উত্তম কুমার হাওলাদার, কলাপাড়া(পটুয়াখালী) : হাজারো সনাতন ধর্মালবলম্বী নর-নারী র্নিঘুম রাত কাটানোর পর সূর্য ওঠার সাথে সাথে বঙ্গোসাগরের নীল জলে গঙ্গাস্নান শেষ করেছেন। শুক্রবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত পুর্নিমা তির্থীতে স্নানের আগ মূহুর্তে কুয়াকাটার পুরো সৈকত জুড়ে উলুর ধ্বনি, গীতা আর মন্ত্র পাঠ করা হয়। মাথার চুল ন্যাড়া করা সহ প্রাশ্চিত্ত ও পিন্ডদান করেন অনেক মানতকারিরা।
পূন্যের আশায় সনাতন ধর্মালবলম্বী বিভিন্ন বয়সের নারী সৈকতে মোমবাতি ও আগরবাতি জ¦ালিয়ে হাতে ফুল, তুলশী, দূর্বা, বেল পাতা, ধান, হরিতকী, ডাব, কলা, তেল ও সিঁদুর সমুদ্রের জলে অর্পন করেন। সমুদ্র স্নান শেষে পুণ্যার্থীরা নিজ নিজ গন্তব্যে ফিরে গেছেন। এ উৎসবকে ঘিরে সৈকতের বালিয়ারীতে ভাসমান ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা রং বেরঙ্গের খেলনা ও প্রসাধনী সামগ্রী নিয়ে বসে ছিল। আগত দর্শনার্থী ও পুণ্যার্থীদের যাতে কোন ধরনের হয়রানী কিংবা মেলায় নাশকতা রোধে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী ছিল তৎপর। পুরো সৈকত ছিল নিরাপত্তার চাদরে ঢাকা। তবে কোন ধরনের অপ্রতিকর ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি।
স্নান শেষে ভিজে পুরা সৈকতে দাঁড়িয়ে গামছা দিয়ে শরীর মুছছিলেন পঞ্চান্ন বছরের উর্ধ্ব মনিলাল মিত্র। তার দীর্ঘদিনের স্বপ্ন ছিল কুয়াকাটায় গঙ্গা ¯œান করার। এখানে এসে র্নিঘুম রাত কাটিয়ে ভরা পূর্নিমায় সাগরের জলে পুণ্যস্নান শেষ করেছে। কথা হয় পুন্যার্থী নমিতা রানী সাথে। তিনি বলেন, আমার ছোট ছেলের মানত ছিলো মাথার চুল ন্যাড়া কর। তাই এখানে এসছে ওর মাথার চুল ন্যাড়া করেছি। আর ¯œানের মাধ্যমে মানতের পূর্নতা সম্পন্ন হয়েছে। এ সময় বিন্দু বালা বলেন, ঠিক ঠিক সময় মত পূর্নিমা তির্থীতে আমরা ¯œান শেষ করতে পেরেছি। ফুল, তুলশী, দূর্বা, তল ও সিঁদুর সাগরের জলে অর্পনও করেছি। তবে রাতে সৈকতে কোন আলোর ব্যবস্থা না থাকায় কেথাও বের হতে পারিনি।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, প্রতি বছরের ন্যায় এ বছরও গঙ্গাস্নান উপলক্ষে সৈকতে অস্থায়ি মেলা বসেছে। দর্শনার্থীদের আনন্দ দিতে দেশের বিভিন্ন শিল্পীদের সমন্বয়ে উম্মুক্ত কর্নসাটের আয়োজন করা হয়। র্নিঘুম রাত কাটানোর পর সূর্য ওঠার সাথে সাথে পূন্ন্যার্থীরা গঙ্গাস্নান শেষ করেছেন। আগত পুণ্যার্থী ও দর্শনার্থীদের নিরাপত্তার জন্য আইন শৃংখলা বাহিনীর টহল ছিল চোখে পরার মতো। এছাড়া সৈকতের জিরো পয়েন্ট থেকে চারদিকের দুই কিলোমিটার পুরো এলাকা সিসি ক্যামেরার আওতায় রাখা ছিলো। এ উৎসবকে কেন্দ্র করে জাতি ধর্মবর্ন নির্বিশেষে পর্যটন কেন্দ্র কুয়াকাটায় হাজার হাজার মানুষের মহামিলন মেলায় পরিণত হয়।
কলাপাড়া পৌর শ্রীশ্রী মদন মোহন সেবাশ্রমের পুরহিত পরিমল চন্দ্র দাস জানান, প্রতি বছর পূর্নিমা তির্থীতে এ রাস লীলা উৎসব ও মেলা চলে আসছে। দ্বাপর যুগে মানুষের দুঃখ, দুর্দশা, হিংসা, হানাহানী, দেখে এবং দুষ্টের দমন ও সৃষ্টের পালনের জন্য স্বয়ং ভগবান শ্রী কৃষ্ণ নাম ধারন করে পৃথিবীতে অবর্তীন হয়। ওই যুগে ভগবান শ্রী কৃষ্ণ নিস্কাম প্রেমের নিদর্শন রেখে যান এবং তিনি যে সর্বভূতে বিরাজ করেন তারই স্বাক্ষী রেখেছেন পূর্নিমা রাতে এ লীলার মাধ্যমে। সেই লীলা অনুসরনে কুয়াকাটায় গঙ্গা ¯œান শেষে পুণ্যার্থী ও দর্শনার্থীরা কলাপাড়ার শ্রী শ্রী মদন মোহন সেবাশ্রম আঙ্গিনায় রাস মেলা চলে আসছে।
কুয়াকাটা রাস পূজা ও রাস মেলা উদ্যাপন কমিটির সভাপতি এ্যাড. কাজল বরণ দাস জানান, আমরা সফল ভাবে অনুষ্ঠান পালন করেছি। আগত পূন্যার্থীদের মন্দির প্রাঙ্গনে রাত ভর সাংস্কৃতিক উপভোগ করেছে।
মহিপুর থানার ওসি মো.সাইদুল ইসলাম জানান, দর্শনার্থীদের নিরাপত্তায় বিভিন্ন পয়েন্টে পুলিশের পাশাপাশি ট্যুরিষ্ট পুলিশ ও র্যাবের টহল অব্যাহত ছিলো। তরে কোন ধরনের অপ্রতিকর ঘটনার খরব পাওয়া যায়নি।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো.তানভির রহমান জানান, রাস ও গঙ্গা¯œান উৎসব কেবল হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের একক অনুষ্ঠানে সীমাবন্ধ থাকেনি। এটি এখন একটি সার্বজনীন উৎসবে পরিনত হয়েছে। তবে আগত পুণ্যার্থী, দর্শনার্থীদের নিরাপত্তার জন্য উপজেলা ও জেলা প্রশাসনের সমন্বয়ে সকল ব্যবস্থা নেয়া হয়ে ছিল। এছাড়া পুরো সৈকত সিসি ক্যামেরার আওতায় ছিল বলে তিনি সাংবাদিকদের জানিয়েছেন।
আপনার মতামত লিখুন :