শিরোনাম
◈ কিছুটা কমেছে পেঁয়াজ ও সবজির দাম, বেড়েছে আলুর ◈ দেশের ৯২ শতাংশ মানুষ দ্বিতীয় কোনো ভাষা জানেন না, সময় এসেছে তৃতীয় ভাষার ◈ ভুটানের রাজার সঙ্গে থিম্পু পৌঁছেছেন তথ্য প্রতিমন্ত্রী ◈ চট্টগ্রামের জুতার কারখানার আগুন নিয়ন্ত্রণে ◈ জিয়াও কখনো স্বাধীনতার ঘোষক দাবি করেনি, বিএনপি নেতারা যেভাবে করছে: ড. হাছান মাহমুদ ◈ আওয়ামী লীগ সবচেয়ে বড় ভারতীয় পণ্য: গয়েশ্বর ◈ সন্ত্রাসীদের ওপর ভর করে দেশ চালাচ্ছে সরকার: রিজভী ◈ ইফতার পার্টিতে আওয়ামী লীগের চরিত্রহনন করছে বিএনপি: কাদের ◈ বাংলাদেশে কারাবন্দী পোশাক শ্রমিকদের মুক্তির আহ্বান যুক্তরাষ্ট্রের ফ্যাশন লবি’র ◈ দক্ষিণ আফ্রিকায় সেতু থেকে তীর্থ যাত্রীবাহী বাস খাদে, নিহত ৪৫

প্রকাশিত : ২৮ নভেম্বর, ২০১৮, ০৯:৫৮ সকাল
আপডেট : ২৮ নভেম্বর, ২০১৮, ০৯:৫৮ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

‘আসল ও বিকল্প’ প্রার্থী নিয়ে শঙ্কা

ডেস্ক রিপোর্ট : কৌশলগত কারণে আপাতত বেশির ভাগ আসনে একাধিক প্রার্থী মনোনয়নের চিঠি দেওয়া হলেও প্রত্যাহারের সময় বিএনপি ও নেতৃত্বাধীন জোটে কিছুটা সমস্যা তৈরি হতে পারে। কারণ বিএনপি প্রার্থীদের মধ্যে কে আসল এবং কে বিকল্প প্রার্থী, তা এখনো নিশ্চিত হয়নি। অন্যদিকে বিএনপি ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের বৈঠকে গতকালও আসন বণ্টনের বিষয়টি নিশ্চিত করা যায়নি। সিদ্ধান্ত হয়েছে, আপাতত ফ্রন্টের সব দলের প্রার্থীরা তাঁদের মনোনয়নপত্র জমা দেবেন। আর বিষয়টি নিষ্পত্তি হবে মনোনয়ন প্রত্যাহারের শেষ দিন আগামী ৯ ডিসেম্বরের আগে।

কিন্তু এমন পরিস্থিতিতে বেশির ভাগ আসনে এজেন্টদের তালিকা তৈরি, স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ ও নির্বাচন পরিচালনা কমিটি গঠনসহ সার্বিক নির্বাচনী প্রস্তুতি পিছিয়ে যাচ্ছে বলে বিএনপি জোটের প্রার্থীদের মধ্যে আলোচনা শুরু হয়েছে। পাশাপাশি চিঠি পাওয়া প্রার্থীদের মধ্যেও একধরনের অস্থিরতা

সৃষ্টি হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। কারণ চিঠি পাওয়ার পর বেশির ভাগ প্রার্থীর মধ্যেই চূড়ান্ত মনোনয়নের ব্যাপারে আকাঙ্ক্ষা তৈরি হয়েছে। এ অবস্থায় একজনকে চূড়ান্ত মনোনয়ন দেওয়ার পর অন্যরা ক্ষুব্ধ বা বিদ্রোহী হয়ে উঠতে পারেন বলে একধরনের শঙ্কা তৈরি হয়েছে বিএনপির মধ্যে।

যদিও রাষ্ট্রবিজ্ঞানী অধ্যাপক এমাজউদ্দীন আহমদ মনে করেন, বিকল্প প্রার্থী রাখায় কিছু সমস্যা তৈরি হলেও সার্বিকভাবে এমন কৌশল ছাড়া বিএনপির উপায় ছিল না। তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশন এবং সরকারের ব্যাপারে বিএনপি জোটের অনাস্থার কারণেই বিএনপিকে এমন কৌশল নিতে হয়েছে। তা ছাড়া এক যুগ ক্ষমতার বাইরে থাকার কারণেও বিকল্প প্রার্থী হিসেবে চিঠি দিয়ে দলের কিছু নেতাকে খুশি করতে হয়েছে বলে মনে করেন বিএনপিপন্থী বলে পরিচিত সুধীসমাজের এই প্রতিনিধি। তিনি বলেন, কিছু অসুবিধা সত্ত্বেও ৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত ধৈর্য ধরে বিএনপির প্রার্থীদের অপেক্ষা করতে হবে।

নির্বাচন কমিশন ও সরকারের প্রতি আস্থার অভাবের কারণে বিএনপিকে বিকল্প প্রার্থী রাখার কৌশল নিতে হয়েছে বলে জানান দলটির ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শাহজাহান। তিনি স্বীকার করেন, এর ফলে কিছু সমস্যা তৈরি হয়েছে। যেমন আসলে শেষ পর্যন্ত প্রার্থী কে থাকবেন এটি নিশ্চিত হওয়ার জন্য অনেককেই ৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। শাহজাহান আরো বলেন, নির্বাচন প্রস্তুতিসহ অন্যান্য বিষয়ও সামনে রয়েছে। কিন্তু এর পরও এ সমস্যা কাটিয়ে ওঠা যাবে বলে মনে করেন নোয়াখালী-৪ আসন থেকে মনোনয়ন পাওয়া এই নেতা।

ঢাকা, খুলনা, ময়মনসিংহ বিভাগসহ নির্বাচনী আসনগুলোতে বিএনপির মনোনয়নের চিঠি পাওয়া একাধিক সম্ভাব্য প্রার্থীর সঙ্গে আলাপ করে গতকাল তাঁদের মধ্যে অস্বস্তির কথা জানা গেছে। যদিও দলের চাপের মধ্যে পড়ার ভয়ে তাঁরা নাম প্রকাশ করতে রাজি হননি। কালের কণ্ঠকে তাঁরা বলেন, একাধিক প্রার্থীকে চিঠি দেওয়ার ঘটনাকে কেন্দ্র করে ইতিমধ্যে একাধিক গ্রুপও তৈরি হয়েছে। কারণ কে আসল এবং কে বিকল্প প্রার্থী তা এখনো স্পষ্ট না হওয়ায় সবাই মনে করছেন, চূড়ান্ত মনোনয়ন তিনিই পেতে পারেন। আর এমন আশা থেকেই লন্ডনে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ ঢাকায় সিনিয়র নেতাদের কাছে আবারও তদবির-লবিংয়ের সুযোগ তৈরি হয়েছে বলে জানান তাঁরা।

রাজনৈতিক দলগুলোর চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা ঘোষণার পর সাধারণত তদবির-লবিং কমে যায়। কিন্তু বিএনপির ক্ষেত্রে এখনো ওই লবিংয়ের সুযোগ আগামী ৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত থাকল।

চিঠি পাওয়া প্রার্থীরা নিজ নিজ সমর্থক গোষ্ঠী বা গ্রুপকে নিয়েই মনোনয়নপত্র জমা দিতে রিটার্নিং অফিসারের কার্যালয়ে যাবেন। কিন্তু মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিন একজনকে চূড়ান্ত মনোনয়নের চিঠি দেওয়া হবে। আর এ সময় বাদ পড়া প্রার্থী ও তাঁদের সমর্থকদের মধ্যে হতাশা তৈরি হওয়া স্বাভাবিক বলে মনে করা হচ্ছে। পাশাপাশি মনোনয়নকে কেন্দ্র করে ওই সময় পর্যন্ত দলের মধ্যে বিভক্তিও থাকবে, এমন ধারণাও আছে অনেকের মধ্যে।

অন্যদিকে নিশ্চিত মনোনয়ন পাবেন এমন প্রার্থীদের মধ্যেও এমন পরিস্থিতি কারণে অস্বস্তি তৈরি হয়েছে। কারণ প্রয়োজনীয় নির্বাচনী প্রস্তুতি তাঁরা নিতে পারছেন না। যদিও কেউ কেউ মনোনয়নের প্রাথমিক চিঠি পেয়েও খুশি হয়েছেন বলে জানা গেছে।

নির্বাচন কমিশনের তফসিল অনুযায়ী মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ সময় আজ বুধবার। আর মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ সময় আগামী ৯ ডিসেম্বর। আসল ও বিকল্প একাধিক প্রার্থীকে চিঠি দেওয়া হলেও বিএনপির ছাড় দেওয়া আসনে জোটের কোন প্রার্থী চূড়ান্ত মনোনয়ন পাচ্ছেন তা কার্যত ওই দিনই ঠিক হবে। জানা গেছে, এ ক্ষেত্রে বিএনপির সঙ্গে সংকট ২০ দলীয় জোট শরিকদের তুলনায় নতুন গঠিত ঐক্যজোট শরিকদের সঙ্গে বেশি। কারণ নতুন এই জোটের শরিকরা তাদের সামর্থ্যের চেয়ে বেশি আসন দাবি করছে বলে মনে করে বিএনপি।

অনিবন্ধিত দল মাহমুদুর রহমান মান্নার নাগরিক ঐক্যকে গতকাল ৯টি আসনে মনোনয়ন দেওয়ার কথা জানা গেলেও ওই সব আসনে আবার বিএনপির অনেককে মনোনয়নপত্র জমা দিতে বলা হয়েছে। এদিকে মান্নার দল ৯টি আসন পেলে অন্য দলগুলোর আরো বেশি আসন পাওয়া উচিত বলে ওই দলগুলো মনে করে। মৌখিকভাবে এলডিপিকে চারটি আসনের বিষয়ে সবুজ সংকেত দেওয়া হলেও তারা সেটি মানতে চাইছে না। অন্যদিকে জেএসডি, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ ও গণফোরামের সঙ্গে নিষ্পত্তির এখনো কাছাকাছি যাওয়া যায়নি। জেএসডির প্রায় দেড় শ মনোনয়ন ফরম বিক্রি হলেও এ অবস্থায় দলটির পক্ষে ২৫ থেকে ৩০ জন প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দেবেন বলে জানা গেছে। অন্যদিকে গণফোরামও আপাতত মনোনয়নপত্র জমা দিয়ে রাখবে বলে জানিয়েছেন দলটির নির্বাহী সভাপতি অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী। কালের কণ্ঠকে তিনি বলেন, আগামী দু-এক দিনের মধ্যেই আসন বণ্টনের বিষয়টি নিষ্পত্তি হতে পারে। গতকাল ড. কামাল হোসেনের বাসায় বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলামের সঙ্গে বৈঠকের পর তিনি বলেন, সময়ের স্বল্পতার কারণে তাঁরা এখন দলীয়ভাবে মনোনয়নপত্র জমা দেবেন। পরে সমন্বয় করে প্রার্থিতা প্রত্যাহারের আগেই আসন বণ্টন হবে বলে জানান তিনি। জানা গেছে, গতকাল বৈঠকে ড. কামাল হোসেন গণফোরামের জন্য ১৩টি আসন চেয়ে বিএনপি মহাসচিবের হাতে তালিকা তুলে দেন। এর মধ্যে কমপক্ষে ৯টি আসনে নিশ্চিত মনোনয়ন প্রত্যাশা করছে দলটি।

বিএনপির নির্ভরযোগ্য সূত্র জানিয়েছে, নিজেরা ২৪০টি আসন রেখে বাকি ৬০টি আসন তারা শরিকদের মধ্যে ভাগ করে দিতে চাইছে। এর মধ্যে ২০ দলকে ১৫ থেকে ২০টি এবং অন্যদের ৪০টি আসন ছাড়ার চিন্তা আছে। তবে গণফোরামের সঙ্গে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের গতকালের বৈঠকেও বিষয়টি নিষ্পত্তি করা যায়নি।

সোমবার প্রথম দিনে শতাধিক আসনে বিএনপির মনোনয়নের চিঠি দেওয়া হলেও এর মধ্যে অন্তত ৭৬টি আসনে দুজন করে মনোনয়নের চিঠি দেওয়া হয়েছে। আর তিনজন করে মনোনয়নের চিঠি দেওয়া হয়েছে চারটি আসনে। আর একজন প্রার্থী বা এককভাবে চিঠি দেওয়া হয়েছে স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ ও মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ মাত্র ছয়জনকে। অবশ্য একক প্রার্থীর কিছু নিশ্চিত আসনেও বিকল্প হিসেবে সংশ্লিষ্ট প্রার্থীর স্ত্রী ও পরিবারের সদস্যদের চিঠি দেওয়া হয়েছে। গতকাল চিঠি পাওয়া বেশির ভাগ আসনেও একাধিক বিকল্প প্রার্থী রাখা হয়েছে।

সূত্র মতে, ঋণখেলাপি, মামলা ও তথ্যগত ভুলসহ অন্য যেকোনো কারণে মনোনয়নপত্র বাতিল হলে সে ক্ষেত্রে অন্য একজন দলীয় বা জোট প্রার্থীর প্রার্থিতা যাতে শেষ পর্যন্ত টিকে থাকে—এমন কৌশলের কারণেই বেশির ভাগ আসনে বিএনপির বিকল্প একাধিক প্রার্থী রাখা হয়েছে। এ ছাড়া মনোনয়নের চিঠির পর বঞ্চিতদের তাত্ক্ষণিক বিদ্রোহ ঠেকানো এবং অন্য দলে যোগদান করে মনোনয়ন পাওয়া ঠেকানোর কৌশলও এর আরেকটি কারণ। দু-একটি জায়গায় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের মনোনয়নবঞ্চিতদের বিদ্রোহ চোখে পড়লেও বিএনপিতে গতকাল পর্যন্ত এমন ঘটনা দেখা যায়নি। তবে চূড়ান্ত প্রার্থী ঘোষণার পর কী হবে এ নিয়ে আলোচনা আছে।

খুলনা বিভাগ বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক নজরুল ইসলাম মঞ্জু মনে করেন, চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুখের দিকে তাকিয়ে এবার বিএনপি বা জোট নেতাকর্মীরা বিশৃঙ্খলা করবে না। বরং তারা সর্বোচ্চ ত্যাগ করবে। মঞ্জুর মতে, কারণ তারা জানে, এবারের নির্বাচন তাদের জন্য যেমন চ্যালেঞ্জের, তেমনি অস্তিত্বের লড়াই। তিনি বলেন, ‘আশা করছি চূড়ান্ত মনোনয়নের পরও ঝামেলা হবে না। বিভক্তি ঠেকাতে খুলনায় দলীয় বৈঠক করে আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, একসঙ্গে সবাই মনোনয়নপত্র জমা দিতে যাব।’
সূত্র : কালের কন্ঠ

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়