শিরোনাম
◈ মহেশখালী সমন্বিত উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ আইনের খসড়া আজ মন্ত্রিসভায় উঠছে ◈ গাজীপুরে কারখানায় বয়লার বিস্ফোরণে চীনা নাগরিকের মৃত্যু ◈ প্রধানমন্ত্রীর সৌদি আরব ও গাম্বিয়া সফর বাতিল ◈ এ বছর জিডিপি প্রবৃদ্ধি হতে পারে ৫.৭%: আইএমএফ ◈ ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও হবিগঞ্জের দুই গ্রামবাসীর মধ্যে সংঘর্ষ, ৪ পুলিশ সদস্যসহ আহত ২০ ◈ মার্চ মাসে সারাদেশে ৬২৪ সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ৫৫০, আহত ৬৮৪  ◈ ঢাকা-দিল্লি সম্পর্ককে নতুন উদ্যমে এগিয়ে যেতে হবে: হর্ষবর্ধন শ্রিংলা ◈ অস্ত্রসহ কেএনএফের আরও ৯ সদস্য আটক ◈ পাকিস্তানের মুশতাক আহমেদ বাংলাদেশের নতুন স্পিন কোচ ◈ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে কারিকুলাম যুগোপযোগী করার তাগিদ রাষ্ট্রপতির

প্রকাশিত : ২৪ নভেম্বর, ২০১৮, ০৪:৩৮ সকাল
আপডেট : ২৪ নভেম্বর, ২০১৮, ০৪:৩৮ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

তিনশ টাকার ভিআইপি!

বিভুরঞ্জন সরকার : ঢাকার বাইরে যাওয়ার কোনো সুযোগ পেলে সাধারণত হাতছাড়া করি না। তাই হঠাৎ করেই দিন চারেকের জন্য ঢাকার বাইরে যাওয়ার প্রস্তাব লুফে নিয়ে গতকাল সকালে সড়কপথে বরিশালের উদ্দেশ্যে ঢাকা ছাড়ি। সঙ্গী কলকাতা থেকে আসা আমার পুরনো বন্ধু বিমল প্রামাণিক। তিনি একজন লেখক এবং গবেষক। গবেষণার কাজেই দিন কয়েকের জন্য বাংলাদেশে এসেছেন। এর আগেও একাধিকবার তিনি গবেষণার কাজে বাংলাদেশ এসেছেন। আগেও দুএকবার আমি তার ভ্রমণসঙ্গী হয়েছি। তিনি মানুষের সঙ্গে কথা বলেন। তথ্য সংগ্রহ করেন। নোট নেন। আমি মনোযোগ দিয়ে দেখি এবং শুনি। যতো মানুষ, ততো কথা। সব মানুষের আলাদা আলাদা কথা। ভালো কথা, মন্দ কথা। সব কথা শুনতে আমি পছন্দ করি। কিছু মানুষ আছেন, যারা কথা বলতেও পছন্দ করেন। কথা বলা, ভালোভাবে কথা বলা একটি আর্ট, শিল্পকর্ম। অনেকে আছেন কথার জাদুকর। তাদের কথা অন্যেরা মন্ত্রমুগ্ধের মতো শোনেন। আমার আফসোস, কথাটাও ভালো করে বলা শিখলাম না।

যাক, ধান ভানতে শিবের গীত না গেয়ে প্রসঙ্গে ফিরি। সকাল নয়টায় বাসা থেকে বেরুবার পরিকল্পনা থাকলেও আধা ঘণ্টা দেরি হয়ে গেলো। যেহেতু গাড়িটা শুধু আমাদের জন্যই বরাদ্দ, তাই একেবারে ঘড়ি ধরে তাড়া ছিলো না। সাড়ে নয়টায় গাড়ি ছাড়লো। মাওয়া ঘাট, তারপর ফেরি পার হয়ে বরিশালের পথে। গাড়ির চালক মিঠুর বাড়িও বরিশালেই, গৌরনদী। স্মার্ট যুবক। অনেক বিদেশি মেহমান নিয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে বেড়ানোর অভিজ্ঞতা তার আছে।

চার/পাঁচ ঘণ্টার মধ্যে আমরা বরিশাল পৌঁছতে পারবো বলে মিঠু আশ^স্ত করলেন। গাড়ি ছাড়ার পর বুঝলাম, গাড়িটা মিঠু ভালোই চালান। মাওয়াঘাটে আমরা তেমন ঝুটঝামেলা ছাড়াই পৌঁছলাম। রাস্তা মোটামুটি ফাঁকাই ছিলো। রাস্তায় চলছে বিশাল কর্মযজ্ঞ, প্রশস্ত করার কাজ কোথাও, আবার কোথাও বা তৈরি হচ্ছে উড়াল সেতু। মিঠু গাড়ি চালাতে চালাতে হঠাৎই জানতে চাইলেন, নির্বাচনে আওয়ামী লীগ জিততে না পারলে এই সব উন্নয়ন কর্মকা- কি বন্ধ হয়ে যাবে?

আমি আর বিমলদা কথা বলছিলাম। প্রসঙ্গ অবশ্যই রাজনীতি। রাজনীতি এবং সেক্স নাকি বাঙালির প্রিয় আলোচনার বিষয়। এই মত আমার নয়, যায়যায়দিন খ্যাত শফিক রেহমানের। তিনি রাজনীতি এবং সেক্সের (পরকীয়া) মিশেল দিয়ে সাপ্তাহিক যায়যায়দিনকে অত্যন্ত জনপ্রিয় করেছিলেন। আমাদের আলোচনা চালকের কানে যাওয়ারই কথা। পছন্দের আলোচনা শুনলে তাতে অংশগ্রহণে আগ্রহী হয়ে ওঠাও বাঙালির আরেক প্রিয় হ্যাবিট। আমাদের রাজনীতি বিষয়ক কথাবার্তা মিঠুকেও অংশগ্রহণে উদ্বুদ্ধ করে। কিন্তু তার প্রশ্নের জবাব না দিয়ে আমি উল্টো তার কাছে জানতে চাই, এই সরকার ক্ষমতায় ফিরে না আসতে পারে বলে কি আপনার মনে হয়? মিঠুও কৌশলী জবাব দেন। বলেন, আপনাদের মতো অনেক স্যারদের নিয়েই ঘোরাফেরা করি। নানা রকম কথা কানে আসে। কেউ বলেন, আওয়ামী লীগই আবার ক্ষমতায় আসবে। কেউ আবার শঙ্কা প্রকাশ করেন।

আমি জানতে চাই, আপনি কাকে ভোট দেবেন?
তার জবাব, ‘নৌকায় ভোট দেয়ার নিয়ত এখনো আছে। আমি মনে করি আওয়ামী লীগ যেমন অনেক ভালো কাজ করেছে, তেমনি কিছু কিছু খারাপ কাজও করেছে। তবে আমার বিবেচনায় খারাপের চেয়ে ভালোর পরিমাণ যেহেতু বেশি,সেহেতু আমার ভোট নৌকায়ই যাবে।’ আমি জানি মিঠুর সঙ্গে আরো বহু ঘণ্টা সময় আমার কাটবে। তাই আর এ নিয়ে তখনই কথা বাড়াই না।

মাওয়াঘাটে পৌঁছে দেখি, পার হওয়ার অপেক্ষায় গাড়ির লম্বা লাইন। মিঠু ঘুরেফিরে খবর আনলো, ঘণ্টা দুয়েক লাগবে আমাদের ফেরিতে উঠতে। উফ, এতো দীর্ঘ অপেক্ষা! গাড়িতে বসে থাকতেই দেখলাম, একজন এসে মিঠুর সঙ্গে কিছু কথা বলছেন। মিঠু শুনলেন, কিছু বললেন না। ববং ইশারায় ‘না’ বাচক কিছু বললেন বলে আমার মনে হলো। তবে জানার জন্য আমি কৌতূহল দেখানো সমীচীন মনে করলাম না।

ঘন্টা দেড়েক পর ফেরিতে ওঠার সংকেত পেলাম। ছোট একটি ভিআইপি ফেরি। এগুলোতে পারাপারে সময় একটু কম লাগে বলে মনে মনে খুশি হলাম। তবে আমার খুশি স্থায়ী হলো না। কারণ কোনো এক ভিআইপি নাকি আসছেন। তার গাড়ি আসার পর আমাদের গাড়ি আসবে। তিনি কখন এসে পৌঁছবেন বলা যাচ্ছে না। জানা গেলো, বিশ-ত্রিশ মিনিট কমপক্ষে লাগবে। তার মানে আরো দেরি, আরো অপেক্ষা।
এসময় মিঠু বললেন, তিনশ টাকা দিলে আপনারাও ভিআইপি হতে পারতেন। আমার সঙ্গে তখন যিনি কথা বললেন, তিনি সেই প্রস্তাবই দিয়েছিলেন। তিনশ টাকা দিলে আমাদের গাড়ি ভিআইপি গাড়ি হিসেবে ফেরিতে তুলে দিতো।

আমি তো অবাক। মাত্র তিনশ টাকায় ভিআইপি হওয়ার সুযোগ হাতছাড়া হলো! আমার ব্যার্জা মুখ দেখে মিঠু বললেন, আমি কি ভুল করেছি স্যার? আপনাদের আলোচনা শুনে মনে হয়েছে, আপনারা অনেক দামি মানুষ। তিনশ টাকার ভিআইপি হওয়া আপনাদের শোভা পায় না।
মিঠুর কথায় আবারো বিস্মিত হলাম। আমাদের চারপাশে কতো রকম মানুষ, কতো ভালো মানুষ। ভিআইপি মর্যাদা পাওয়ার জন্য কতোজন কতো কিছু করছে, আবার তিনশ টাকা দিয়ে ভিআইপি হতে চায় না এমন মানুষও আছেন। লেখক : গ্রুপ যুগ্ম সম্পাদক, আমাদের নতুন সময়। সম্পাদনা : সালেহ্ বিপ্লব

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়