আলী রীয়াজের ফেসবুক থেকে : নির্বাচনের পর্যবেক্ষকদেরকে ‘মূর্তি’র ভূমিকা পালনের জন্যে নির্বাচন কমিশনের সচিবের নির্দেশনা দেবার পরে এখন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নূরুল হুদা নির্বাহী ম্যজিষ্ট্রেটদের ভোট কেন্দ্রে প্রবেশের ওপরে কার্যত নিষেধাজ্ঞাই আরোপ করেছেন। শনিবার (২৪ নভেম্বর) নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটদের উদ্দেশে ব্রিফিংয়ে সিইসি প্রিজাইডিং কর্মকর্তার অনুমতি ছাড়া ভোটকেন্দ্রের ভেতরে প্রবেশ না করতে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটদের নির্দেশনা দিয়েছেন বলে গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে জানা গেছে।
সিইসি বলেন, নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষার কাজে আপনারা প্রিজাইডিং কর্মকর্তাকে সহযোগিতা করবেন। কিন্তু প্রিজাইডিং কর্মকর্তার অনুমতি ছাড়া ভোটকেন্দ্রের ভেতরে প্রবেশ করবেন না। এই নির্দেশনা কি অতীতে নির্বাচনের সময়ে ম্যাজিস্ট্রেটদের ভূমিকার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ? অতীতে নির্বাচনে কেন্দ্রে গিয়ে ম্যাজিস্ট্রেটরা ভোট গণনা থেকে শুরু করে ফলাফল ঘোষণা ও নিরাপদে কেন্দ্র ত্যাগে সরাসরি আইনানুগ সাহায্য সহযোগিতা করেছেন। এখন এই ব্যবস্থার বদল ঘটার কারণ কী হতে পারে?
কমিশনের এই ব্রিফিংয়ে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা, ময়মনসিংহ, কুমিল্লা, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর, কিশোরগঞ্জ, শেরপুরসহ কয়েকটি জেলার ২২৮ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট। এই ব্রিফিং অনুষ্ঠান নিয়েও কমিশন সাংবাদিকদের সঙ্গে যে আচরণ করেছেন তা অভূতপূর্ব। এই ব্রিফিং উপলক্ষে সাংবাদিকদের ডেকে এনে বের করে দিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এর আগে রিটার্নিং কর্মকর্তা, সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা, স্থানীয় পর্যবেক্ষক, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিশেষ সভায় ভিডিও ফুটেজ ধারণ, ছবি নেওয়া, সিইসি, কমিশনার বা সচিবের বক্তব্য ধারণ করতে পারতেন সংবাদকর্মীরা। তবে শনিবার প্রথমবারের মতো রীতি ভেঙে অনুষ্ঠানের শুরুতেই সাংবাদিকদের বের করে দেওয়া হয়। পর্যবেক্ষকদের মূর্তিতে রূপান্তর ঘটলে এবং ম্যাজিস্ট্রেটদের কেন্দ্রে প্রবেশের অনুমাদন না থাকলে কেন্দ্রে কোনো ধরণের অনিয়ম ঘটলে তা কে মোকাবেলা করবে? কেন্দ্রে তা হলে কারা থাকবেন? অনিয়ম ঘটলে কিভাবে বাইরে জানা যাবে? যেহেতু পর্যবেক্ষকদের হাতে মোবাইল রাখা এবং ছবি তোলার নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে সেই ক্ষেত্রে কোনো ধরণের অনিয়মের অভিযোগ তোলা হলে তা প্রমাণের উপায় যে থাকবেনা সেটা সহজেই বোঝা যায়।
এছাড়া শনিবার প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি)র কিছু বক্তব্যও কমিশনের কার্যক্রমকে প্রশ্নবিদ্ধ করেই চলেছে। সিইসি দাবি করেছেন যে, সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ভোটের মাঠে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড বিদ্যমান। বিরোধী দলের কর্মীদের অবস্থা কী সেটা সকলেই জানেন। এই বিষয়ে ঐক্যফ্রন্টের নেতার, বিশেষত বিএনপি বারবার অভিযোগ করেছে। তাঁদের এই বক্তব্যকে কেবল রাজনৈতিক বলে নাকচ করে দেয়া যেতো যদি না তার বাস্তব প্রমাণ থাকতো। অবস্থা এমন যে, শনিবার রাজধানীতে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ (বিআইআইএসএস) মিলনায়তনে সেন্টার ফর গভার্নেন্স স্টাডিজ (সিজিএস) আয়োজিত ‘ভোটের রাজনীতি এবং জনগণের ভোটাধিকার’ শীর্ষক সেমিনারের সম্মানিত অতিথি ও বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি ব্যারিস্টার আমীর-উল ইসলাম বলেন, ‘পুলিশ ও প্রশাসন রাজনৈতিক দল দ্বারা পরিচালিত হচ্ছে। শত শত লোক হাইকোর্ট প্রাঙ্গণে এসে দাঁড়িয়ে আছে জামিনের জন্য। তাঁরা নির্বাচন করবেন, না জেলে যাবেন?’ অথচ সিইসি সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘পুলিশ আমাদের কথা মান্য করছে। আমাদের কথার বাইরে বিনা কারণে পুলিশ কাউকে গ্রেফতার করে না, করছে না।’ তা হলে কি এই দাঁড়াচ্ছে যে, কমিশনের নির্দেশেই আমির-উল-ইসলামের কথিত ‘শত শত লোক’ আদালতের প্রাঙ্গণে? কেননা সিইসি বলেছেন, ‘পুলিশ কমিশনের নিয়ন্ত্রণে আছে। পুলিশকে কমিশন নির্দেশনা দিয়েছে। তারা আমাদের কথা দিয়েছে এবং সে অনুযায়ী তারা কাজ করছে’। এই সব ঘটনার পরে সেন্টার ফর গভার্নেন্স স্টাডিজ-এর আয়োজিত অনুষ্ঠানে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা এম হাফিজ উদ্দিন খান যা বলেছেন তাঁর সঙ্গে দ্বিমতের সুযোগ অত্যন্ত কম। এম হাফিজ উদ্দিন খান বলেছেন, 'এ পর্যন্ত ইসির কার্যকলাপ দেখে বোঝা যাচ্ছে না তারা সুষ্ঠু নির্বাচন করতে সক্ষম এবং সেটি করার করার সদিচ্ছা তাদের আছে।'
আপনার মতামত লিখুন :