আমিন মুনশি : দুনিয়ার যেখানে যে সম্পদ আছে তার স্রষ্টা যেমন আল্লাহ, তেমনি তার চূড়ান্ত মালিকও তিনি। তবে মানুষ আল্লাহর মনোনীত প্রতিনিধি হিসেবে নির্ধারিত নীতিমালার আলোকে সাময়িকভাবে সম্পদ ভোগ করতে পারবে মাত্র। পুরোপুরি মালিক হিসেবে নয়।
মানুষ শুধু ইসলামি বিধানানুযায়ী প্রয়োজনীয় চাহিদা পূরণের জন্য বিধিবদ্ধভাবে ভোগযোগ্য পণ্য ও সেবা উৎপাদন, আহরণ ও ভোগ করবে। আর তাতে অপচয় করা যাবে না। ইসলাম কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠীকে সমাজের বৃহত্তর স্বার্থ জলাঞ্জলি দিয়ে কিংবা সমাজের ক্ষতিকর কাজে সম্পদ ব্যবহার করে ব্যক্তি স্বার্থ চরিতার্থ করার সুযোগ রাখেনি। সম্পদ উৎপাদন ও ব্যবহারের ক্ষেত্রে ইসলাম যেসব নীতিমালা নির্ধারণ করে দিয়েছে, তা নিম্নরূপ:
১. সম্পদের পূর্ণ ব্যবহার নিশ্চিত করা, যেন কারও কোনো স্বার্থ ক্ষুণ্ন না হয়।
২. জাকাত প্রদান করা।
৩. আল্লাহর রাস্তায় ব্যয় করা।
৪. সুদ ও সুদি লেনদেন বন্ধ করা।
৫. ব্যবসায়ে সব ধরনের এবং প্রকৃতির প্রতারণা পরিহার করা।
৬. অপ্রয়োজনীয় সম্পদের মজুত গড়ে না তোলা।
৭. হারাম বস্তু উৎপাদন, বাজারজাত করণসহ এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট যাবতীয় কর্মতৎপরতা থেকে বিরত থাকা।
৮. মুনাফাখোরি ব্যবসা বা লেনদেন থেকে বিরত থাকা।
৯. সমাজে বৈধ সম্পদের অব্যাহত সঞ্চালন নিশ্চিত করা, যাতে সহজেই ভোক্তার কাছে সম্পদ পৌঁছানো নিশ্চিত হয়।
১০. এছাড়া ইসলাম সম্পদ বিকেন্দ্রীকরণের একটি বিশেষ পদ্ধতি বা প্রক্রিয়া নির্ধারণ করে দিয়েছে। মৃত ব্যক্তির সম্পদ আত্মীয়দের মাঝে বণ্টন করে দেওয়া। তবে তার কোনো আত্মীয় না থাকলে সে সম্পদ রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা দেওয়া।
আমরা জানি, আমাদের সমাজসহ পৃথিবীর সব সমাজেই বৈধ-অবৈধ উপায়ে সম্পদ আহরণ ও ব্যয়ের প্রবণতা রয়েছে। কিন্তু ইসলাম তার অনুসারীদের অবৈধ পন্থায় সম্পদ উৎপাদন, উপার্জন যেমন অনুমোদন দেয় না, তেমনি অবৈধ উপায়ে সম্পদ ভোগ-বণ্টনের অনুমতি দেয় না। ইসলাম উপার্জনের ক্ষেত্রে সামাজিক স্বার্থের পরিপ্রেক্ষিতেই বৈধতা ও অবৈধতা পার্থক্য সৃষ্টি করে দিয়েছে। এমনকি বৈধ উপায়ে যেসব ধনসম্পদ উপার্জন করা হবে, তা পুঞ্জীভূত করে রাখা যাবে না। কেননা এতে সম্পদের আবর্তন বন্ধ হয়ে যায় এবং ধনসম্পদ বণ্টনের ক্ষেত্রে ভারসাম্য বিনষ্ট হয়। সম্পদ সঞ্চয়কারী নিজেই মারাত্মক নৈতিক রোগে আক্রান্ত হয় তা নয়; বরং সে সব সমাজের বিরুদ্ধে জঘন্যতম অপরাধ করে এবং অবস্থানও নেয়।