সালেহ্ রনক: কোন মানুষ যখন দেখে শেখে, ঠকে শেখে সেই শিক্ষার চেয়ে বড় শিক্ষা আর নাই। আওয়ামী লীগ সভানেত্রী দলের দায়িত্বভার গ্রহণের পূর্বেই নিজের পিতাকে দেখেছেন কিভাবে একটি জাতির আশা, ভরসার স্থল হয়ে উঠতে হয়, কিভাবে একটি দলের সাধারণ কর্মী থেকে নেতা, জাতির পরম বন্ধু, বঙ্গবন্ধু হয়ে উঠতে হয়। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান এর মেয়ে হওয়ার সুবাদে আরও দেখেছেন কিভাবে কাছের মানুষ মুখোশধারী হয়ে পাশে ঘুরঘুর করে, কিভাবে মুশতাকেরা সময় সুযোগ বুঝে বিশ্বাস ঘাতকতা করে। দেশদ্রোহী, জাতির কুলাংগাররা যখন বাংলার অবিসংবাদিত নেতা, স্বাধীনতার স্বপ্নদ্রষ্টা, হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি, মহান পুরুষ শেখ মুজিবর রহমান কে সপরিবারে নির্মমভাবে হত্যা করে, সেদিন শেখ হাসিনা নির্মমতাকেও দেখেছেন। যখন লন্ডভন্ড আওয়ামী লীগ এর দায়িত্বভার নিজের কাঁধে তুলে নেন সেদিন কে আপন, কে পর তার শিক্ষাও পেয়েছেন, শিক্ষা নিয়েছেন কিভাবে দলকে সুসংগঠিত করতে হয়, একতাবদ্ধ করতে হয়।
সামরিক শাসকের বলয় থেকে দেশ, গণতন্ত্র যখন কিছুতেই মুক্ত হতে পারছিলো না তখন স্বৈরাচার এর পতনের আন্দোলনে ঐতিহাসিক ভূমিকা রাখার কারণে ১৯৯১ সালের সাধারণ নির্বাচনে ক্ষমতায় যাবার সকল উপলক্ষ্য তৈরি হবার পরও সেবার আওয়ামী লীগ যখন সরকার গঠনে ব্যর্থ হয় তখন শেখ হাসিনা শিক্ষা নেন মেজর জিয়া স্বাধীনতা বিরোধীদের যেভাবে রাজনীতিতে পুনর্বাসিত করে গেছেন এদেরকে শাস্তির আওতায় না এনে দেশের কাংখিত উন্নয়ন সম্ভব নয়। নইলে আন্দোলন সংগ্রামের ফসল বারে বারে এভাবেই বিএনপি কেড়ে নেবে। জামাতকে সঙ্গে নিয়ে ধর্মে নামে ব্যবসা করে। পরের বার পুরানো শিক্ষা কাজে লাগিয়ে কাঁটা দিয়ে কাঁটা তুললেন। বিএনপির ভোটারবিহীন নির্বাচনের কারণে জামাতকে সঙ্গে নিয়ে তীব্র আন্দোলনের মুখে সেদিনকার বিতর্কিত সরকারকে ক্ষমতা হস্তান্তরের বাধ্য করেন। ১৯৯৬ সালের জাতীয় নির্বাচনে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে সরকার গঠন করেন। সরকার পতনের আন্দোলন পর্যন্তই জামাতকে ভাঙ্গা কুলার মতো ব্যবহার করে ছুঁড়ে ফেলে দেন, এটা ছিলো অস্তিত্বের লড়াই। জামাত আওয়ামী লীগ এর সাথে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন করে জাতে উঠতে চেয়েছিল, স্বাধীনতা বিরোধীতার কলঙ্ক চিহ্ন মুছতে চেয়েছিল, কিন্তু তাদের সেই আশা পূরণ হয়নি। শেখ হাসিনা শিক্ষা নিয়েছিলেন যে, দেশদ্রোহী, স্বাধীনতা বিরোধীদের কখনো বিশ্বাস করা যায় না।
প্রথম হাসিনা সরকার তাদের মেয়াদ কালে উল্লেখযোগ্য প্রবৃদ্ধি অর্জনসহ কিছু যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত ও দেশের প্রভূত উন্নতি সাধন করেছিল। দেশ বিদেশে বেশ প্রশংসা কুড়িয়েছিল। সরকার কোন প্রকার সংঘাত ছাড়াই সরকারের পাঁচ বছরের মেয়াদ অতিক্রান্ত করে সুষ্টভাবে ক্ষমতা হস্তান্তর করেছিল। সেবার শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সরকার যে পরিমাণ উন্নয়ন কর্ম সংঘটিত করেছিল, তাতে করে শেখ হাসিনাসহ দল আওয়ামীলীগ আশাবাদী ছিল জনগণ সরকারের দক্ষতা ও দেশের সামগ্রিক উন্নয়নকে বিবেচনা করে তাদের আবার নির্বাচিত করবে। কিন্তু ধর্মের লেবাস পড়ে, রাজনীতিতে ধর্মকে টেনে এনে ও ধর্মভিত্তিক ও স্বাধীনতা বিরোধী রাজনৈতিক দল জামাতকে সঙ্গে করে নির্বাচনের বৈতরণী পার হয় বিএনপি। আওয়ামী লীগ যেখানে জামাতের সাথে আন্দোলনের স্বার্থে রাজনৈতিক ঐক্য করেছিল ,বিএনপি সেখানে জামাতকে শুধু তাদের প্রধান মিত্রই বানিয়ে ক্ষান্ত হয়নি, সরকারেরও অংশীদারও করে নিয়েছে। তুলে দিয়েছিল স্বাধীনতা বিরোধীদের গাড়িতে জাতীয় পতাকা, যে পতাকার জন্য ৩০ লাখ মানুষ শহিদ হয়েছিলেন। শেখ হাসিনা শিক্ষা নিলেন, শুধু উন্নয়ন দিয়ে ক্ষমতা আসা যাবে না, যত দিন না পর্যন্ত ধর্ম ভিত্তিক রাজনৈতি কূটকৌশল সমূলে বিনাশ না করা যাবে, স্বাধীনতা বিরোধীদের এদেশে রাজনীতি করার অধিকার কেড়ে নেয়া না হবে। নইলে স্বাধীনতা বিরোধীজোট এদেশকে বার বার পিছনেই টেনে নিয়ে যাবে। তখন খালেদা জিয়ার সরকার দুর্নীতিতে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হলো। দেশের আপামর জনগণ ঐ সরকারের হাত থেকে বাঁচার জন্য, হাওয়া ভবনের অত্যাচার, অবিচার থেকে রক্ষা পেতে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে শামিল হলো, তাদেরকে ক্ষমতাচ্যুত করল। কিন্তু সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার দুই বছর ক্ষমতা কুক্ষিগত করে রাখল।
শেখ হাসিনার ঐতিহাসিক নেতৃত্বে ২০০৮ সালের জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগ আবারও ক্ষমতায় ফিরল। বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গড়ার প্রত্যয় নিয়ে রাজনীতিতে আসা শেখ হাসিনা এবার আরো পরিণত, আরো কৌশলী। অতীত শিক্ষা তাকে আরো সাহসী ও দক্ষ করে তুলল। তিনি এবার দেশের সামগ্রিক উন্নয়নকে প্রধান লক্ষ্য করে সরকার গঠন করলেন। দেশের রাজনীতিতে গলার কাঁটা হয়ে ওঠা স্বৈরশাসক এরশাদকেও জোটের অংশ ও সরকারে ঠাঁই করে দিলেন। শেখ হাসিনা জানতেন এই দুষ্ট গলগ্রহকে ছেড়ে দিলে বিএনপি তাকে জামাতের মতো করে আশ্রয় দিবে। কারণ বিএনপি ততদিনে স্বাধীনতা বিরোধী ও রাষ্ট্রদ্রোহীদের নিরাপদ আশ্রয়স্থল হয়ে উঠেছে। রাষ্ট্র পরিচালনা মসৃণ করতে এরশাদকে তাই সাথে রাখার কৌশল গ্রহণ করলেন। আর এতে সাপও মরল লাঠিও ভাঙ্গল না। দৃঢ়চেতা মনোবল, অসীম সাহস আর সাংবিধানিক ধারবাহিকতা রক্ষায় ২০১৪ সালের জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলো ও শেখ হাসিনা তৃতীয়বারের মতো সরকার প্রধানের দায়িত্ব গ্রহন করেন।
শেখ হাসিনার নেতৃত্বে গত দশ বছরে বিতর্কিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার আইন বাতিলসহ যুদ্বাপরাধীদের শাস্তি নিশ্চিত করে। যুদ্ধাপরাধী দল হিসাবে জামাতের নিবন্ধন বাতিলের প্রক্রিয়া শুরু করে যা কিছুদিন আগে নির্বাচন কমিশন কর্তৃক বাতিলও হয়। বিএনপি সরকারের আমলে সংঘটিত দশ ট্রাক অস্ত্র মামলাসহ আওয়ামী লীগকে নিশ্চিহ্ন করার জন্য একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার রায় কার্যকর করে। গত নির্বাচনের আগে আন্দোলনের নামে দেশব্যাপী বিএনপি জামাতের পেট্রোল বোমা ও জ্বালাও পোড়াও কুরাজনীতিকে শক্তহাতে দমন করেন। শেখ হাসিনার একক নেতৃত্বে সরকারের সাফল্য দেশের গন্ডি পেরিয়ে বিদেশেও সমানভাবে সমাদৃত হয়। শিক্ষা, চিকিৎসা, যোগাযোগসহ দেশের আর্থ সামাজিক খাতে প্রভূত উন্নয়ন সাধিত হয়। জনৈক আন্তর্জাতিক দালালের প্ররোচনায় বৈশ্বিক রাজনৈতিক কূটচালে বিশ্বব্যাংক যখন পদ্মা সেতু থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয় এবং সেই আশাভঙ্গের ভেলায় দাঁড়িয়ে শেখ হাসিনা যখন বলে উঠলেন, ‘পদ্মা সেতু আমরা নিজেরাই করব’। সেদিনই বিশ্ব রাজনীতিতে শেখ হাসিনার দীপ্ত পায়ের আওয়াজ শোনা গিয়েছিল। ধীরে ধীরে শেখ হাসিনা জায়গা করে নেন বিশ্ব নেতাদের কাতারে।
স্বজন হারানোর ব্যথা, আত্মত্যাগ আর অসময় থেকে পাওয়া শিক্ষা শেখ হাসিনাকে পরশ পাথর বানিয়ে তোলে। তাই তো দেশের উন্নয়নে যেখানে হাত দিয়েছেন সেখানেই সোনা ফলেছে। দেশ পরিচালনায় শেখ হাসিনার একক নেতৃত্ব, বিচক্ষণতা ও দক্ষতায় বিশ্বকে করে তোলে মুগ্ধ। দাতা সংস্থাগুলোর আস্থা অর্জন করে দুর্বার গতিতে এগিয়ে চলে দেশ। তাইতো ৫ জানুয়ারির মন্দ নির্বাচনের পরও দাতা দেশগুলোর সমর্থন নিয়ে পাঁচ বছর দেশ পরিচালনা করে নির্বিঘ্নে ।
শেখ হাসিনার মেধা, প্রজ্ঞা ও ক্যারিশম্যাটিক নেতৃত্বে দেশ মধ্যম আয়ের দেশে পা রাখে, মধ্যম আয়ের দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশের তালিকায় স্থান করে নেয়, খাদ্য ও মাছে স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়, বিদ্যুত উৎপাদনে বিপ্লব ঘটে, বৈদেশিক রেমিটেন্স একের পর এক রেকর্ড গড়ে, জাতীয় প্রবৃদ্ধি ৭ এর গড়ে ওঠে, মাথাপিছু আয় বাড়ে, যা স্বাধীনতা লাভের পর যেকোন সরকারের হিসাবে সর্বোচ্চ।
দেশকে একটু সাজিয়ে গুছিয়ে নিয়ে শেখ হাসিনা দৃষ্টিপাত করেন শক্তিশালী গণতন্ত্র ও স্থায়ী নির্বাচন ব্যবস্থা সৃষ্টিতে। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের নামে অরাজনৈতিক সরকারের হাতে দেশ পরিচালনার দায়িত্ব দেয়াকে অন্যায় ও অবিবেচক মনে করে তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতি বাতিল করেন। অন্যান্য গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের মতো নির্বাচিত সরকারের অধীনে নির্বাচন পরিচালনার আইন পাশ করেন। শেখ হাসিনা মনে করেন, দেশ যেখানে এগিয়ে যাচ্ছে নিরপেক্ষ সরকারের দোহাই দিয়ে পিছনে ফিরে যাওয়ার কোন মানে হয় না, মানে হয়না এর হাত ধরে অরাজনৈতিক লোকদের ক্ষমতায় বসানো। তিনি নির্বাচনের প্রশ্নে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে আস্থা অর্জনের উদ্যোগ গ্রহণ করেন। কিন্তু দেশের প্রধান বিরোধীদল তা আমলে না নিয়ে আন্দোলেনর পথ বেছে নেয়, জ্বালাও পোড়াও করে দেশের অপূরণীয় ক্ষতি সাধন করে। কিন্তু শেখ হাসিনাকে সিদ্ধান্ত থেকে এক চুলও নড়াতে না পেরে যখন বিদেশীদের দ্বারে দ্বারে ঘুরতে থাকে, দেশের অন্যতম রাজনৈতিক দল বিএনপি ও তাদের জোট। প্রচন্ড দৃঢ়চেতা শেখ হাসিনা সেদিনের বিদেশী রাষ্ট্রগুলোর চাপের মুখে থেকেও বলেন, আমাদের দেশের নিজস্ব বিষয়ে কারো নাক গলানো চলবে না।
রাষ্ট্র পরিচালনার দীর্ঘ পথ পরিক্রমায় বঙ্গবন্ধু কন্যা যতনা রাষ্ট্রনায়ক তারচেয়ে বেশি জনগণের মানুষ, সেবক হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। নিজেকে নিয়ে গেছেন দেশের সকল রাজনৈতিক নেতাদের উর্ধ্বে, যেখানে ধরাছোঁয়ার মতো কেউই নেই। শিক্ষা অনুরাগী, সংস্কৃতমনা ও ধার্মিক শেখ হাসিনা শিক্ষক, কবি, সাহিত্যিক, সাংবাদিক, শিল্পী ও ধর্মপ্রাণ মানুষের একই সুতায় গেঁথেছেন নিপুনভাবে। কাওমী শিক্ষায় শিক্ষিত বৃহৎ জনগোষ্ঠিকে মূল স্রোতধারায় এনে সম্পৃক্ত করেছেন। জঙ্গীদের অভায়ারণ্য হয়ে ওঠা বাংলাদেশের হারানো পরিচয় উদ্ধার করে প্রমাণ রেখেছেন এই সরকার জঙ্গী নির্মূলে কতটা আন্তরিক ও দক্ষ। দিয়েছেন মাদ্রাসা শিক্ষায় আধুনিকতার ছোঁয়া, পাঠ্যসূচীতে নিয়ে এসেছেন আমূল পরিবর্তন। কার্যকরী সব সিদ্ধান্ত আর সাহসী নেতৃত্বে দিন দিন নিজেকে নিয়ে গেছেন উঁচু থেকে উঁচুতে, হয়ে উঠেছেন দেশের প্রগতিশীল মানুষসহ দল ও জোটের একমাত্র ভরসার স্থল। মমতা আর ভালোবাসা দানের ক্ষেত্রে তৈরি করেছেন নতুন এক দৃষ্টান্ত। তাইতো বিপদগ্রস্ত কিংবা মৃত্যুপথযাত্রী কারো চিকিৎসার শেষ ভরসাস্থল হয়ে উঠেছেন তিনি, তা সে তার আদর্শের হোক কিংবা ভিন্ন দলের। পরম মমতায় বুকে আগলে রাখার অসম্ভব গুণ তার নেতৃত্বকে দিয়েছে ভিন্ন মাত্রা। সেই মানদন্ডে শুধু শেখ হাসিনাই দাঁড়িয়ে, ধারে কাছে আর কেউই নেই ।
শেখ হাসিনা যেন মমতার আধার। বিশ্বের তৃতীয় ক্ষমতাশীল নারী নেতৃত্বের চেয়ে মানুষ শেখ হাসিনাই বেশি করে পরিচিত। আর এ কারণেই বাংলাদেশ দারিদ্র থেকে উঠে আসার সংগ্রামরত একটি দেশ হওয়া সত্ত্বেও, নানা অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালনরত অবস্থায় মিয়ানমারের রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেয়ার সাহস দেখিয়েছেন। সারা বিশ্বের কাছে প্রমাণ করেছেন, ‘মানবতা’র শক্তি বড় শক্তি। শেখ হাসিনা প্রমাণ করেছেন মানবিক হবার পূর্বশর্ত ধনী হওয়া নয়। মিায়ানমারের রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসে সেই দিনগুলোতে, নির্বিচারে গণহত্যার সেই দিনগুলোতে শেখ হাসিনা ইচ্ছে করলে সীমানা সীল করতে পারতেন, যেমনটি ভারত করেছে। কিন্তু মানবতার নেত্রী শেখ হাসিনার সেটা করেননি। তাইতো বিশ্ব আজ তাকে মানবতার মা নামে জানে । নানা রকম উস্কানি ও চাপ সত্ত্বেও কোন প্রকার যুদ্ধে না জড়িয়ে শান্তিপূর্ণভাবে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবর্তনের পদক্ষেপ গ্রহণ করতে সমর্থ হয়।
শেখ হাসিনা নিজ গুণেই নিজেই একটি দল, একটি প্রতিষ্ঠান, একটি ব্রান্ড হয়ে ওঠেছেন। সরকারের অনেক সীমাবদ্ধতার পরেও সততার মানদন্ডে শেখ হাসিনা পরীক্ষিত ও নির্ভেজাল। একক জনপ্রিয়তায় সবাইকে ছাড়িয়ে। একাদশ জাতীয় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দেশী বিদেশী বিভিন্ন সংস্থা কর্তৃক পরিচালিত জরিপে শেখ হাসিনার নেতৃত্ব ও তার একক জনপ্রিয়তায় প্রতিচ্ছবিই বের হয়ে এসেছে এবং আওয়ামী সরকারের টানা তৃতীয়বার ক্ষমতায় আসার প্রধান উপলক্ষ্য ও কারণ হিসাবে শেখা হাসিনার সততা ও জনপ্রিয়তাকেই দেখানো হয়েছে। যার নেতৃত্বের মুগ্ধতা ছড়িয়েছে বিশ্বব্যাপী । পাকিস্তানকে তো আক্ষেপ করে বলতে দেখা গেছে যে, তারা বাংলাদেশ হতে চায়। এখানেই নেতা হিসাবে শেখ হাসিনার অর্জনকে ভালো করে চেনা যায়। তাইতো বিশ্ব নেতৃত্ব শেখ হাসিনাকে আবারও রাষ্ট্রক্ষমতায় দেখতে চায়, দেশের জনগণ দলকে ছাপিয়ে শেখ হাসিনাতে আস্থা রাখে।
মহাকাশে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট স্থাপন, ডিজিটাল বাংলাদেশের বাস্তব রূপায়ন, পদ্মা সেতু, মেট্রো রেল, নদীর তলদেশে টানেল, বহু ফ্লাইওভার, রেল যোগাযোগের যুগান্তকারী উন্নয়ন, ওভার ব্রিজ, মহাসড়কগুলোর অকল্পনীয় উন্নয়ন, গ্রামীণ অর্থনীতির আমূল পরিবর্তনসহ দৃশ্যমান সকল উন্নয়নকে সামনে রেখে শেখ হাসিনা টানা তৃতীয়বারের মতো সরকার গঠন তথা গণতন্ত্র সুপ্রতিষ্ঠিত করার সংকল্পে নির্ধারিত সময়ে সকল দলের অংশগ্রহণে নির্বাচন আয়োজনের প্রস্তুুতি গ্রহণ করেছেন। বিরোধীপক্ষ তখনো পিছনে ফিরে যাওয়ার চেষ্টায় রত। দেশের সাধারণ মানুষ ও দাতা রাষ্ট্রগুলো নতুন করে অশনিসংকেত দেখতে পাচ্ছিলেন। কিন্তু শেখ হাসিনার দৃঢ়তা ও যুক্তির কাছে দাতা দেশগুলো হার মানতে বাধ্য হয়। শেখ হাসিনা তাদের আশ্বস্ত করেন, নির্বাচন সুষ্ঠ হবে ও সকল দলের অংশগ্রহণে হবে। যেখানে সংলাপের কোন সম্ভবনাই ছিল না সেখানে সকল দলকে সংলাপের দুয়ার খুলে দেন। যেখানে ডাঃ কামাল হোসেন এর নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্যজোটও তার যুক্তি ও দর্শনের কাছে হার মেনে নির্বাচনের ট্রেনে চড়ে বসেন যেখানে দেশের অন্যতম বৃহত্তম দল বিএনপিও আছে। সংলাপের জন্য যাওয়া অনেক নেতা নিজেদের ব্যক্তিগত দাবীদাওয়া নিয়ে তাঁর দ্বারস্থ হন যা তিনি হাসিমুখে শোনেন ও পথ বাতলে দেন। সারা জীবন বিএনপি করা অভিনেতা আমজাদ হোসেন এর সকল চিকিৎসার ব্যয়ভার গ্রহণ করেন ও সংশ্লিষ্ট সবাইকে এই ব্যাপারে পদক্ষেপ নিতে বলেন ।
কোথায় নেই তিনি? নির্বাচনের মনোনয়নের ক্ষেত্রেও রেখেছেন মুন্সিয়ানার ছাপ। শুধু নিজেকেই বিশ্ব নেতৃত্বের কাতারে শামিল করেননি, তৈরি করেছেন নতুন নতুন নেতৃত্ব যারা আগামীর আওয়ামী লীগ তথা দেশের নেতৃত্ব দেবে। উল্লেখযোগ্য সংখ্যক বিতর্কিত ও অযোগ্যদের বাদ দিয়েছেন। মনোনয়নের বিচারে প্রায় ৯৫% যোগ্য ও দক্ষ প্রার্থীকে মনোনয়ন দিয়েছেন। বাকি ৫% কৌশতগত কারণে ও নির্বাচনে জয়লাভ করে উন্নয়নের চলমানধারা বজায় রাখতে মনোনয়ন দিয়েছেন। তারপরও বাকি ৫% মনোনয়নের মানদন্ডে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সাথে পার্থক্য করলে আকাশ আর পাতাল।
শেখ হাসিনা দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে সকলের প্রিয় আপাই রয়ে গেলেন। মমতাভরা হৃদয়ের অধিকারী এমন প্রধানমন্ত্রী এর আগে কে কবে দেখেছে? সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম জীবন মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে থাকার পরও তাকেই মনোনয়ন দেয়ার জন্য দৃঢ় সঙ্কল্প। কতটুকু ভালোবাসা থাকলে সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের জীবদ্দশায় অন্য কাউকে তার আসনে প্রার্থী হিসাবে তিনি মেনে নিতে পারছেন না। মনোনয়নের মাঠে মমতাময়ী নেত্রী শেখ হাসিনার দৃষ্টির আড়ালে যেতে পারেনি মনোনয়ন বঞ্চিতরা। মনোনয়ন বঞ্চিত প্রভাবশালী নেতাদের গণভবনে ডেকে পাঠান । শেখ হাসিনা তাদের স্বান্তনা দেন ও দলের স্বার্থে কাজ করার আহবান জানান। তিনি তাদের আস্বস্ত করেন দল ক্ষমতায় এলে তাদের যথাযথ মূল্যায়ন করবেন। জবাবে তারা সকল ভেদাভেদ ভুলে ঐক্যবদ্ধ হয়ে নৌকার পক্ষে কাজ করার অঙ্গীকার করেন। এখানেই শেখ হাসিনা নামক পরশ পাথর কার্যকরী হয়ে ওঠে। জোটের অন্যান্য শরিকদের বুদ্ধিমত্তার সাথে কৌশলের মিশেলে গুণমুগ্ধ রেখে আসন বন্টন করেন, নতুন শরিকদেরও তৃপ্ত করে এক ছাতার নিচে আশ্রয় দেন। তাই যখন এমপি হওয়ায় সকল যোগ্যতা থাকার পরও আওয়ামী লীগ এর বেশ কয়েকজন নেতা যখন বলেন, এমপি হওয়ার চেয়ে শেখ হাসিনার নিবেদিত কর্মী হওয়া অনেক সন্মানের ও গৌরবের তখন শেখ হাসিনার নেতৃত্বের উচ্চতাকেই দিকনির্দেশ করে।
হ্যাট্রিক সরকার গঠনের স্বপ্ন নিয়ে শেখ হাসিনা বেশ দৃঢ়সঙ্কল্প ও আত্মবিশ্বাসী। একাদশ জাতীয় নির্বাচনে শেখ হাসিনা আসলেই স্পেশাল কেউ একজন। শেখ হাসিনার ব্যক্তি সততা, দেশপ্রেম, দেশের উন্নয়ন ঘটানোর যথাযথ যোগ্যতা ও দক্ষতা তাকে ব্রান্ডে পরিনত করেছে। ইইউ এবং জার্মানি যখন বলে বাংলাদেশ নিজেই সুষ্ঠু নির্বাচন করার যোগ্যতা অর্জন করেছে, বিদেশী পর্যবেক্ষক পাঠানোর কোন যৌক্তিকতা নেই, তখন শেখ হাসিনার ব্রান্ডিং ভ্যালু অনুধাবন করা যায়।
লেখক : শিক্ষক, সমাজকর্মী
আপনার মতামত লিখুন :