সুজন কৈরী: রাজধানী মোহাম্মদপুর, ভাটারা ও কলাবাগান থেকে জেএমবির ৮ সদস্যকে আটক করেছে র্যাব। মো. আরাফাত আজম (৩০), রাশেদ আলম বাঁধন (২৮), মীর আফজাল আলী (৩৭), মাহাদী হাসান (২৩), রাদিউজ্জামান হাওলাদার অনিক (২৭), জালাল উদ্দিন শোভন (২৮), জারির তাইসির (২৬) ও আসিফুর রহমান (২৮)। রোববার যৌথ অভিযান চালিয়ে তাদের আটক তরে র্যাব ১ ও ২ নম্বর ব্যাটালিয়ন। সংগঠনটি র্যাডিক্যাল ইয়ুথ গ্রুপের
ব্যানারে সংগঠিত হচ্ছিল বলে জানিয়েছে র্যাব।
সোমবার কাওরান বাজারে র্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বাহিনীর গণমাধ্যম শাখার পরিচালক মুফতি মাহমুদ খান বলেন, আটককৃতদের কাছ থেকে উগ্রবাদী বই ও ল্যাপটপ জব্দ করা হয়েছে। গ্রুপের অন্যতম লক্ষ্য বিভিন্ন পেশাজীবী, আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত তরুণ, শিক্ষক এবং সমাজের বিত্তবান ও মধ্যবিত্ত পরিবারে সদস্যরা। বিগত সময়ে অপেক্ষাকৃত মাদ্রাসাভিত্তিক তরুণদের জঙ্গিবাদে আকৃষ্টের চেষ্টা করা হলেও বর্তমানে এ অবস্থার পরিবর্তন এসেছে। আর্থিকভাবে স্বচ্ছলতা ফেরানোর জন্য পেশাজীবীদের দলে ভেড়াতে কাজ করছে জঙ্গিরা। আটককৃতদের জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া তথ্যের বরাত দিয়ে র্যাবের এ কর্মকর্তা বলেন, মোহাম্মদপুর এলাকা ঘিরে সংগঠিত হতে থাকলেও বর্তমানে গ্রুপটির নেটওয়ার্ক কলাবাগান ও ভাটারা এলাকাসহ ঢাকার অন্যান্য এলাকাতেও বিস্তার ঘটেছে। এই গ্রুপটিতে প্রায় ৩০-৩৫ জন সদস্য যুক্ত রয়েছেন। গ্রুপে একজন দায়িত্বশীল ব্যক্তি রয়েছেন এবং পালাক্রমে সদস্যদের ভেতর থেকে একেকজন আমিরের দায়িত্ব পালন করে থাকেন। একেকজন আমির ৬ থেকে ৭ মাসের জন্য দায়িত্ব পালন করেন। আটকদের মধ্যে শোভন, আফজাল ও মাহাদী আমিরের দায়িত্ব পালন করেছেন। বর্তমানে গ্রুপটি আমিরের দায়িত্বে রয়েছেন মীর আফজাল আলী। আমিরের দায়িত্ব সম্পর্কে মুফতি মাহমুদ খান বলেন, আমিরের দায়িত্ব হলো- গোপন বৈঠক সমূহ আয়োজন করা এবং দায়িত্বশীল ব্যক্তির নির্দেশনা অপরাপর সদস্যদের কাছে পৌঁছে দেওয়া। জঙ্গি বাশারুজ্জামানের হাত ধরে গ্রুপটি গঠিত হয় ২০১৪ সালে। মোহাম্মদপুরের একটি মসজিদকে কেন্দ্র করে গ্রুপটি গড়ে ওঠে। এই গ্রুপের অনেকেই বাশারুজ্জামান চকলেটের সান্নিধ্যে এসেছিল। সরাসরি বাশারুজ্জামান চকলেটের মাধ্যমে জঙ্গিবাদে এসছে এমন অনেকের মধ্যে মাহাদী, শোভন ও বাধন র্যাবের হাতে আটক হয়েছেন। জঙ্গি বাশারুজ্জামান আত্মগোপনে যাওয়ার পর সংগঠনটির কার্যক্রম কিছুদিন বন্ধ থাকে। পরে গত দেড় বছর ধরে আবার সক্রিয় হয়ে উঠেছে। তারা নিয়মিত (সপ্তাহে অন্তত একটি) গোপন বৈঠক করতো।
র্যাব জানায়, মীর আফজাল আলী বর্তমানে আইডিবিতে আইটি শাখায় কর্মরত। তিনি সাতক্ষীরা সরকারি কলেজ থেকে ম্যানেজমেন্টে মাস্টার্স সম্পন্ন করেছেন। বিগত প্রায় ৮ বছর যাবৎ মোহাম্মদপুর এলাকায় বসবাস করছেন এবং চার বছর আগে জঙ্গিবাদে উদ্বুদ্ধ হন। মাহাদী হাসান পেশায় একজন ছাত্র। সে বর্তমানে ধানমণ্ডির একটি প্রাইভেট ইউনিভার্সিটিতে বিএসসি তৃতীয় বর্ষে অধ্যয়নরত। সে ২০১৪/১৫ সালে জঙ্গি বাশারুজ্জামানের সান্নিধ্যে এসে জঙ্গিবাদে জড়িত হন।
রাশেদ আলম বাঁধন উত্তরার ইনসাইড ইন্টারন্যাশনার স্কুলের গণিত বিভাগের শিক্ষক। তিনি ইস্টার্ন ইউনিভার্সিটি থেকে ইইইতে পড়াশোনা করেছেন। বাশারুজ্জামান চকলেটের মাধ্যমে তিনি জঙ্গিবাদে উদ্বুদ্ধ হন। সে তার পরিচিত ও সংগঠনের বিভিন্ন সদস্যদের কাছ থেকে অর্থ সংগ্রহ করে ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বরে মধ্যপ্রাচ্যে এবং ২০১৭ ও ২০১৮ সালে কতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অর্থ পাঠিয়েছিলো।
জারির তাইসির মানারাত ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির বিবিএ বিভাগের শিক্ষার্থী। তিনি তার ঘনিষ্ট সহযোগী (র্যাবের হাতে আগে গ্রেফতার) সিয়ামের মাধ্যমে জঙ্গিবাদে উদ্বুদ্ধ হয়েছিলেন। সিয়ামকে র্যাব-১১ এর আগে গ্রেফতার করলেও বর্তমানে তিনি বাইরে আছেন। তার সঙ্গে জারির তাইসিরের গত সপ্তাহে বৈঠক হয়েছে। গ্রেফতার হওয়া আসিফুর রহমান একজন ফ্রি ল্যান্সার ও ওয়েব ডিজাইনার। তিনি নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটিতে কম্পিউটার সায়েন্সে ভর্তি হন। তবে শেষ পর্যন্ত তিনি পরীক্ষায় কৃতকার্য হতে পারেননি। তিনি ইয়ুথ গ্রুপের অপর এক সদস্যের মাধ্যমে জঙ্গিবাদে উদ্বুদ্ধ হন।
আরাফাত আজম পেশায় একজন সফট্ওয়ার ইঞ্জিনিয়ার। তিনি ২০১৬-তে নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটি থেকে সিএসই সম্পন্ন করে বর্তমানে পাঠাওতে আইটি এক্সপার্ট হিসেবে চাকুরি করছেন। আইইউবিতে মাস্টার্সে তৃতীয় সেমিস্টার পর্যন্ত অধ্যয়ন করেছিলেন। তিনিও জসিম উদ্দিন রাহমানির ওয়াজ ও অনলাইনের মাধ্যমে উগ্রবাদে উদ্বুদ্ধ হয়। র্যাডিক্যাল ই্য়ুথ গ্রুপের অপর সদস্য রাদিউজ্জামান হাওলাদার অনিক উত্তরার ইনসাইড ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের গণিত বিভাগের শিক্ষক। তিনি মূলত ধর্মীয় বই ও অনলাইনের মাধ্যমে উগ্রবাদে উদ্বুদ্ধ হন বলে জাননিয়েছে র্যাব। জালাল উদ্দিন শোভন এইচএসসি পর্যন্ত অধ্যয়ন করেছেন। তিনি ২০১৪ সালে জঙ্গি বাশারুজ্জামান চকলেটের মাধ্যমে জেএমবিতে যুক্ত হন।
আপনার মতামত লিখুন :