মোহাম্মদ রুবেল : আগামী ২০৩০ সালের মধ্যে জাতিসংঘ ঘোষিত টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জন করার পথে রয়েছে বাংলাদেশ। এই লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে জনগণের সুস্বাস্থ্য ও স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন নিশ্চিত করতে হবে। কিন্তু এ লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে অসংক্রামক রোগ অন্যতম অন্তরায় হয়ে দাঁড়িয়েছে বলছেন স্বাস্থ্য বিশেজ্ঞরা।
এসডিজির (টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা) ৩ নং লক্ষ্যমাত্রায় বলা হয়েছে, গুড হেলথ অ্যান্ড ওয়েলবিয়িং ফর অল এজেজ। অথচ সরকারের বাজেটের ২ শতাংশেরও কম অর্থ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে স্বাস্থ্য খাতে। এ পরিমাণ অর্থ দিয়েও উন্নয়নশীল দেশ হওয়া সম্ভাবনা নাও হতে পারে বলছেন তারা।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এসডিজি বিষয়ক মূখ্য সমন্বয়ক ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহা পরিচালক মো. আবুল কালাম আজাদ আমাদের নতুন সময়কে বলেন, বর্তমান বিশ্বে সংক্রামক রোগের তুলনায় অসংক্রামক রোগের প্রকোপ অনেক বেশি। বাংলাদেশও এর ব্যতিক্রম নয়। বাংলাদেশে ৬১ ভাগ মৃত্যুর কারণ অসংক্রামক (এনসিডি) রোগে। এ রোগের চিকিৎসায় বছরে ব্যয় করছে ৩৭ মার্কিন ডলার। এর ফলে বছরে ৫৯ লাখ মানুষ দারিদ্র হয়ে যাচ্ছে। এ রোগের মধ্যে ১৭ ভাগ হৃদরোগে ও স্ট্রোকে, ১১ ভাগ ফুসফুসের জটিলতায়। ১০ ভাগ ক্যানসারে ও ডায়াবেটিসে ৩ ভাগ। অন্যান্য অসংক্রামক ব্যাধিতে মারা যায় ১৮ ভাগ।
মহাসচিব বলছেন, অসংক্রামক রোগের অন্যতম প্রধান কারণ তামাক। এসডিজির তিন-এ (টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা) তামাক নিয়ন্ত্রণের কথাও বলা আছে। তাই সরকারকে এসডিজির লক্ষ্যমাত্রা অর্জন তামাক চাষ বন্ধ করতে হবে। এর টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জনে ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে তামাকমুক্ত করার জন্য কাজ করে যাচ্ছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর এনসিডিকে প্রাধন্য দিয়ে ননকমিউনিকেবল ডিজিজকে কয়েকটি ভাগে ভাগ করেছি। ডায়াবেটিস, হাইপার টেনশন, ক্যানসার, শ্বাসকষ্ট, পুড়ে যাওয়া, সড়ক দুর্ঘটনাসহ বিভিন্ন কারণে ক্ষত হওয়া রোগের ক্ষেত্রে আমাদের কর্মসূচি রয়েছে।
সম্প্রতি ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশ আয়োজিত 'তামাক ও অসংক্রামক রোগ: এসডিজি অর্জনে অন্যতম অন্তরায় শীর্ষক সেমিনারের তথ্যানুসারে সরকারের প্রতি স্বাস্থ্য বিশেজ্ঞদের পরামর্শ তামাক শিল্পের প্রতি নজর না দিয়ে, জনস্বাস্থ্যকে গুরুত্ব দিয়ে ধীরে ধীরে বিকল্প শিল্পায়নে জোর দিতে হবে।
ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন হাসপাতাল অ্যান্ড রিসার্চ ইনস্টিটিউটের এপিডেমিওলজি ও রিসার্চ বিভাগের প্রদান অধ্যাপক ডা. সোহেল রেজা চৌধুরী আমাদোর নতুন সময়কে বলেন, অসংক্রামক ব্যাধি কখনো নির্মূল করা যাবে না। তবে একে শক্তভাবে প্রতিরোধ করা সম্ভব। শরীরের এমন কোনো অঙ্গ নেই, যা তামাকে ক্ষতিগ্রস্থ হয় না। বিশেষ করে হৃদরোগ, ক্যানসার ও স্ট্রোকের অন্যতম প্রধান কারণ তামাক। দেশের প্রায় চার কোটি মানুষ কোনো না কোনোভাবে তামাক ব্যবহার করে যার ৪৫ ভাগই পুরুষ। তামাকের প্রভাবে দেশে প্রতিবছর ১০ লাখ মানুষ ক্যানসারে আক্রান্ত হয়। অথচ কেবল মাত্র ধূমপান ত্যাগ করেই ৫০ শতাংশ ক্যানসার –ঝুঁকি মুক্ত থাকা যায়। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নন কমিউনিকেবল ডিজিজ কন্ট্রোল প্রোগ্রামের ডিরেক্টর ডা. নূর মোহাম্মদ বলেন, সরকারের একার পক্ষে অসংক্রামক রোগ প্রতিরোধ করা সম্ভব নয়। এজন্য সরকারি-বেসরকারি সংস্থা, গণমাধ্যম সবাইকে একযোগে কাজ করতে হবে। সেই সাথে কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানগুলোকে সামাজিক দায়বদ্ধতা কার্যক্রমের অংশ হিসেবে অসংক্রামক রোগ ও তামাক বিরোধী প্রচার চালাতে হবে।
সম্পাদনায়: সোহেল রহমান, হুমায়ুন কবির খোকন