শিরোনাম
◈ ভুটানের রাজার সঙ্গে থিম্পু পৌঁছেছেন তথ্য প্রতিমন্ত্রী ◈ চট্টগ্রামের জুতার কারখানার আগুন নিয়ন্ত্রণে ◈ জিয়াও কখনো স্বাধীনতার ঘোষক দাবি করেনি, বিএনপি নেতারা যেভাবে করছে: ড. হাছান মাহমুদ ◈ আওয়ামী লীগ সবচেয়ে বড় ভারতীয় পণ্য: গয়েশ্বর ◈ সন্ত্রাসীদের ওপর ভর করে দেশ চালাচ্ছে সরকার: রিজভী ◈ ইফতার পার্টিতে আওয়ামী লীগের চরিত্রহনন করছে বিএনপি: কাদের ◈ বাংলাদেশে কারাবন্দী পোশাক শ্রমিকদের মুক্তির আহ্বান যুক্তরাষ্ট্রের ফ্যাশন লবি’র ◈ দক্ষিণ আফ্রিকায় সেতু থেকে তীর্থ যাত্রীবাহী বাস খাদে, নিহত ৪৫ ◈ ২২ এপ্রিল ঢাকায় আসছেন কাতারের আমির, ১০ চুক্তির সম্ভাবনা ◈ ইর্ন্টান চিকিৎসকদের দাবি নিয়ে প্রধানমন্ত্রী’র সঙ্গে কথা বলেছি: স্বাস্থ্যমন্ত্রী

প্রকাশিত : ২১ নভেম্বর, ২০১৮, ১১:০০ দুপুর
আপডেট : ২১ নভেম্বর, ২০১৮, ১১:০০ দুপুর

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

অর্ধশত আসনে আসছে বিএনপির নতুন মুখ

সমকাল : আসন্ন একাদশ সংসদ নির্বাচনে অর্ধশত আসনে বিএনপির নতুন মুখ আসছেন। নবম সংসদ নির্বাচনে যারা দলীয় মনোনয়ন পেয়েছিলেন, তাদের কেউ মারা গেছেন, অনেকে বার্ধক্যজনিত বা নানা কারণে দলে নিষ্ফ্ক্রিয়। এসব আসনেই নতুন কাউকে মনোনয়ন দেওয়া হবে বলে দলীয় সূত্র নিশ্চিত করেছে। আবার জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ও ২০ দলীয় জোটকে আসন ছাড় দিতে গিয়ে মনোনয়নবঞ্চিত হতে পারেন ২০ থেকে ২৫ জন নেতা। অবশ্য দলের জন্য তাদের ব্যাপক অবদান বা ত্যাগী ভূমিকা থাকলে ভবিষ্যতে মূল্যায়নের আশ্বাস দেবে হাইকমান্ড।

সূত্র জানায়, বিএনপি মনোনয়নপ্রত্যাশী যোগ্য সব নেতাকেই মনোনয়নপত্র দাখিলের পরামর্শ দিয়েছে হাইকমান্ড। বাছাইতে মনোনয়ন ফরমে ভুল, ঋণখেলাপি ও তথ্য গোপনের কারণে মনোনয়ন বাতিল এড়াতে এমন কৌশল নিয়েছে দলটি। একইসঙ্গে একই আসনে একাধিক যোগ্য প্রার্থী থাকলে, আগামী ২৮ নভেম্বর মনোনয়ন প্রত্যাহারের শেষ দিন একজনকে চূড়ান্ত মনোনয়ন দেওয়া হবে।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন সমকালকে বলেছেন, বিএনপি একটি বৃহৎ রাজনৈতিক দল। দলে অনেক যোগ্য নেতা রয়েছেন। আন্দোলনের অংশ হিসেবে প্রতিকূল পরিবেশে আমরা নির্বাচনে অংশ নিচ্ছি। এ পরিস্থিতিতে মাঠে টিকে থেকে বিজয়ী হওয়ার মতো যোগ্য ও ত্যাগী নেতাদের দলীয় মনোনয়ন দেওয়া হবে। একইসঙ্গে জোটের শরিকদের যোগ্য নেতাদের মধ্যে আসন বণ্টন করা হবে।

দীর্ঘদিন দলের সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডে নিষ্ফ্ক্রিয়, দলের সিনিয়র নেতাদের মূল্যায়ন করতে এবং জোটকে ছাড় দেওয়ার কারণে বেশ কয়েকজন সাবেক সংসদ সদস্য ও নবম সংসদ নির্বাচনে মনোনয়নপ্রাপ্ত নেতা এবার মনোনয়নবঞ্চিত হবেন। এসব আসনে মনোনয়ন পাবেন নতুন মুখ। লে. কর্নেল (অব.) জয়নাল আবেদীনের পরিবর্তে নরসিংদী-৪ আসনের সাবেক সাংসদ মনোহরদী উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক সরদার সাখাওয়াত হোসেন বকুল, জামাল আহম্মেদ চৌধুরীর পরিবর্তে নরসিংদী-৫ আসনে অ্যাডভোকেট নেছার আহমেদ বা ইঞ্জিনিয়ার আশরাফ উদ্দিন বকুল, মহিলা দলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক শিরিন সুলতানার পরিবর্তে ঢাকা-৯ আসনে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, একেএম হাফিজুরের বদলে বগুড়া-২ আসনে আবদুল মোমিন তালুকদার খোকা, সাবিনা ইয়ামিনের বদলে নাটোর-২ আসনে তার স্বামী দলের সাংগঠনিক সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু, এসএ খালেকের ঢাকা-১৪ আসনে তার ছেলে এসএ সিদ্দিকী সাজু বা ঐক্যফ্রন্টের কোনো নেতা মনোয়ন পেতে পারেন। সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর সাজাপ্রাপ্ত হয়ে কারাবন্দি

থাকায় নেত্রকোনা-৪ আসনে তার স্ত্রী তাহমিনা জামান শ্রাবণী মনোনয়ন পাবেন। নিখোঁজ সাবেক সাংসদ এম ইলিয়াস আলীর সিলেট-২ আসনে তার স্ত্রী ও দলের চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা তাহসিনা রুশদির লুনা, সিরাজগঞ্জ-১ আসনে রুমানা মাহমুদের পরিবর্তে তার স্বামী দলের ভাইস চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ টুকু মনোনয়ন পাবেন।

এছাড়া নানা কারণে নবম সংসদ নির্বাচনে মনোনয়নপ্রাপ্ত রংপুর-৬ আসনের নূর মোহাম্মদ মন্ডল, কুড়িগ্রাম-২ আসনের তাজুল ইসলাম চৌধুরী, সিরাজগঞ্জ-৫ আসনের মেজর (অব.) মঞ্জুর কাদের, মাগুরা-১ আসনে ইকবাল আক্তার খান, ভোলা-২ আসনে বিজেপির আশিকুর রহমান, টাঙ্গাইল-৫ আসনের মাহমুদুল ইসলাম, গাজীপুর-৩ আসনে অধ্যাপক আবদুল মান্নান, সুনামগঞ্জ-১ আসনে রফিক চৌধুরী, ঢাকা-২০ আসনে ব্যারিস্টার জিয়াউর রহমান খান, গাজীপুর-২ আসনে হাসানউদ্দিন সরকার, ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনে উকিল আবদুস সাত্তার, বগুড়া-৪ আসনে জেডআইএম মোস্তফা আলীর আসনেও পরিবর্তন আসতে পারে। এসব আসনে নতুন মুখ মনোনয়ন পাবেন বলে সূত্র দাবি করেছে।

মৃত্যুবরণের কারণেও বেশ কিছু নতুন মুখ :২০০৮ সালে নবম সংসদ নির্বাচনে মনোনয়নপ্রাপ্ত বিএনপির বেশ কিছু সাবেক সাংসদ এবং নেতা মৃত্যুবরণ করেছেন। এমন প্রায় ২৫ জন নেতার আসনে এবার নতুন মুখকে মনোনয়ন দিচ্ছে বিএনপি। এরমধ্যে কিছু আসনে মৃত্যুবরণকারী নেতাদের স্ত্রী ও সন্তান, কিছু দলীয় নেতা এবং কিছু জোটের নেতাদের মনোনয়ন দিতে হচ্ছে।

সূত্র জানায়, বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য তরিকুল ইসলামের যশোর-৩ আসনে তার ছেলে দলের খুলনা বিভাগের সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ্য ইসলাম অনিক, বিএনপির সাবেক মহাসচিব খোন্দকার দেলোয়ার হোসেনের মানিকগঞ্জ-১ আসনে তার ছেলে খোন্দকার আবদুল হামিদ ডাবলু, দলের চেয়ারপারসনের সাবেক উপদেষ্টা হারুনার রশিদ খান মুন্নুর মানিকগঞ্জ-৩ আসনে মেয়ে আফরোজা খান রিতা অথবা গণফোরামের কেন্দ্রীয় নেতা মফিজুল ইসলাম খান কামাল, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী এম শামসুল ইসলামের মুন্সীগঞ্জ-৩ আসনে ছেলে সাইফুল ইসলাম, সাবেক ছাত্রদল সভাপতি নাসিরউদ্দিন আহম্মেদ পিন্টুর ঢাকা-৭ আসনে জোটের শরিক গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মহসিন মন্টু বা পিন্টুর স্ত্রী নাসিমা আক্তার কল্পনা, অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুবউদ্দিন আহমাদের ঢাকা-১২ আসনে বিএনপির মানবাধিকার বিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার নাসিরউদ্দিন অসীম বা ঐক্যফ্রন্টের কোনো নেতা, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আ স ম হান্নান শাহর ঢাকা-১৭ আসনে ঐক্যফ্রন্টের কোনো নেতা, সাবেক ছাত্রদল সভাপতি আজিজুল বারী হেলালের ঢাকা-১৮ আসনে ঐক্যফ্রন্টের কোনো কেন্দ্রীয় নেতা, বিএনপির সাবেক মহাসচিব আবদুল মান্নান ভূঁইয়ার নরসিংদী-৩ আসনে দলের আইনবিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট সানাউল্লাহ মিয়া বা সদর উপজেলা চেয়ারম্যান ও জেলা বিএনপির সহসভাপতি মঞ্জুর এলাহী কিংবা গণফোরামের কেন্দ্রীয় নেতা জয়নাল আবেদীন আফ্রিক, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সাবেক সদস্য সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর চট্টগ্রাম-২ আসনে তার ছোট ভাই গিয়াস কাদের চৌধুরী বা গোলাম আকবর খন্দকার এবং তার চট্টগ্রাম-৬ আসনে স্ত্রী ফরহাদ কাদের, কেএম হেমায়েতউল্লাহ আওরঙ্গের শরীয়তপুর-৩ আসনে তার স্ত্রী অ্যাডভোকেট তাহমিনা আওরঙ্গ বা মিয়া নূরউদ্দিন অপু, বিএনপি চেয়ারপারসনের সাবেক উপদেষ্টা মোশাররফ হোসেনের ফেনী-৩ আসনে আবদুল আউয়াল মিন্টু, সাবেক হুইপ সৈয়দ ওয়াহিদুল আলমের চট্টগ্রাম-৪ আসনে কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মোহাম্মদ ইবরাহিমকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে।

এ ছাড়াও মোহাম্মদ আলীর মৃত্যুতে নেত্রকোনা-৫ আসন, এএম বদরুজ্জামান খানের নারায়ণগঞ্জ-২ আসন, সাবেক সাংসদ মোজাহার আলী প্রধানের জয়পুরহাট-১ আসন, সাবেক ডেপুটি স্পিকার আখতার হামিদ সিদ্দিকীর নওগাঁ-৩ আসন, সাবেক প্রতিমন্ত্রী ফজলুর রহমান পটলের নাটোর-১ আসন, শরীফ খসরুজ্জামানের নড়াইল-২ আসন, মুহা. অহিদুল ইসলাম বিশ্বাসের চুয়াডাঙ্গা-১ আসন, ইসলামী ঐক্যজোটের সাবেক চেয়ারম্যান মুফতি ফজলুল হক আমিনীর ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসন, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সাবেক সদস্য এম কে আনোয়ারের কুমিল্লা-২ আসন, সাবেক প্রতিমন্ত্রী মো. নূরুল হুদার চাঁদপুর-২ আসন, হামিদুল্লাহ খান বীরপ্রতীকের ঢাকা-১৫ আসনেও দল ও জোট থেকে নতুন মুখ আসবে।

জোটগত কারণে মনোনয়নবঞ্চিত হবেন :২০ দলীয় জোট ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টকে আসন ছাড় দিতে বেশ কিছু বিএনপি নেতাকে মনোনয়নবঞ্চিত হতে হবে। এদের মধ্যে অ্যাডভোকেট আহমেদ আজম খানের পরিবর্তে টাঙ্গাইল-৮ আসনে কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী এবং বিএনপির সাবেক সাংসদ নাজিমউদ্দিন আহমেদের পরিবর্তে লক্ষ্মীপুর-১ আসনে এলডিপির যুগ্ম মহাসচিব শাহাদাত হোসেন সেলিম মনোনয়ন পেতে পারেন। শেখ সুজাত মিয়ার পরিবর্তে হবিগঞ্জ-১ আসনে সাবেক অর্থমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ নেতা শাহ এএমএস কিবরিয়ার ছেলে গণফোরামে সদ্য যোগদানকারী শাহ রেজা কিবরিয়াকে মনোনয়ন দিতে পারে। অ্যাডভোকেট আবেদ রাজার বদলে মৌলভীবাজার-২ আসনে ডাকসুর সাবেক ভিপি ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সুলতান মোহাম্মদ মনসুর, গণফোরামের নির্বাহী সভাপতি সুব্রত চৌধুরীকে চট্টগ্রাম-১৪ বা ঢাকা-৬ আসনে মনোনয়ন দেওয়া হবে। এর মধ্যে নবম সংসদ নির্বাচনে চট্টগ্রামের আসন থেকে এলডিপি সভাপতি কর্নেল (অব.) অলি আহমদ এবং ঢাকার আসন থেকে সাদেক হোসেন খোকা মনোনয়ন পেয়েছিলেন। এবার অবশ্য খোকার পরিবর্তে তার ছেলে প্রকৌশলী ইশরাক হোসেন মনোনয়ন চাইছেন। কর্নেল অলি ওই নির্বাচনে দুটি আসন থেকে প্রতিদ্বন্দিআ করেন। এবার সুব্রতকে চট্টগ্রামে দিলে অলিকে ছাড় দিতে হবে এবং ঢাকায় দিলে খোকার ছেলেকে ছাড় দিতে হবে।

এ ছাড়া অসুস্থতাজনিত কারণে ময়মনসিংহ-৪ আসনের সাবেক সাংসদ ও প্রতিমন্ত্রী একেএম মোশাররফ হোসেন এবং রাজশাহী-৩ আসনে অসুস্থ কবির হোসেনসহ বেশ কিছু বয়স্ক ও নিষ্ফ্ক্রিয় নেতার পরির্বতে নতুন মুখকে মনোনয়ন দেওয়া হবে।

বিএনপির সাবেক সাংসদ এবিএম আশরাফ উদ্দিন নিজানের বদলে লক্ষ্মীপুর-৪ আসনে জেএসডি সভাপতি আ স ম আবদুর রব, আজিজুল বারী হেলালের পরিবর্তে জেএসডির সহসভাপতি তানিয়া রব এবং মাজেদা আহসানের পরির্বতে কুমিল্লা-৪ আসনে জেএসডির সাধারণ সম্পাদক আবদুল মালেক রতনকে মনোনয়ন দেওয়া হবে।

এ ছাড়াও নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না বগুড়া-২ ও ঢাকা-১৭ আসন, ঐক্যের নেতা এসএম আকরাম হোসেন নারায়ণগঞ্জ-২, নঈম জাহাঙ্গীর জামালপুর-৩ এবং কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের বঙ্গবীর আবদুল কাদের সিদ্দিকী ও তার দলের জন্য টাঙ্গাইলে এক বা একাধিক আসন ছাড়তে হতে পারে বিএনপিকে। এতে ওইসব আসনে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী ও নবম সংসদ নির্বাচনে মনোনয়নপ্রাপ্ত নেতারা বঞ্চিত হবেন।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়