শেখ ফরিদ আহমেদ ময়না, সাতক্ষীরা : আবারও মায়ের প্রভাবে পুলিশের খাঁচা থেকে বেরিয়ে গেলেন সাতক্ষীরার নারী সাংসদ রিফাত আমিন তনয় রাশেদ সরোয়ার রুমন। সোমবার সন্ধ্যায় রুমন তার পাঁচ সহযোগী নিয়ে শহরতলির একটি বাগান বাড়িতে বসে ইয়াবা সেবন করে ফুর্তি করছিলেন। জেলা গোয়েন্দা পুলিশ জানিয়েছে গোপন সূত্রে খবর পেয়ে রুমনকে নবাদকাটিতে মিঠু খানের বাগানবাড়ি থেকে ইয়াবা খেয়ে বেসামাল থাকা অবস্থায় আটক করা হয়।
তার সঙ্গে ছিল আরও পাঁচ মাদকাসক্ত যুবক। তাদেরকে নিয়ে আসা হয় জেলা গোয়েন্দা কার্যালয়ে। গভীর রাতে তার মা সাতক্ষীরা সংরক্ষিত মহিলা আসন ৩১২ এর সংসদ সদস্য রিফাত আমিনের সুপারিশে পুলিশ তাকে ও তার সহযোগীদের ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়। তবে পুলিশ বলেছে রুমনকে গ্রেফতার করার মতো আইনগত শক্ত উপাদান ছিল না।
জানা যায়, দীর্ঘদিন সৌদি প্রবাসে থাকার পর রাশেদ সরোয়ার রুমন দেশে ফিরে জড়িয়ে পড়েন নানা অপরাধে। এর আগে ২০১৪ এর সংসদ নির্বাচনের পর তার মা রিফাত আমিন সংরক্ষিত মহিলা আসনের সংসদ সদস্য হওয়ার পর থেকে তার দাপট আরও বেড়ে যায়। একের পর এক ঘটনা ঘটাতে থাকেন তিনি।
তথ্যানুসন্ধানে জানা যায়, ২০১৬ এর ১৯ মে রুমন তার সাংসদ মায়ের লাইসেন্সকৃত অস্ত্র ও গুলি নিয়ে সংসদ সদস্যের স্টীকারযুক্ত গাড়ি ড্রাইভ করে পৌঁছে যান শ্যামনগরের বরসা রিসোর্টে। রাতে সেখানে তিনি তিন তরুনিকে নিয়ে টালমাটাল অবস্থায় থাকেন। খবর পেয়ে পুলিশ তাকে আটক করে। তাকে কয়েকদিনের জন্য কারাবাস করতে হয়। যানবাহন আইনে তার বিরুদ্ধে একটি নামমাত্র মামলা হয়। ২০১৭ সালের ১৭ জানুয়ারি রুমন সিরাজুল ইসলাম নামের এক ব্যবসায়ীর কাছে ৫ লাখ টাকা চাঁদা চায়। পরে ভোমরায় নিয়ে তার কাছ থেকে ছিনিয়ে নেয় ২৫ হাজার টাকা।
সে বছরের ৭ জুলাই রুমন তার সহযোগী গোল্ড মিলনের সাথে একজোট হয়ে ভারতীয় গরু ব্যবসায়ী সাহেব আলিকে মারধর করে জিম্মি করে নগদ টাকা ও একটি স্বাক্ষরিত চেক কেড়ে নেয়। ১৩ আগস্ট তার মাদকাসক্ত স্ত্রী টুম্পাকে সিরাজুল ইসলাম বুলেট নামের এক যুবকের পাশে বসিয়ে ছবি তুলে ব্লাক মেইলিং করার চেষ্টা করে রুমন । এ নিয়ে তার বিরুদ্ধে মামলা হয়। ১৬ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় রুমন জেলা যুবলীগ নেতা জুলফিকার আলি উজ্জ্বলকে রড দিয়ে মারপিট করে আহত করে।
এরপরই নেশা করে গণরোষের মুখে প্রাইভেট কার ড্রাইভ করে ভোমরার দিকে পালিয়ে যাবার পথে একটি কালভার্টে আঘাত করে দুর্ঘটনার কবলে পড়েন রুমন। এ সময় পালিয়ে যান রুমন। ১১ সেপ্টেম্বর সাতক্ষীরার গোল্ড মিলন স্বর্ণ চোরাচালান মামলায় আটক হলে রুমন তার সঙ্গীদের নিয়ে তার বাগানবাড়ি দখল করতে যান। এ সময় স্থানীয়রা তাকে গনপিটুনি দেয়। এদিন ওই বাড়িতে থাকা সোনা টাকা ও ১৩ টি ভারতীয় জাতের গরু লুট করে নিয়ে যাবার অভিযোগ ওঠে রুমন ও তার বাহিনীর বিরুদ্ধে। এসব ঘটনায় দুটি মামলা হলেও কেউ তাকে আটকে রাখতে পারেনি।
সর্বশেষ ১৯ নভেম্বর সোমবার রাতে ইয়াবা সেবন অবস্থায় ধরা খেয়েও মায়ের ক্ষমতার জোরে পুলিশের জাল ছিড়ে বেরিয়ে গেলেন রুমন । আর এভাবেই সাংসদ পুত্র ফের সংবাদ শিরোনাম হলেন।
আপনার মতামত লিখুন :