তুষার আবদুল্লাহ : হিরো আলমের সঙ্গে পরিচয় হয়েছে একটু দেরি করেই। সহকর্মীরা তাকে নিয়ে তৈরি ট্রল দেখিয়ে মূলত পরিচয় করিয়ে দেন। আমি পরে নিজ উদ্যোগেই তার মিউজিক ভিডিও দুই-একটি দেখেছিলাম। ব্যস আর দেখা হয়ে উঠেনি। আমাদের দর্শক রুচির নানা শ্রেণি বিভাগ আছে। তিনি হয়তো কোনো একটি শ্রেণিকে বিনোদন দিচ্ছেন। তার একটি ভোক্তা শ্রেণি তৈরি হয়েছে। তারা তাকে অনুসরণ ও পছন্দের প্রকাশ ঘটিয়েছেন ইউটিউব, ফেসবুকে। হিরো আলমের মতো আরো কিছু মিউজিক ভিডিও আমার নজরে এসেছিলো ইউটিউব চ্যানেলে ঘুরতে গিয়ে। তারপর অনেকদিন হিরো আলম আড্ডার বিষয় হয়ে আসেনি।
হঠাৎই একজন সহকর্মী বললেন, গুগল সার্চে বা ইউটিউব সার্চে বাংলাদেশের ভিডিও হিসেবে শীর্ষে আছে হিরো আলমের মিউজিক ভিডিও বা হিরো আলম। এই খবর শোনে চমকে উঠেছিলাম যেমন, তেমনি শঙ্কিতও হয়েছিলাম। শঙ্কার কারণ এই আমরা সবাই দেখছি পরিচিত টেলিভিশন ধারণাটি বদলে যাচ্ছে দ্রুত। এই ধারণার দখল নিচ্ছে ইউটিউব এবং এটি এখন আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম। বিশ্বের যেকোনো প্রান্তের দর্শক আমার ইউটিউবের ভোক্তা। ওই দর্শক বাংলাদেশ থেকে তোলা বা বাংলাভাষায় তুলে দেয়া ইউটিউব ভিডিও দেখে, আমাদের সংস্কৃতি সম্পর্কে একপ্রকার ধারণা পাবে। এখন যিনি হিরো আলমের মিউজিক ভিডিও দেখবেন, তিনি আমাদের সংগীত বা সংস্কৃতির ধারণা এই মাপেই বিবেচনা করবেন। সাংস্কৃতিক দেউলিয়াপনার একপ্রকার প্রকাশ ঘটে হিরো আলমের এই মিউজিক ভিডিওর মাধ্যমে।
কিন্তু তাই বলে নাগরিক হিসেবে তার অধিকার ক্ষুণ্ণ করা হবে তা নয়। তিনি দেশের যেকোনো নির্বাচনে অংশ নিতেই পারেন। তার যোগ্যতার প্রশ্ন তোলার দায়িত্ব গণমাধ্যমের নয়। কাউকে শ্রেণি বা বর্ণ বিদ্বেষমূলক দৃষ্টিতে দেখার অবকাশ নেই। হিরো আলম নিয়ে মূলধারা ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের অতিমাতম পাঠক দর্শকের দৃষ্টি গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু থেকে স্থুল দিকে সরিয়ে দিয়েছে। ভোট কেমন হবে, অংশগ্রহণমূলক হবে কিনা? রাজনৈতিক দলগুলো ভোটারদের কাছে কি ইশতেহার তুলে ধরছে, এই প্রশ্নের উত্তর যখন ভোটারদের খোঁজ করার কথা। তখন তারা চিন্তিত হয়ে পড়েছেন হিরো আলমের প্রার্থী হওয়ার যোগ্যতা, অযোগ্যতা নিয়ে। চিন্তার এই অনুশীলন দুঃখজনক। লেখক : বার্তা প্রধান, সময় টেলিভিশন
আপনার মতামত লিখুন :