আমিন মুনশি : নবীজির প্রতি ভালোবাসা, নবীকে মুহাব্বত করা ঈমানের দাবি। হযরত আনাস রা. থেকে বর্ণিত, রাসূল সা. বলেছেন- কোনো বান্দা ততোক্ষণ পর্যন্ত পরিপূর্ণ মুমিন হতে পারবে না, যতক্ষণ আমি তার নিকট তার পরিবার-পরিজন, সন্তান-সন্ততি, ধন-সম্পদ ও অন্য লোকদের চাইতে প্রিয় না হব। (মুসলিম শরিফ)
অন্য একটি হাদীসে আল্লাহর রাসূল (সা.) বলেন, তোমাদের কেউ (পরিপূর্ণ) মুমিন হতে পারবে না, যতক্ষণ আল্লাহ ও তাঁর রাসুল তার নিকট সবকিছু থেকে অধিক প্রিয় না হন। হাদীসের এই দাবি প্রতিফলিত হয়েছিল সাহাবীদের জীবনে। মহানবী সা. ছিলেন সাহাবীদের কাছে তাঁদের নিজ জীবনের চেয়েও প্রিয়।
তা ছাড়া আল্লাহকে ভালোবাসা ও তাঁর প্রিয়পাত্র হওয়ার জন্য আল্লাহ নিজেই একটি মানদণ্ড নির্ধারণ করে দিয়েছেন। যে মানদণ্ডে উত্তীর্ণ হওয়া ছাড়া ভালোবাসার দাবি আল্লাহর কাছে গ্রহণযোগ্য নয়। এ সম্পর্কে আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘হে নবী! বলুন, তোমরা যদি আল্লাহকে ভালোবাসো তবে আমাকে অনুসরণ কর। আল্লাহ তোমাদের ভালোবাসবেন এবং তোমাদের অপরাধ ক্ষমা করবেন। আল্লাহ অত্যন্ত ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।’ (সুরা আল ইমরান : ৩১)
এই আয়াতে আল্লাহর প্রতি বান্দার ভালোবাসা পোষণের জন্য রাসুলকে ভালোবাসা ও তাঁর অনুসরণকে শর্ত করেছেন। সুতরাং রাসুল সা. কে ভালোবাসা ও তাঁর অনুসরণ ছাড়া শুধু আল্লাহর প্রতি ভালোবাসা পোষণ করা যথেষ্ট নয়। প্রকৃত মুমিন হওয়ার জন্য অপরিহার্য হলো রাসুলের প্রতি সর্বোচ্চ ভালোবাসা। ধন-সম্পদ ও দুনিয়ার সব বস্তুর চেয়ে অধিক মহব্বত।
রাসূলের একান্ত সহচর ছিলেন হজরত আবু বকর রা.। হিজরতের সময় মক্কার অদূরে অবস্থিত সাওর গুহায় নবী করীম সা. ও হজরত আবু বকর রা. আত্মগোপন করেছিলেন। গুহার ভেতরে সাপ, বিচ্ছু থাকতে পারে ভেবে আবু বকর রা. নিজের প্রাণের মায়া ত্যাগ করে গুহার ভেতরে প্রবেশ করলেন এবং সাপের গর্তের মুখ বন্ধ করলেন তাঁর পাগড়ির কাপড় দিয়ে। শুধু একটি গর্ত বাকি ছিল, সেটির মুখে তিনি নিজের পা রাখলেন, যাতে মহানবী সা. কে কোনো সাপ বিচ্ছু দংশন করতে না পারে।
মহানবী সা. হজরত আবু বকরের কোলে মাথা রেখে একটু বিশ্রাম নিচ্ছিলেন। এমন সময় একটি বিষাক্ত বিচ্ছু হজরত আবু বকরকে দংশন করলে তিনি ব্যথায় অস্থির হয়ে পড়লেন। কিন্তু নড়লেন না। যাতে রাসূলের বিশ্রামের ব্যাঘাত না ঘটে। তবুও বিষের কষ্টে দু’ফোঁটা অশ্রু নির্গত হয়ে মহানবী সা. এর দেহ মোবারকে পড়লে তাঁর তন্দ্রা ভেঙ্গে যায়।
এমন অসংখ্য ঘটনা থেকে আমরা দেখতে পাই, সাহাবায়ে কেরাম রাসূল সা. জন্য কতোটা উৎসর্গ ছিলেন। নিজের জীবনের চেয়েও তারা রাসূল সা. কে বেশি ভালোবাসতেন। তাঁর অনুসরণ করতেন। ফলে উভয় জগতে আল্লাহ তায়ালা সাহাবায়ে কেরামকে সম্মানিত করেছেন। দান করেছেন শান্তি, সম্প্রীতি এবং সফলতা।
আপনার মতামত লিখুন :