বণিক বার্তা : কুইক রেন্টাল ভিত্তিতে ২০১০ সাল থেকে এগ্রিকো ইন্টারন্যাশনালের ঘোড়াশাল ১৪৫ মেগাওয়াট কেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ কিনছে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড। সম্প্রতি এ কেন্দ্রটির সঙ্গে পিডিবির চুক্তি শেষ হয়েছে। এবার বিদ্যুৎকেন্দ্রটি ঘোড়াশাল থেকে স্থানান্তর করে দ্বীপ জেলা ভোলায় নিতে চায় এগ্রিকো। এজন্য আরো পাঁচ বছর কুইক রেন্টাল ভিত্তিতে বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য বিদ্যুৎ বিভাগ ও বিপিডিবির কাছে প্রস্তাব দিয়েছে কোম্পানিটি। তবে এ বিষয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি বিদ্যুৎ বিভাগ।
বিদ্যুৎ বিভাগ সূত্রে জানা যায়, কুইক রেন্টাল ভিত্তিতে পাঁচ বছর বিদ্যুৎ সরবরাহের চুক্তিতে ২০১০ সালের আগস্টে উৎপাদন শুরু করে এগ্রিকোর ঘোড়াশাল ১৪৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্র। এরপর ২০১৫ সালে কেন্দ্রটির মেয়াদ আরো তিন বছর বাড়ানো হয়, যা সম্প্রতি শেষ হয়েছে।
এদিকে কিছুদিন আগে ভোলা সদরের ভেদুরিয়ায় নতুন একটি গ্যাসকূপের সন্ধান পায় বাপেক্স। ওই কূপে পাঁচ ট্রিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস মজুদ থাকতে পারে বলে রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাটির ধারণা। জ্বালানির এ সম্ভাবনা মাথায় রেখেই ঘোড়াশালের বিদ্যুৎকেন্দ্র ভোলায় স্থানান্তরের আগ্রহ জানিয়ে বিদ্যুৎ বিভাগে প্রস্তাব দেয় এগ্রিকো। আগামী পাঁচ বছরের জন্য রেন্টাল বিদ্যুৎ উৎপাদনের আগ্রহ প্রকাশ করেছে এ ব্রিটিশ কোম্পানি।
সূত্র জানায়, ঘোড়াশালের কেন্দ্রটিসহ দেশে এগ্রিকোর বিদ্যুৎকেন্দ্র রয়েছে পাঁচটি। ঘোড়াশালে সরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রের বড় একটি ইউনিট চালু হওয়ায় সেখানে জ্বালানি সংকট দেখা দিয়েছে। যতটুকু গ্যাস মিলছে, তা সরকারি কেন্দ্রে বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য দেয়া হচ্ছে। এ কারণে এগ্রিকো তাদের বিদ্যুৎকেন্দ্রটি সরিয়ে নিতে চাচ্ছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিপিডিবির চেয়ারম্যান প্রকৌশলী খালেদ মাহমুদ বলেন, তারা প্রস্তাব দিয়েছে। তবে এ বিষয়ে আর কোনো অগ্রগতি নেই। কারণ সংশ্লিষ্ট এলাকায় পাওয়ার ইভাকুয়েশনের ব্যবস্থা ও পাওয়ার ডিমান্ড ইত্যাদি বিবেচনা করেই সাধারণত সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
বাপেক্স সূত্রে জানা যায়, বর্তমানে শাহবাজপুর গ্যাসক্ষেত্রের তিনটি কূপ থেকে গ্যাস উত্তোলন হচ্ছে। এ তিনটি কূপের মোট সক্ষমতা পাঁচ কোটি ঘনফুট। তবে বর্তমানে উত্তোলন হচ্ছে ৪ দশমিক ৪ কোটি ঘনফুট গ্যাস। উত্তোলিত গ্যাস ভোলার দুটি রেন্টাল ও একটি সরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রে সরবরাহ করা হচ্ছে। এসব কেন্দ্রেই চাহিদামতো জ্বালানি দিতে পারছে না সুন্দরবন গ্যাস বিতরণ কোম্পানি লিমিটেড। তিনটি বিদ্যুৎকেন্দ্রের পাশাপাশি ভোলায় সুন্দরবন গ্যাস কোম্পানির তিনটি শিল্প, ১ হাজার ২০০ আবাসিক ও তিনটি বাণিজ্যিক গ্রাহক রয়েছে।
বিদ্যমান বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর পাশাপাশি ভোলায় নির্মাণাধীন রয়েছে ভারতের সাপুরজি পালোনজি ইনফ্রাস্ট্রাকচার লিমিটেডের একটি কম্বাইন্ড সাইকেল পাওয়ার প্লান্ট। ২২০ মেগাওয়াট উৎপাদন সক্ষমতার কেন্দ্রটির নির্মাণ ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে শেষ হওয়ার কথা। তখন এ কেন্দ্রটির জন্য প্রয়োজন হবে বিদ্যমান চাহিদার পাশাপাশি আরো সাড়ে তিন কোটি ঘনফুট গ্যাস। এর সঙ্গে নতুন করে এগ্রিকোর ১৪৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্র যোগ হলে গ্যাসের চাহিদা বেড়ে দাঁড়াবে ৬ কোটি ঘনফুটে।
জানতে চাইলে সুন্দরবন গ্যাস কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোস্তাক আহমেদ বলেন, আমরা এখনো এমন কোনো প্রস্তাবের কথা শুনিনি। তবে বর্তমানে যে পরিমাণ গ্যাস উৎপাদন হয়, তা থেকে নতুন কোনো বিদ্যুৎকেন্দ্রে সরবরাহ করা সম্ভব হবে না। তবে ভেদুরিয়ায় আবিষ্কৃত কূপ থেকে উৎপাদন শুরু হলে হয়তো দেয়া যাবে।
বিপিডিবি সূত্রে জানা যায়, ভোলায় বিদ্যমান তিনটি বিদ্যুৎকেন্দ্রের মোট উৎপাদনক্ষমতা ৩২২ মেগাওয়াট। এসব কেন্দ্র থেকে উৎপাদন হয় দৈনিক ২২৮ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ। জেলায় বর্তমানে বিদ্যুতের আবাসিক গ্রাহক ১ লাখ ২৯ হাজার, বাণিজ্যিক গ্রাহক ১৩ হাজার ৫০ ও শিল্প গ্রাহক ৫৩২। সব ধরনের গ্রাহক মিলিয়ে জেলায় বিদ্যুতের মোট চাহিদা ৪০-৫০ মেগাওয়াট। এর বাইরে উৎপাদিত বিদ্যুতের অবশিষ্ট মেগাওয়াট জাতীয় গ্রিডে দেয়া হয়।
আপনার মতামত লিখুন :