শিরোনাম
◈ ইরানের ইস্পাহানে ইসরায়েলের ড্রোন হামলা, ৩টি ভূপাতিত ◈ জাতিসংঘে সদস্যপদ প্রস্তাবে মার্কিন ভেটোর নিন্দা ফিলিস্তিনের, লজ্জাজনক বলল তুরস্ক ◈ স্কুল পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের গল্প-প্রবন্ধ নিয়ে সাময়িকী প্রকাশনা করবে বাংলা একাডেমি ◈ দক্ষিণ ভারতে ইন্ডিয়া জোটের কাছে গো-হারা হারবে বিজেপি: রেভান্ত রেড্ডি ◈ আবারও বাড়লো স্বর্ণের দাম  ◈ ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিনয় মোহন কোয়াত্রার ঢাকা সফর স্থগিত ◈ চিকিৎসকদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে সংসদে আইন পাশ করব: স্বাস্থ্যমন্ত্রী ◈ বিএনপি নেতাকর্মীদের জামিন না দেওয়াকে কর্মসূচিতে পরিণত করেছে সরকার: মির্জা ফখরুল ◈ ব্রিটিশ হাইকমিশনারের সঙ্গে বিএনপি নেতাদের বৈঠক ◈ মিয়ানমার সেনার ওপর নিষেধাজ্ঞা থাকায় তাদের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করা সম্ভব হচ্ছে না: সেনা প্রধান

প্রকাশিত : ২৮ নভেম্বর, ২০১৮, ০৯:৪৫ সকাল
আপডেট : ২৮ নভেম্বর, ২০১৮, ০৯:৪৫ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

কতটা পেশাদার আমাদের গণমাধ্যম ?

মো. হাবিবুল আলম : ক্যাবল টিভি বা ইন্টারনেট তখনও দেশে বিকশিত হয়নি। সেই সময়ে বিনোদন কিংবা খবরের জন্য অধিকাংশ দর্শক, শ্রোতার ভরসা ছিল বিবিসি বা বিটিভি। কালের পরিক্রমায় প্রেক্ষাপট বদলেছে। গণমাধ্যমের বিকাশে রাষ্ট্র ইতিবাচক হয়েছে। ফলে বেড়েছে গণমাধ্যমের সংখ্যা। চ্যানেল আই, এটিএন বাংলা বা একুশে টেলিভিশনের আর্বিভাব কেবল বিনোদনই নয় সংবাদ পরিবেশনায়ও এনেছিল বৈচিত্র্য। একুশের সংবাদ বা অনুষ্ঠানের প্রশংসা এখনও করেন অনেক দর্শক। সম্প্রচার মাধ্যম্যের পাশাপাশি মুদ্রন মাধ্যমও পাঠকের আস্থা অর্জন করতে পেরেছিল। প্রথম আলো, ডেইলি স্টার বা বাংলাদেশ প্রতিদিনের লক্ষ লক্ষ গ্রাহক যেন আস্থারই অপর নাম !

পরিবর্তন অনিবার্য। সময়ের সাথে তাল না মেলালে যেকেউ অতল গহবরে হারিয়ে যাবে। একসময়ের মোবাইল বাজারে একচ্ছত্র আধিপত্য করা নকিয়া প্রায় হারিয়ে গেছে সময়ের সাথে তাল মেলাতে না পেরে। তবে আশার কথা আমাদের দেশের মিডিয়ার মালিকরা পরিবর্তনকে ইতিবাচকভাবে নিয়েছেন। ফলে একটা সময় অনলাইন নিউজপোর্টাল শুরু করার কথা ভাবতে শুরু করেন মালিকরা। যাত্রা শুরু করে বিডিনিউজডটকম এবং বাংলানিউজ২৪ডটকম। বাড়তে থাকে নতুন পাঠক। বর্তমানের কোটি কোটি ইন্টারনেট গ্রাহক অনলাইন পোর্টালগুলোর প্রসারে ইতিবাচক ভূমিকা রাখছেন। উল্লেখ্য, চলতি বছরের জুন মাসে বিবিসি বাংলার এক প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রায় ২০০০ অনলাইন নিউজ পোর্টাল তথ্য মন্ত্রণলায়ে নিবন্ধিত হয়েছে।

সাদা চোখে অনলাইনের এই বিকাশ প্রশংসার দাবি রাখে। কিন্তু প্রকৃত চিত্রটি ভিন্ন। চিত্রটা গণমাধ্যমের মান ও পেশাদারিত্বের। পুরাতন সংবাদ একই শিরোণামে অথবা কিছুটা পরিবর্তন করে কিংবা অন্য পোর্টালের সংবাদ নিজেদের বলে চালিয়ে দেয়া হচ্ছে। জীবিত ব্যক্তিকেও বানানো হয়েছে মৃত! আর এসবই হয়েছে আমাদের অনলাইনের কল্যাণে ! খুব সম্প্রতি গুজব ছড়ানো হয়েছে অভিনেতা আমজাদ হোসেনের মৃত্যু নিয়ে। একাধিক অনলাইন গুরুতর অসুস্থ এই অভিনেতা মারা গেছেন বলে সংবাদ পরিবেশন করলেও পরবর্তীতে জানা যায় আমজাদ হোসেন মারা যাবার বিষয়টি কেবলই গুজব। যখন এই গুজব ছড়ায় প্রবীণ এই অভিনেতাকে তখন উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশ নিয়ে যাওয়ার প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছিল।

কেবল আমজাদ হোসেনই নন যিনি এই ভূয়া সংবাদে কবলে পড়লেন। বর্ষীয়াণ অভিনেতা শামসুজ্জামানও এই ভূয়া সংবাদের শিকার হয়েছেন। এই অভিনেতা মারা গেছেন এমন সংবাদও প্রচার করে তীব্র সমালোচিত হয় চ্যানেল ৭১। বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট চুরি হয়ে গেছে এমন একটি সংবাদ সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। পরবর্তীতে সরকারের পক্ষ থেকে বিবৃতি দিয়ে জানানো হয় বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট চুরির কোন ঘটনাই ঘটেনি বরং এই বিষয় নিয়ে ভূয়া সংবাদ প্রকাশ হয়েছে। সম্প্রতি একজন নেতা অভিযোগ করেছেন, রাজনৈতিক দলে যোগ দেয়া নিয়ে ভূল সংবাদ পরিবেশন করেছে একটি সংবাদমাধ্যম।

ভূয়া সংবাদের পাশাপাশি অনলাইন মাধ্যমের আরেকটি প্রধান সমস্যা হল তথ্য ও উপাত্ত নিখুতভাবে পর্যালোচনা না করা। দ্রুত সংবাদ প্রকাশ করার প্রবণতা থেকেই এই সমস্যা তৈরি হয়। যেমন, যে ব্যক্তি ২০১৬ সালে মারা গেছেন সেই ব্যক্তিকে নিয়ে ২০১৮ সালে কেন সংবাদ প্রকাশ হবে ? অথচ এই ব্যক্তিকে নিয়ে ‘ সেই গোল্ডম্যানের করুণ মৃত্যু ’ শীর্ষক একটি সংবাদ ১২ নভেম্বর ২০১৮ প্রকাশ করে জাগোনিউজ২৪ডটকম। সংবাদটি পড়লে যেকোন পাঠকই বিভ্রান্ত হবে। অনলাইনের এই ক্রমবিকাশ একই সংবাদ একাধিকবার প্রকাশের প্রবণতাকেও বাড়িয়ে দিচ্ছে। চলতি মাসে ( নভেম্বরে) একটি উল্লেখযোগ্য খবর ছিল, ঢাকার আকাশে হঠাৎ মুখোমুখি দুই বিমান।

অন্যান্য অনলাইনের মত ১ নভেম্বর যুগান্তর অনলাইন এই সংবাদ প্রকাশ করে। অবাক করার বিষয় হল এক মাস না যেতেই ২৮ নভেম্বর এই সংবাদ আবারও টাইমলাইনে পোস্ট করা হয়। তবে একই সংবাদ একাধিকবার প্রকাশের ঘটনা আগেও ঘটেছে। মাস কয়েক আগে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর বিদেশ সফরে বাংলাদেশ বিমানের একজন বিমানবালাকে চিহিৃত করা হয় যিনি ফøাইটের ২৪ ঘন্টা আগে অ্যালকোহল নিয়েছিলেন এবং রির্পোটেড হবার পরেও ভিআইপি ফ্লাইটে দায়িত্ব পালন করেছেন। অভিযুক্ত এই বিমানবালাকে নিয়ে বিমানবালা মাসুমার অন্ধকার জগতের খুজে গোয়েন্দারা শীর্ষক সংবাদ সেপ্টেম্বর মাসে প্রকাশিত হলেও একই সংবাদ পুনরায় নভেম্বরে প্রকাশ করে জাগো নিউজ২৪ডটকম। পুরনো সংবাদ বারবার প্রচারে পিছিয়ে নেই এনটিভি অনলাইনও। স্টিম বান গার্ল বিকামস ইন্টারনেট সেনসেশন শীর্ষক সংবাদটি এনটিভি অনলাইন প্রকাশ হয় ২২ অক্টোবর ও ৯ সেপ্টেম্বর ২০১৮।

পুরাতন সংবাদ কিংবা ক্যাপশনের সাথে সংবাদের অমিল এসব অপেশাদার আচরণের সাথে যুক্ত হয়েছে অন্য পোর্টালের সংবাদ নিজের বলে চালিয়ে দেয়া। ২৭ নভেম্বর ২০১৮ তারিখে বাংলাব্রিটিউন ৫০০ কিলো জুড়ে থাকা গাছ থেকে ১২৭ কেজি পেরেক তুললেন যশোরের রাজমিস্ত্রি শিরোণামে একটি সংবাদ নিজেদের পোর্টালে পোস্ট করে। একটু খটকা লাগল। মনে হল এমন একটি সংবাদ কোথাও দেখেছি। শেষ পর্যন্ত পাওয়া গেল একই তারিখে গাছ বন্ধু ওয়াাহিদ সরকার শীর্র্ষক একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে বিবিসি বাংলা, যা কিছুটা ভাষাগত পরিবর্তন করে বাংলাব্রিটিউনও একই প্রতিবেদন প্রকাশ করে। এবার আ’লীগ কি তরুণদের ভোট পাবে বা যে কারণে মেয়েদের কাছে গোপনাঙ্গের ছবি পাঠায় পুরুষ এই শিরোণামে যুগান্তর অনলাইন এবং জাগোনিউজ২৪ডটকম সংবাদ প্রকাশিত হয় নভেম্বর মাসে, যা ছিল মূলত বিবিসি বাংলার প্রতিবেদন।

ক্যাপশনের সাথে সংবাদের মিল নেই এমন কান্ডও ঘটাচ্ছে কিছু সংবাদমাধ্যম। সম্প্রতি ঢাকা ট্রিবিউনের একটি সংবাদ ইভিএম নিয়ে হলেও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করা সংবাদের ক্যাপশনে লিখা হয়েছে ৩০ জেলা থেকে ৯০ জন অলিম্পিয়াডে জন্য নির্বাচিত হয়েছেন, যা মূল প্রতিবেদনের সাথে পুরোটাই অসঙ্গতিপূর্ণ।

অনলাইনের যুগে সবার আগে কে সংবাদ পরিবেশন করবে তা নিয়ে তীব্র প্রতিযোগীতা চলে। এই প্রতিযোগীতা তখনই ভাল যখন পেশাদারিত্ব বজায় থাকে। কিন্তু এই প্রতিযোগীতার নামে জীবিত ব্যক্তিকে মৃত দেখানো, ২ বছর আগের ঘটনা সংবাদ হিসেবে চালিয়ে দেয়া, একই সংবাদ বারবার পরিবেশ করা, অন্যের সংবাদ নিজের বলে চালিয়ে দেওয়া পেশাদারিত্বের পরিচয় হতে পারে না বরং পাঠকের সাথে প্রতারণাই শামিল ! আরটিভি, এনটিভি, জাগোনিউজের মত শীর্ষ অনলাইনের পেশাদারিত্বের এই অবস্থা হলে বাকি অনলাইনগুলোর কী হবে তা বলার অপেক্ষা রাখে না!

টিভি বা পত্রিকা যাইহোক, সম্পাদকীয় নীতিমালায় যদি সমস্যা থাকে তখনই জীবিত ব্যক্তিকে মৃত দেখানো, ২ বছর আগের ঘটনা সংবাদ হিসেবে চালিয়ে দেয়া, একই সংবাদ বারবার পরিবেশ করা, অন্যের সংবাদ নিজের বলে চালিয়ে দেওয়ার মত ঘটনা ঘটবেই। এসব অপেশাদার আচরণ ঠেকাতে এবং গণমাধ্যমের গ্রহণযোগ্যতা ধরে রাখতে হলে সম্পাদকীয় নীতিমালাসহ অন্যান্য গাইডলাইনগুলো শক্তিশালী এবং আরও বাস্তবমূখী হওয়া প্রয়োজন। লেখক: সাবেক শিক্ষার্থী, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়