রাশিদ রিয়াজ : জাতীয় নির্বাচনের আগেই ব্যাংকের অতিরিক্ত তারল্য বা নগদ জমার পরিমান ১৫ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে। এর পরিমান ১৪ হাজার কোটি টাকা। এর ফলে আমানতের হার বেড়ে যেতে পারে। ব্যাংকিং খাতের বাইরে নির্বাচনের আগে নগদ অর্থের বিপুল চাহিদা সৃষ্টি হওয়ার কারণে এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। ফিনান্সিয়াল এক্সপ্রেস
ব্যাংক কর্মকর্তারা বলছেন, এ ছাড়া কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মার্কিন ডলার বিক্রির ফলে ব্যাংকিং খাতে অতিরিক্ত নগদ অর্থের পরিমানও হ্রাস পেয়েছে। গত সেপ্টেম্বরে ব্যাংকিং খাতে যে ৯৪ হাজার কোটি টাকা অতিরিক্ত উদ্বৃত্ত ছিল তা কমে ৮০ হাজার কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে। তিন মাস আগেও ব্যাংকের এ উদ্বৃত্ত রেকর্ড পরিমান ছিল। গত বছর সেপ্টেম্বরে এর পরিমান ছিল ৯২ হাজার ২’শ কোটি টাকা।
অন্যদিকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরিসংখ্যান বলছে, গত আগস্টে ব্যাংকিং ব্যবস্থার বাইরে নগদ প্রবাহের পরিমান ১১ শতাংশের বেশি বৃদ্ধি পেয়ে পরিমানে দাঁড়িয়েছে ১৫৬.৯২ বিলিয়ন টাকায়। অর্থাৎ নগদ প্রবাহ ১৩৭৭.০২ বিলিয়ন থেকে বেড়েছে ১৫৩৩.৯৫ বিলিয়নে দাঁড়িয়েছে। গত বছর আগস্টে এধরনের নগদ প্রবাহের পরিমান ছিল ১৪৭৮.২৩ বিলিয়ন টাকা। বিশ্লেষকদের ধারণা ব্যাংককিং খাতের বাইরে চলে যাওয়া নগদ টাকার একটা বিরাট অংশ নির্বাচনে ব্যবহার হতে পারে। তারা বলছেন, এমনকি এ নগদ থেকে কার্ব মার্কেট হতে নগদ ডলার কেনা হতে পারে। একই সঙ্গে আসছে মাসগুলোতে খাদ্যপণ্যের বাইরে অন্যান্য পণ্যের দাম বা মুদ্রাস্ফীতি বাড়িয়ে দিতে পারে এধরনের নগদ প্রবাহ। এছাড়া এধরনের নগদের কিছু অংশ উপহার, দান ও অন্যান্য কাজেও ব্যবহার হতে পারে। আর ব্যাংককিং চ্যানেলের বাইরে থেকে এ নগদ প্রবাহ ফেরত না আসলে স্থানীয় মুদ্রার চাহিদা আরো বৃদ্ধি পেতে পারে। ফলে স্বাভাবিকভাবে বাড়তে পারে কলমানি রেট।
বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ডেভলভমেন্ট স্টাডিস (বিআইডিএস) সাবেক ডিরেক্টর জেনারেল মুস্তাফা কে মুজেরি বলেন, এ বিরাট অংকের টাকা শুধু খরচের খাতে ব্যবহার হলে তা অর্থনীতিতে মুদ্রাস্ফীতিকে বাড়তে সাহায্য করবে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাবেক এই প্রধান অর্থনীতিবিদ বলেন, নির্বাচনের আগে এধরনের নগদের ব্যবহার জিনিস পত্রের দাম বৃদ্ধি করতে পারে।
তবে অতিরিক্ত নগদের একটা বিরাট অংশ সরকার অনুমোদিত সিকিউরিটিজ ও বাংলাদেশ ব্যাংকের বিল বাবদ ব্যবহৃত হয়েছে যা ঝুঁকিমুক্ত বিনিয়োগ হিসেবে বিবেচিত।
এর আগে গত সেপ্টেম্বরে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নগদ মজুদ যা অতিরিক্ত হিসেবে বিবেচিত তার পরিমান ৫০.৭২ বিলিয়নে নেমে আসে। গত জুনে এর পরিমান ছিল ৫৯ বিলিয়ন টাকা। বাংলাদেশ ব্যাংকের এক শীর্ষ কর্মকর্তা বলেন, নগদ প্রবাহের পরিমান উল্লেখযোগ্য পরিমানে কমেছে যদিও বেসরকারি খাতে ঋণের প্রবাহ কমেছে। গত সেপ্টেম্বরে বেসরকারি খাতে ঋণের প্রবৃদ্ধি কমে ১৪.৬৭ শতাংশে দাঁড়ায় যা গত বছর একই সময়ে ছিল ১৪.৯৫ শতাংশ। এবছর জুলাইতে এ হার ছিল ১৫.৮৭ শতাংশ। নির্বাচনের পর নতুন সরকার গঠন না হওয়া পর্যন্ত ব্যাংকিং খাত থেকে এধরনের নগদ প্রবাহ চলে যাওয়ার ধারা অব্যাহত থাকবে বলেও তিনি জানান।
গত জুলাই থেকে ২০ নভেম্বর পর্যন্ত ৭০৪ মিলিয়ন ডলার বিক্রি করার পর ৫৯ বিলিয়ন টাকা বাংলাদেশ ব্যাংকের কোষাগারে জমা হয়েছে। বৈদেশিক মুদ্রার বাজার স্থিতিশীল রাখতে ও ব্যাংকগুলোকে সহায়তা দিতে সরকার এ ডলার বিক্রি করেছে। এ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকারস’এর চেয়ারম্যান সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বলেন, বাংলাদেশি টাকার চাহিদা আরো বাড়তে পারে যদি অতিরিক্ত তারল্যের পরিমান আরো হ্রাস পায়। এখন আমানতের সুদের হার বাড়ছে। এবং অতিরিক্ত তারল্যের স্থিতি না আসা পর্যন্ত তা বাড়তেই থাকবে।
আপনার মতামত লিখুন :