মো: মারুফুল আলম: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উইমেন এন্ড জেন্ডার স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক সানজিদা নীরা বলেছেন, ‘মি টু’র মুখ্য চাওয়াটি ছিলো, নিপীড়নকারীকে এক ধরণের সামাজিক অস্বস্তিকর অবস্থা এবং লজ্জাজনক অবস্থায় ফেলে দেওয়া। যেখানে মেয়েরা তাদের জড়তা থেকে বেরিয়ে এসে কথা বলতে পারে এবং মেয়েদেরকে যেভাবে লজ্জাজনক অবস্থায় ফেলে দেওয়া হতো, ‘মি টু’র মাধ্যমে ঠিক সেভাবে নির্যাতনকারীদের উপর লজ্জাজনক অবস্থা তৈরি করা। মঙ্গলবার বিবিসি সাক্ষাতকারে তিনি এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, বিচারিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে নারী নির্যাতনকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ বিষয়টি ভিন্ন। প্রমাণাদির ব্যাপার আছে তাই তা মামলায় টিকবে কি টিকবে না বলা যায় না। তাছাড়া ঘটনাগুলো অনেক আগের। ‘মি টু’র চাওয়া সেটি নয়। ‘মি টু’র মুখ্য চাওয়াটি ছিলো সামাজিকভাবে নিপীড়নকারীর মানহানি ঘটানো। ‘মি টু’র মাধ্যমে এ পর্যন্ত আমরা যাদের কথা শুনেছি তারা অনেকেই নিজ নিজ কর্মক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠিত ব্যক্তি। আমাদের ধারণা ছিলো যে, তারা সকলেই নিষ্পাপ। কিন্তু ‘মি টু’র মাধ্যমে এই ধারণাগুলো ভাঙ্গা হচ্ছে। আমি মনে করি নিপীড়নকারীদের উপর এটি একটি ধাক্কা।
প্রসঙ্গত, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অতীতে যৌন নির্যাতনের শিকার হওয়া অনেক নারী নিপীড়নকারীর নাম প্রকাশ করছেন। তারা বলছেন ‘মি টু’ আন্দোলনে অনুপ্রাণিত হয়েই তাদের এই কার্যক্রম।
সনজিদা নীরা বলেন, কিছু সামাজিক প্রতিক্রিয়া হবে, এ প্রত্যাশাতেই ‘মি টু’ আন্দোলন। বাংলাদেশের সামাজিক প্রেক্ষাপটটা আমরা সবাই জানি যে, এখানে নির্যাতিত নারী মুখ খুলে কথা বলতে পারে না। দীর্ঘদিন যাবত নির্যাতনের শিকার হওয়া নারীরা মুখ বুজে সহ্য করে গেছেন। এখন ‘মি টু’র মাধ্যমে একটি ধাক্কা লেগেছে। আমরা যেটা বলে থাকি যে, কোন ঘটনা ঘটাবার জন্য একটি উপযুক্ত সময়ের প্রয়োজন হয়। সে সময়টা এখন এসেছে।
তিনি আরও বলেন, নিপীড়নকারীকে নিশ্চিতভাবেই যে নিপীড়ন থেকে মুক্ত করতে পারবে এভাবে বলাটা মুশকিল। উদাহরণস্বরুপ বিভিন্ন কর্মক্ষেত্রে যৌন নিপীড়ন বিরোধী নীতিমালা কার্যকর রয়েছে। তারপরও আমরা জানি, নিপীড়ন হয়ে চলেছে। একইভাবে ‘মি টু’র র মাধ্যমে ঘটনাগুলো সামনে আসলে তারা নিপীড়ন বন্ধ করে দেবে তা না। ‘মি টু’র যে প্রভাবটি হচ্ছে, এই যে মুখ খোলা একেবারেই বন্ধ ছিলো, সেটি এখন নাই। যখন নিপীড়নকারী নিপীড়ন করবে তখন মেয়েটি মুখ খুলবার মতো জোর পাবে।
আপনার মতামত লিখুন :