শিরোনাম
◈ ভবিষ্যৎ বাংলাদেশ গড়ার কাজ শুরু করেছেন প্রধানমন্ত্রী: ওয়াশিংটনে অর্থমন্ত্রী ◈ দাম বেড়েছে আলু, ডিম, আদা ও রসুনের, কমেছে মুরগির  ◈ ২০২৫ সালের মধ্যে ৪৮টি কূপ খনন শেষ করতে চায় পেট্রোবাংলা ◈ ভিত্তিহীন মামলায় বিরোধী নেতাকর্মীদের নাজেহাল করা হচ্ছে: মির্জা ফখরুল ◈ বিনা কারণে কারাগার এখন বিএনপির নেতাকর্মীদের স্থায়ী ঠিকানা: রিজভী ◈ অপরাধের কারণেই বিএনপি নেতা-কর্মীদের  বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে: প্রধানমন্ত্রী  ◈ অ্যাননটেক্সকে জনতা ব্যাংকের সুদ মওকুফ সুবিধা বাতিলের নির্দেশ বাংলাদেশ ব্যাংকের ◈ চুয়াডাঙ্গায় তাপমাত্রা ৪১ দশমিক ৩ ডিগ্রি, হিট এলার্ট জারি  ◈ ঢাকা শিশু হাসপাতালের আগুন নিয়ন্ত্রণে ◈ ইরানে ইসরায়েলের হামলার খবরে বিশ্বজুড়ে উত্তেজনা, তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের আতঙ্ক

প্রকাশিত : ২৩ নভেম্বর, ২০১৮, ০৫:০৫ সকাল
আপডেট : ২৩ নভেম্বর, ২০১৮, ০৫:০৫ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

সহিংসতা ওদের, সহিংসতা আমাদের

অলোক রাই : ‘‘২৬/১’’ মুম্বাই এ্যাটাক ছিলো আমাদের প্রথম টেলিসম্প্রচারিত জঙ্গী আক্রমণ। যেভাবে ২০০২ সালের গুজরাট ছিলো আমাদের প্রথম টেলিসম্প্রচারিত ‘‘দাঙ্গা’’। আমাদের নিজস্ব সংক্ষিপ্ত গণহত্যা। দুটি ক্ষেত্রেই আমরা টিভিতে দেখেছি সহিংসতার বর্ণিল আর জমকালো প্রদর্শনী। বিশেষ করে মুম্বাই এ্যাটাক ছিলো টিভিতে দারুণ উপভোগ্য একটা শো! সিনেমার চরিত্রের মত জঙ্গী, ইন্ডিয়া গেট আর তাজ হোটেলের মত বিশাল সেট, কোলাবার ইয়াহুদি কেন্দ্রের ওপর শব্দ করে ঘোরা হেলিকপ্টার, কমান্ডোদের অ্যাকশন সব ছিলো মন্ত্রমুগ্ধকর! আমরা এসব গোগ্রাসে গিলেছি!

শেষ গুলি ছোঁড়ার আগেই ঘটনাক্রমের নামকরণ হয়েছে ‘‘২৬/১১’’। নামটির শেষের ‘‘১১’’ কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ! নিশ্চিতভাবেই যুক্তরাষ্ট্রের ‘‘৯/১১’’ সন্ত্রাসী আক্রমণের সঙ্গে ছন্দ মিলিয়েই এই নাম দেয়া হয়েছে। ‘‘মুম্বাই ১১/২৬’’ বললে নির্ঘাৎ অত আবেদন তৈরি হতো না!

এখনো যদি না হয়ে থাকে, তাহলে সামনে নিশ্চয়ই এমন দিন আসবে; যখন এসব জঙ্গী আক্রমণগুলোর পরিকল্পনা হবে কোন টিভি নেটওয়ার্ক এক্সিকিউটিভের হাতে, টিভির শিডিউল বুঝে!

আমাকে ভুল বুঝবেন না। নিঃসন্দেহে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত মুম্বাই এ্যাটাক একটা গভীর বেদনাদায়ক ঘটনা। কিন্তু একই সঙ্গে মনে রাখতে হবে, পাবলিক প্রসিকিউটর উজ্জ্বল নিকামের কথা। আজমলের বিরুদ্ধে পাবলিক সেন্টিমেন্ট তৈরির জন্য যে মিথ্যা করে বলেছিলো, কাসাবের ইচ্ছা অনুযায়ী সরকার তাকে জেলের মধ্যে বিরিয়ানি খেতে দিচ্ছে!

আজমলকে যেদিন ফাঁসি দেয়া হলো, মনে আছে, বিজেপি কর্মীরা রাস্তায় আনন্দ প্রকাশ করেছিলো। তাদের প্ল্যাকার্ডে কিশোর কাসাবের বিকৃত ছবির নিচে লেখা ছিলো, ‘‘আতাঙ্কবাদি কাসাভ কো ফাঁসি, সারে দেশ ম্যায় খুশি’’। যদিও এখানে দুঃখজনকভাবে ছন্দ মেলেনি।

দশ বছর পরে এসে এখন মনে হয় সময় হয়েছে, ক্ষোভ আর আবেগ পাশে রেখে নির্মোহ দৃষ্টিতে ঘটনাক্রমের বিচার করার।

টেলিসম্প্রচারিত বেদনার কাব্য আর অধুনা ‘‘মি টু’’বাদ ছাড়াও খুব জরুরি একটা বিষয় আছে। তাহলো সন্ত্রাসবাদের ব্যাপক বিস্তৃতি।

সহিংসতা হলো একটা বিশেষ ধরনের আধুনিকতার আবশ্যিক অনুসঙ্গ। যে আধুনিকতার বৈশিষ্ট্য হলো, চরম বৈষম্য। যে আধুনিকতা সৃষ্টি করে চলে, বাজার অর্থনীতিপ্রসূত অবিচার। যে আধুনিকতা প্রতি দিনে আর প্রতি রাতে বাড়িয়ে চলে দুঃখ দুর্দশার সাম্রাজ্য।

অন্যদিকে সন্ত্রাসবাদ হলো ক্ষমতাবানদের হাতের সেই অস্ত্র, যা দিয়ে সব প্রতিবাদ উড়িয়ে দিয়ে শক্তভাবে কর্তৃত্ব ধরে রাখা যায়।

সম্প্রতি একজন কেবিনেট মন্ত্রী বলেছেন, সন্ত্রাসবাদ উন্নয়নের সবচেয়ে বড় বাধা। কেউ উল্টো যুক্তি দিয়ে বলতে পারেন, একটা বিশেষ ধরনের উন্নয়নই আসলে সন্ত্রাসবাদের জনক। উন্নয়নের নিজের ভাষা জবরদস্তিমূলক বলেই সহিংস-প্রতিরোধ উৎসাহ পাচ্ছে। কিন্তু আজকের ভারতে এমন তর্ক করলে নির্ঘাত ‘‘শহুরে নক্সাল’’ তকমা জুটে যাবে।

মোদ্দা কথা হলো, সরকারি অভিধান অনুযায়ী, রাষ্ট্র যেসব সহিংস কাজ করে সেগুলো সন্ত্রাস নয়। কিন্তু সেসব সহিংস কাজের প্রতিবাদ করাটাই হলো ‘‘সন্ত্রাসবাদ’’। সে প্রতিবাদ দেশের ভেতর থেকে আসুক বা বাইরে থেকে।

প্রচ-ভাবে সন্ত্রাসবাদের এই সংজ্ঞাকে আঁকড়ে ধরার আমাদের যে চেষ্টা, তা আসলে আমাদের অদূরদর্শী সতর্ক অবস্থান থেকে। এক্ষেত্রে আমরা আবারো অন্ধ হয়ে অনুকরণ করে যাচ্ছি। লেখক : ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের সাংবাদিক। মূল ইংরেজি থেকে অনূদিত ও সংক্ষেপিত। সম্পাদনা : সালেহ্ বিপ্লব

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়