বাপ্পী রহমান, চীন থেকে: রাজনৈতিক দল হিসেবে আওয়ামী লীগ সমালোচনার ঊর্ধ্বে নয়। প্রায় এক দশক ধরে আওয়ামী লীগ বাংলাদেশের রাষ্ট্রক্ষমতায়। আশেপাশের সবাই এখন আওয়ামী লীগ, সবাই ‘বঙ্গবন্ধুর সৈনিক’। আমার মাঝে মাঝে এই অতি আওয়ামী লীগারদের কর্মকা- দেখে বেশ ভয় লাগে। তবে শ্রদ্ধায় মাথা অবনত হয় সেই সব মানুষদের কথা ভেবে যারা দলের দুর্দিনে তৃণমূলে দলকে আঁকড়ে ধরে রেখেছিলেন। আমার শৈশবে আওয়ামী লীগের সেসব নিবেদিত প্রাণ নেতা-কর্মীদের দেখেছি কতোটা আবেগ দিয়ে তারা দলের জন্য কাজ করেছেন। প্রাপ্তিযোগ তাদের চিন্তায় ছিলো না। সময় বলে দিবে তারা মূল্যায়িত হয়েছিলেন কিনা!
অথচ দুঃখজনক হলেও সত্য যে তীব্র আওয়ামী লীগ বিরোধিতা কিন্তু শেষতক জামায়ত-তোষণে গিয়ে ঠেকে। প্রিয় পাঠক, আপনি নিজেই এখন এই কথার বাস্তবতা টের পাচ্ছেন। না হয় ড কামাল হোসেন, কাদের সিদ্দিকী কিংবা সুলতান মুহাম্মদ মনসুর আহমেদ এখন ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করছেন কেন? যুদ্ধাপরাধী দেলোয়ার হোসেইন সাঈদী এক সময় বলেছিলেন, ‘বিএনপি ও জামায়াত একই মায়ের পেটের দুই ভাই। বাস্তবে এই দুই দলের মধ্যে নীতিগত কোনো পার্থক্য নেই। বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান বাংলাদেশকে ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছিলেন। অপর দিকে জামায়াতে ইসলামীও বাংলাদেশে ইসলামী শাসন কায়েম করতে চায়। আদর্শের বিচারে তাই দুই দলের মধ্যে কোন পার্থক্য নেই’। সম্প্রতি ইংল্যান্ডের বার্মিংহামে এক কর্মী সভায় ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা বিএনপি ও জামায়াতের মধ্যে দূরত্ব সৃষ্টি হওয়া প্রসঙ্গে বলছেন, বিএনপি কিংবা জামায়াত একই মায়ের দুই সন্তান। দুই ভাইয়ের মধ্যে কোনো দূরত্ব হতে পারে না, দুই ভাইয়ের মধ্যে মান-অভিমান হতে পারে, মতান্তর থাকতে পারে।
সাইনবোর্ড আর প্যাডসর্বস্ব দল নিয়ে ‘ঐক্য’ নামক একটি শব্দ হতে পারে কিন্তু আওয়ামী লীগ প্রবল প্রতাপে টিকে থাকবে। কেননা, শুরু থেকেই আওয়ামী লীগ জনগণের দল, গরিব মানুষের দল। নান ঘাত-প্রতিঘাতের পর ’৯০ পরবর্তী সময়ে আওয়ামী লীগ তিন মেয়াদে সরকারে এসেছে, দেশ এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। ইন্টারন্যাশনাল বাস্কেট কেস থেকে বাংলাদেশ এখন দুনিয়ার কাছে রোল মডেল হিসেবে বিবেচিত। মানব উন্নয়নের অনেক সূচকেও বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে সমমানের অনেক দেশকে পেছনে ফেলে। এই অর্জনগুলোর বেশির ভাগই এসেছে আওয়ামী লীগের শাসনামলে।
নির্বাচন আসছে। দেশের উন্নয়ন-অগ্রগতি ও সাফল্যের অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখতে আওয়ামী লীগ সরকারের ধারাবাহিকতা রক্ষা করা অপরিহার্য হয়ে দাঁড়িয়েছে। সমালোচনা থাকলো, রাজনৈতিক এবং প্রশাসনিক দুধের মাছিদের কবল থেকে মুক্ত হোক আওয়ামী লীগ। আওয়ামী লীগেই থাকুক আওয়ামী লীগ! তীব্র আওয়মী লীগ বিরোধীতা বন্ধ হোক। আস্তাকুড়ে নিক্ষিপ্ত হোক দেশ-বিরোধী জামায়ত।
লেখক : গবেষক ও শিক্ষক, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা
আপনার মতামত লিখুন :