাবার; হাসপাতাল, এতিমখানার খাবারও কখনো কখনো ব্যাপকভাবে পেটের অসুখের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। এ ধরনের অসুখ সাধারণত ফুড পয়জনিং হিসেবে নির্ণীত হয়।
কেস হিস্ট্রি : রিমার (ছদ্মনাম) বয়স ১০ বছর। বান্ধবীর জন্মদিনে যোগদান করেছিল। পেটভরে সব খাবার গ্রহণও করে। অনুষ্ঠান শেষে অনেক রাতে বাসায় ফেরে। মাঝরাতে শুরু হয় পেটব্যথা। দেখা দেয় বমি বমি ভাব। কিছুক্ষণের মধ্যে প্রচণ্ড বমি শুরু হয়। সঙ্গে পানির মতো পাতলা পায়খানা, কাঁপুনি দিয়ে জ্বর। বাবা-মাসহ বাড়ির সবাই অস্থির। কূলকিনারা করতে পারছিল না। এত রাতে কাকে ডাকবে, কোথায় নিয়ে যাবে এ নিয়ে ভীষণ চিন্তায় পড়ে যায়। শেষে নিকটস্থ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে হাজির হন।
কর্তব্যরত চিকিৎসক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিলেন। ইনজেকশন দিলেন ব্যথা ও বমি বন্ধ হওয়ার। গ্যাস্ট্রিক মনে করে সিরাপও দিয়ে রোগীকে বাড়িতে পাঠিয়ে দিলেন। এতে সামান্য উপশম হলো। কিন্তু বিকেল থেকে আবার প্রচণ্ড ব্যথা, বমি, জ্বর ও ডায়রিয়ার মতো পাতলা পায়খানা শুরু হলো। বাবা-মা-আত্মীয়-স্বজন সবাই পেরেশান। আরও একদিন অপেক্ষা করল, যদি কোনোভাবে উপশম হয়।
উপসর্গ কমার কোনো সম্ভাবনা দেখল না। বাধ্য হয়ে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের সঙ্গে তারা যোগাযোগ করল পরামর্শের জন্য। চিকিৎসক দেখলেন। অ্যাপেনডিসাইটিস কিনা, পরীক্ষা করলেন। পাকস্থলীতে ইনফেকশান মনে হলো চিকিৎসকের। প্রয়োজনীয় পরীক্ষার পর অ্যান্টিবায়োটিক দিলেন এবং ২৪ ঘণ্টার মধ্যে রোগী সুস্থ হয়ে উঠল। এমন ঘটনা প্রায়ই ঘটে। আসলে চিকিৎসার জন্য যেটি গুরুত্বপূর্ণ ছিল তা হলো কেন এ রোগ হলো, তার কারণ বের করা। রোগের ইতিহাস রোগ নির্ণয়ের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ছিল। ইতিহাস হল সে অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেছে এবং খাবার খেয়েছে। অনুষ্ঠানের খাবারই ইনফেকশনের কারণ ছিল।
লেখক : অধ্যাপক, হেপাটোবিলিয়ারি প্যানক্রিয়েটিক অ্যান্ড লিভার ট্রান্সপ্লান্ট
সার্জারি বিভাগ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়
আপনার মতামত লিখুন :