শিরোনাম
◈ ব্রিটিশ হাইকমিশনারের সঙ্গে বিএনপি নেতাদের বৈঠক ◈ মিয়ানমার সেনার ওপর নিষেধাজ্ঞা থাকায় তাদের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করা সম্ভব হচ্ছে না: সেনা প্রধান ◈ উপজেলার নির্বাচন: মন্ত্রী-এমপিদের আত্মীয়দের সরে দাঁড়ানোর নির্দেশ আওয়ামী লীগের ◈ বোতলজাত সয়াবিনের দাম লিটারে ৪ টাকা বাড়লো ◈ মুজিবনগর সরকারের ৪০০ টাকা মাসিক বেতনের কর্মচারি ছিলেন জিয়াউর রহমান: পররাষ্ট্রমন্ত্রী ◈ রেকর্ড বন্যায় প্লাবিত দুবাই, ওমানে ১৮ জনের প্রাণহানি ◈ টাইমের প্রভাবশালী ১০০ ব্যক্তির তালিকায় বাংলাদেশের মেরিনা (ভিডিও) ◈ দেশের মানুষকে ডাল-ভাত খাওয়াতে  ব্যর্থ হয়েছিল বিএনপি : প্রধানমন্ত্রী ◈ দক্ষিণ লেবাননে ইসরায়েলের ফসফরাস বোমা হামলা ◈ ঝালকাঠিতে ট্রাকচাপায় নিহতদের ৬ জন একই পরিবারের

প্রকাশিত : ২৩ নভেম্বর, ২০১৮, ০৪:৪৯ সকাল
আপডেট : ২৩ নভেম্বর, ২০১৮, ০৪:৪৯ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

ভুয়া বা ফেক নিউজ যখন শক্তিশালী প্রতিপক্ষ

লীনা পারভীন : ডিজিটাল যুগের সুফল যেমন ভোগ করছে গোটা বিশ্ব ঠিক তেমন কুফলও কম ভোগান্তি দিচ্ছে না। বর্তমান বিশ্বে যেকোনো ইভেন্টে যে মাধ্যমটি শক্তিশালী ভূমিকা রাখছে সেটি হচ্ছে ইন্টারনেটভিত্তিক, যোগাযোগ মাধ্যম যার মধ্যে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রাখছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম। সবার কাছে যেটি ফেসবুক নামে পরিচিত। টুইটার বা লিংকডিনের মতো মাধ্যমগুলো আমজনতা বেশি ব্যবহার করে না। দেশে মোট জনসংখ্যার প্রায় সবাই ফোন ব্যবহার করেন। বিটিআরসির হিসাব অনুযায়ী মোট ব্যবহারকারীর মধ্যে ৯ কোটি মানুষ ইন্টারনেট ব্যবহার করেন এবং যাদের মধ্যে বেশিরভাগই ফেসবুক একাউন্ট ব্যবহার করেন। এই এক ফেসবুকের মাধ্যমে প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে শহর পর্যন্ত বিস্তৃত সবাই যুক্ত হয়ে যাচ্ছেন দেশ ছাড়িয়ে বিদেশেও। এই যে কানেক্টিভিটির শক্তি এখন অনেক। কেবল আমাদের দেশেই নয় সারা বিশ্ব এখন ফেক নিউজের জ্বরে আতঙ্কিত। আমাদের দেশে প্রধান ধারার গণমাধ্যমগুলোও পরিচালিত হচ্ছে ফেসবুকের স্রোতের মাধ্যমে। ফেসবুকের মাধ্যমে উদ্দেশ্যমূলকভাবে একটি মহল ক্রমশ ছড়িয়ে যাচ্ছে গুজব বা ভুয়া নিউজ। সেইসব নিউজের সত্যতা যাচাই করার মতো ম্যাচিউরিটি অনেক সময়েই আমাদের শিক্ষিত লোকেদের মাঝেই দেখা যায় না। খোদ আমেরিকাতেই সর্বশেষ নির্বাচনে এই গুজব বা ফেক নিউজের প্রভাব দেখেছে বিশ্ব।

আমাদের দেশে প্রথম এই ধরনের ডিজিটাল গুজব দ্বারা আক্রান্ত হয়েছিলো ২০১৩ সালে। আমরা দেখেছি আমার দেশসহ কিছু জাতীয় পত্রিকা কেমন করে উদ্দেশ্যমূলকভাবে কিছু ভুয়া সংবাদ ছাপিয়ে গুজব ছড়িয়েছিলো দেশ ও বিদেশে যার ফলে ছিলো হত্যা লুণ্ঠনের মতো ঘটনা। গুজব ছড়ানোর জন্য একটি গোষ্ঠী সবসময়েই সক্রিয় থাকে। ইন্টারনেটভিত্তিক যোগাযোগ মাধ্যমকে ব্যবহার করে দেশকে কেমন করে কতোটা অস্থির করে দেয়া যায়, এর প্রমাণ আমরা বিগত অনেকগুলো ঘটনাতেই দেখেছি। ২০১৩ সালের ঘটনার ভয়াবহতার ধারাবাহিকতায় আমরা দেখেছি হেফাজতে ইসলামের তা-ব। শত শত লোককে হত্যার মিথ্যা সংবাদ আজও ঘুরে ঘুরে বেড়ায় নানা মাধ্যমে। চাঁদে সাঈদীকে দেখা যাওয়ার মিথ্যা খবরে কেমন করে কেড়ে নেয়া হয়েছিলো কয়েকটি তাজা প্রাণ। জ্বালিয়ে পুড়িয়ে দেয়া হয়েছিলো অমুসলিমদের বাড়িঘর।

ছোট- বড় যেকোনো বিষয়কে কেন্দ্র করেই শুরু হয়ে যায় এই ভুয়া সংবাদের খেলা। সর্বশেষ স্কুল ছাত্রদের নিরাপদ সড়ক চাই আন্দোলন আমাদের সবার স্মৃতিতে এখনও তাজা। কয়েকজন ছাত্রের চোখ তুলে ফেলা হয়েছে, ছাত্রীদেরকে আওয়ামী লীগের অফিসে আটকে রেখে ধর্ষণ করা হয়েছে, একজন ছাত্রকে মেরে লাশ গুম করে দেয়া হয়েছে এমন জঘন্য মিথ্যা খবর ছড়িয়েছিলো ফেসবুকের মাধ্যমে আর সেসব মিথ্যা খবর মিনিটেই ছড়িয়ে পড়েছিলো দেশে ও বিদেশে। হাজার হাজার শেয়ারের মাধ্যমে অস্থির করে তোলা হয়েছিলো দেশকে। অবিশ্বাস্য সেইসব সংবাদ বিশ্বাস করেছিলো আমাদের শহুরে উচ্চ শিক্ষিত মানুষেরা। প্রমাণ নেই কিন্তু বিশ্বাস করে সেইসব সংবাদকে ছড়িয়ে দিয়েছিলো চারদিকে। একবারের জন্যও কেউ ভাবেননি যে, তথ্য প্রমাণ ছাড়া- এমন সংবাদ ছড়ানোর মাধ্যমে দেশের কী ক্ষতি হতে পারে, মানুষের মাঝে অবিশ্বাসের জন্ম দিয়ে কী দাবি আদায় করা যায় সেটিও কেউ উত্তর দিতে পারেননি সে সময়ে। সামনে নির্বাচন। আবার শুরু হয়েছে ভুয়া নিউজের খেলা। এবার আর কেবল ফেইসবুক নির্ভর প্রচারণায় থেমে নেই কুচক্রিমহল। আমরা দেখলাম প্রথম সারির পত্রিকা এবং নিউজ সাইটগুলোর নকল সাইট তৈরি করে ছড়ানো হচ্ছে মিথ্যা সংবাদ। বিষয়টি অত্যন্ত ভাবনার, কারণ যেকোনো নিউজ সাইটের সত্যতা যাচাই করা সাধারণ পাঠকের জন্য সম্ভব নয়। যেখানে তথ্য- প্রমাণের জন্য অপেক্ষা না করে আমাদের শিক্ষিত ও সচেতন জনগণ ভুয়া সংবাদকেই সত্য ভেবে প্রতিবাদের মিছিল বের করে সেখানে জাতীয় পত্রিকায় ছাপানো সংবাদকে মিথ্যা মনে করার প্রশ্নই আসে না। ২১ নভেম্বরই সংবাদ দেখলাম বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট হাওয়া হয়ে গেছে বলে একটি সংবাদ ঘুরে বেড়াচ্ছে ফেসবুকে। ভাবা যায় বিষয়টি? স্যাটেলাইট কেমন করে হারিয়ে যেতে পারে এমন প্রশ্নটি যাদের মাথায় আসে না তারাই এমন সংবাদকে বিশ্বাস করে থাকেন। অথচ ন্যুনতম জ্ঞান ও বোধ-বুদ্ধি সম্পন্ন মানুষ হলেই এমন অবৈজ্ঞানিক একটি সংবাদকে উড়িয়ে দেওয়ার কথা। বেশিরভাগ ভুয়া সংবাদই প্রচার করা হচ্ছে বর্তমান সরকারের বিরুদ্ধে। এখনও পর্যন্ত কোনো ভুয়া সংবাদ শিরোনাম দেখিনি যেখানে সরকারের প্রতিপক্ষ গ্রুপ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বা তাদেরকে নিয়ে ছাপা হয়েছে। এই উদ্দেশ্যমূলক সংবাদগুলো ছড়ানো হয় মানুষকে বিভ্রান্ত করার জন্য আর এতে তারা যথেষ্ট সফল হয়েছে এবং হচ্ছে। সরকারের বিরোধিতা করতে গিয়ে আমরা দেশকে হুমকির মধ্যে ফেলছি কি-না এ বিষয়টিও ভাবছে না কেউ। অবাক বিষয় হচ্ছে, ভুয়া নিউজের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলে বারবার প্রচার করলেও আমরা সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় বা কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে তেমন কোনো কার্যকর ভূমিকা বা পদক্ষেপ দেখতে পাচ্ছি না। ভুয়া নিউজ ফ্যাক্টিরিতে যারা কাজ করে তারা কিন্তু বসে নেই। ক্রমাগত নানা কায়দায় তারা উৎপাদন করে যাচ্ছে একের পর এক ফেক নিউজ। আর এর দ্বারা প্রভাবিত হচ্ছে দেশের আপামর সাধারণ জনতা। সরকারের রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ যেই হোক না কেনো এই মুহূর্তে সবচেয়ে বড় ও শক্তিশালী প্রতিপক্ষ হচ্ছে ভুয়া সংবাদ মাধ্যমগুলো। নির্বাচনের আগে তাই সরকারকে অত্যন্ত শক্ত ভূমিকায় নামতে হবে। কোনোভাবেই কোনো ভুয়া নিউজ ছড়াতে পারে এমন ফেসবুক পেইজ, নিউজ সাইট বা ভুয়া অনলাইনগুলোকে নিয়ন্ত্রণের আওতায় আনতে হবে। প্রচুর ফেসবুক পেইজ আছে যেখান থেকে প্রতিদিন শত শত ভুল বিষয়ের অবতারণা করা হচ্ছে। প্রচার করা হচ্ছে সরকার বিরোধী থেকে দেশকে অস্থির করে তুলতে পারে এমন তথ্য প্রমাণহীন সংবাদ। দেশকে আরেকটি সংঘর্ষ থেকে বাঁচাতে অতিসত্ত্বর এসবের বিরুদ্ধে আইনগত পদক্ষেপ নেয়া হোক। এর আগের প্রতিটি ঘটনাতেই দেখেছি পোস্ট- অ্যাকশনে গিয়েছে সরকার কিন্তু এইবার নির্বাচনে যদি প্রি-প্ল্যান্ড অ্যাকশনে না যাওয়া যায় তবে হয়তো আরেকটি সাংঘর্ষিক পরিস্থিতি খুব বেশি দূরে নয়।

লেখক : লীনা পারভীন, কলামিস্ট ও লেখক

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়