উত্তম কুমার হাওলাদার, কলাপাড়া(পটুয়াখালী): বঙ্গোপসাগরের নীল জলে ধুয়ে মুছে যাবে জাগতিক পাপ। এই মনোষকামনায় শুক্রবার পূর্নিমাতিথীর সূর্যোদয়ের সাথে সাথে লক্ষাধীক সনাতন ধর্মালম্বী নারী-পুরুষ পর্যটন কেন্দ্র কুয়াকাটার সমুদ্রে পূন্য স্নান করবেন। সাধু-সন্ন্যাসীসহ দেশ-বিদেশী দর্শনার্থী ও পুণ্যার্থীরা এ মাহেন্দ্রক্ষণের জন্য সৈকতে জমায়েত হয়েছে। গঙ্গাস্নান ও রাস মেলা উৎসবকে ঘিরে কলাপাড়া ও পর্যটন কেন্দ্র কুয়াকাটায় এখন সাজ সাজ রব। কুয়াকাটার পুরো সৈকত এখন পুন্যার্থী ও দর্শনার্থীদের পদচারনায় মুখরিত হয়ে উঠেছে। কোন ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা যেন না ঘটে সে জন্য জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নেয়া হয়েছে ব্যাপক নিরাপত্তা ব্যবস্থা।
উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, এ বছর রাস মেলা ও গঙ্গাস্নানে আগত পুণ্যার্থী ও দর্শনার্থীদের নিরাপত্তার জন্য র্যাব পুলিশের পাশাপাশি রিজার্ভ ফোর্স কুয়াকাটার সৈকতে মোতায়ন করা হয়েছে। সুপেয় পানি, চিকিৎসা টিম, নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হয়েছে। এছাড়া সৈকতের জিরো পয়েন্ট থেকে চারদিকের দুই কিলোমিটার মধ্যে নিচ্ছিদ্র নিরাপত্তায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর টহলের পাশাপাশি পুরো এলাকা সিসি ক্যামেরার আওতায় রাখা হয়েছে।
কুয়াকাটা রাস পূজা ও রাস মেলা উদ্যাপন কমিটির সভাপতি এ্যাড. কাজল বরণ দাস জানান, দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে আগত পূণ্যার্থীদের থাকা এবং খাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এছাড়া দর্শনার্থীদের আনন্দ দিতে দেশী বিদেশী শিল্পীদের সমন্বয়ে উম্মুক্ত কর্নসাটের আয়োজন করা হয়েছে।
কলাপাড়া শ্রী শ্রী মদন মোহন সোবাশ্রমের রাস উদ্যাপন কমিটির আহবায়ক হীরা হাওলাদার স্বপন জানান, কুয়াকাটায় পুণ্যস্নান শেষে পুণ্যার্থীরা পৌর শহরের শ্রী শ্রী মদনমোহন সেবাশ্রম প্রাঙ্গনে এসে রাঁধা কৃষ্ণের যুগল প্রতিমা দর্শন করবেন। বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টা ৫৮ মিনিটে পূর্নিমা শুরুর সাথে সাথে ১৭ জোড়া রাধা কৃষ্ণের যুগল প্রতিমা প্রতিষ্ঠাসহ অধিবাসের কার্যক্রম সম্পান্ন করা হয়েছে। এর মধ্যদিয়ে শুরু হয়েছে পাঁচ দিন ব্যাপী রাস মেলা। এ উপলক্ষে দুর-দূরান্ত থেকে আসা ভাসমান ব্যবসায়ীরা নানা পণ্যের পশরা সাজিয়ে বসেছে। এ বছর রাস মেলায় লক্ষাধিক পূন্যার্থী ও দর্শনার্থীর সমাগম হবে বলে তিনি জানান।
কুয়াকাটা হোটেল মোটেল ওনার্স এ্যাসোসিয়েশন’র সাধারণ সম্পাদক মোতালেব শরীফ বলেন, গঙ্গাস্নান ও রাস মেলা উপলক্ষে সব হোটেল মোটেলের সিট বুকিং হয়ে গেছে। তবে যে পরিমাণ ভক্ত এবং দর্শনার্থীর আগমন ঘটেছে সে তুলনায় হোটেলের সংখ্যা কম থাকায় অনেকেই পাশ্ববর্তী বাসা-বাড়িসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান কিংবা গাছ তলায় আশ্রয় নিয়েছে।
কুয়াকাটা পৌর মেয়র আব্দুল বারেক মোল্লা জানান, রাস মেলা ও গঙ্গাস্নান পটুয়াখালী জেলার একটি ঐতিহ্যবাহী উৎসব। এটি এখন একটি সার্বজনীন উৎসবে পরিণত হয়েছে। এ ব্যাপারে প্রশাসনের তরফ থেকে কয়েক দফা মিটিং করা হয়েছে। প্রতি বছরের ন্যায় এ বছর উৎসবকে নিরাপদ ও বিড়ম্বনা মুক্ত রাখতে ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে।
মহিপুর থানার ওসি মো.সাইদুল ইসলাম জানান, দর্শনার্থীদের নিরাপত্তায় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর টহলের পাশাপাশি পুরো এলাকা সিসি ক্যামেরার আওতায় থাকবে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. তানভির রহমান জানান, গঙ্গাস্নান ও মেলায় আগত পূণ্যার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের সমন্বয়ে জোরদার নিরাপত্তা তৈরি করা হয়েছে। আশা করি কোন ধরনের সমস্যা হবে না বলে তিনি সাংবাদিকদের জানিয়েছেন।
আপনার মতামত লিখুন :