রবিন আকরাম : ক্ষমতার বাইরে থাকলে সব দলই সাধু ও মিষ্টি কথা বলে জনগণের মন ভোলাতে চায়। কিন্তু ক্ষমতায় গেলেই আমরা তাদের ভিন্ন চেহারায় আবির্ভূত হতে দেখি বলে মন্তব্য করেছেন থম আলোর যুগ্ম সম্পাদক ও কবি সোহরাব হাসান।
বুধবার দৈনিক প্রথম আলোতে তিনি এসব কথা লিখেছেন।
সোহরাব হাসানের ভাষায়, বিএনপির নেতারা রাজনৈতিক সংস্কারের অনেক কথা বলেছিলেন, তারা প্রধানমন্ত্রীর একক ক্ষমতা খর্ব করে রাষ্ট্রপতির হাতেও কিছু ক্ষমতা রাখার অঙ্গীকার করেছিলেন। দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে বুদ্ধিজীবীদের জ্ঞান-মেধাকে কাজে লাগানোর কথা বলেছিলেন। বিএনপির নেতারা এ–ও বলার চেষ্টা করেছিলেন যে তারা ক্ষমতায় এলে প্রতিহিংসার রাজনীতিকে চিরতরে বিদায় জানানো হবে। সমঝোতার ভিত্তিতে দেশ পরিচালনা করবেন। ক্ষমতার বাইরে থাকলে সব দলই এ ধরনের সাধু ও মিষ্টি কথা বলে জনগণের মন ভোলাতে চায়। কিন্তু ক্ষমতায় গেলেই আমরা তাদের ভিন্ন চেহারায় আবির্ভূত হতে দেখি।
বিএনপির সেই ঘোষণার পর বুড়িগঙ্গায় অনেক পানি গড়িয়েছে। খালেদা জিয়া এখন কারাগারে; বিএনপির দাবি, রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণেই তাকে জেলে রাখা হয়েছে। হাইকোর্টের সর্বশেষ রায়ে বলা হয়েছে, দুই বছরের বেশি শাস্তি হয়েছে—এমন কোনো দণ্ডিত ব্যক্তি নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না, যদি আপিল বিভাগ শাস্তি স্থগিত না করেন। নির্বাচনের আগে খালেদা জিয়ার ক্ষেত্রে শাস্তি স্থগিত হওয়ার সম্ভাবনা কম। অর্থাৎ তার নির্বাচনে অংশগ্রহণের বিষয়টি অনেকটাই অনিশ্চিত। এখন বিএনপির নেতারা খালেদা জিয়ার মুক্তির বিষয়টিই প্রধান নির্বাচনী অ্যাজেন্ডায় পরিণত করেন কি না, সেটাই এখন দেখার বিষয়।
বিএনপির শুভানুধ্যায়ীদের দাবি, ১২ বছর ক্ষমতার বাইরে থাকায় নেতা-কর্মীদের বড় শিক্ষা হয়েছে এবং অতীতে যেসব ভুল করেছেন, ভবিষ্যতে আর করবেন না। বিএনপির নির্বাচনে যাওয়ার সিদ্ধান্ত এবং ড. কামালের নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সঙ্গে জোট গঠন করায় এই শুভানুধ্যায়ীদের অনেকে আশাবাদী হয়েছিলেন। ভেবেছিলেন বিএনপির বোধোদয় ঘটেছে, তারা হঠকারী লাইন থেকে সরে আসবে। প্রতিদিন টেলিভিশনে বিএনপির তরুণ তুর্কিরা যেভাবে সাচ্চা গণতন্ত্রের সবক দিয়ে যাচ্ছেন, তাতে মনে হয়েছিল, এবারে সত্যি সত্যি বিএনপির নীতিনির্ধারকেরা অতীতের ভুল থেকে শিক্ষা নেবেন।
কিন্তু বিএনপির মনোনয়ন তালিকা আমাদের খুবই হতাশ করেছে। ক্ষমতায় থাকতে যারা নানা অপকর্ম করেছিলেন, যারা জঙ্গিবাদে মদদ জুগিয়েছিলেন, দুর্নীতি ও সন্ত্রাসের পৃষ্ঠপোষক হিসেবে চিহ্নিত হয়েছিলেন, মনোনয়ন তালিকায় তাদের নামও আছে। তালিকায় আছেন যুদ্ধাপরাধী হিসেবে দণ্ডিত ব্যক্তির সন্তানও। আবার মামলা বা অন্য কোনো কারণে যাদের মনোনয়ন দেওয়া যায়নি, তাদের স্ত্রী ও সন্তানদের মনোনয়ন দিয়ে ‘পুরস্কৃত’ করা হয়েছে। আওয়ামী লীগেও এমনটি হয়েছে।
আপনার মতামত লিখুন :