শিরোনাম
◈ সাতক্ষীরায় এমপি দোলনের গাড়িতে হামলা ◈ চুয়াডাঙ্গার পরিস্থিতি এখন মরুভূমির মতো, তাপমাত্রা ৪১ দশমিক  ৫ ডিগ্রি ◈ ফরিদপুরে পঞ্চপল্লীতে গণপিটুনিতে ২ ভাই নিহতের ঘটনায় গ্রেপ্তার ১ ◈ মিয়ানমারের ২৮৫ জন সেনা ফেরত যাবে, ফিরবে ১৫০ জন বাংলাদেশি: পররাষ্ট্রমন্ত্রী ◈ ভারতে লোকসভা নির্বাচনের প্রথম দফায় ভোট পড়েছে ৫৯.৭ শতাংশ  ◈ ভবিষ্যৎ বাংলাদেশ গড়ার কাজ শুরু করেছেন প্রধানমন্ত্রী: ওয়াশিংটনে অর্থমন্ত্রী ◈ দাম বেড়েছে আলু, ডিম, আদা ও রসুনের, কমেছে মুরগির  ◈ প্রার্থী নির্যাতনের বিষয়ে পুলিশ ব্যবস্থা নেবে, হস্তক্ষেপ করবো না: পলক ◈ ২০২৫ সালের মধ্যে ৪৮টি কূপ খনন শেষ করতে চায় পেট্রোবাংলা ◈ বিনা কারণে কারাগার এখন বিএনপির নেতাকর্মীদের স্থায়ী ঠিকানা: রিজভী

প্রকাশিত : ২০ নভেম্বর, ২০১৮, ০৪:০৮ সকাল
আপডেট : ২০ নভেম্বর, ২০১৮, ০৪:০৮ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

‘বুদ্ধিমানই শুধু রঙ বদলায়’

মহিউদ্দিন খান মোহন : সত্তর দশকের শেষভাগে প্রখ্যাত সঙ্গীত পরিচালক আজাদ রহমানের স্ব-কণ্ঠে গীত একটি গান বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছিল। ‘ডোরাকাটা দাগ দেখে বাঘ চেনা যায়..’ গানটি দস্যু বনহুর চলচ্চিত্রে ব্যবহার হয়েছিল। সে গানটির শেষ কয়েকটি লাইন ছিল-‘ চক্করে পড়ে কেউ খায় ঘুরপাক/কেউ কাঁদে কেউ হাসে কেউ নির্বাক/বোকার হদ্দ লোকে, কপাল ঠুকে/বুদ্ধিমানেই শুধু রঙ বদলায়’। আসলেই কী বুদ্ধিমানেরা রঙ বদলায়?এ প্রশ্নের উত্তরে কেউ হ্যাঁ বলবেন,কেউ দ্বিমত পোষণ করবেন। বলবেন রঙ বা ভোল পাল্টানো বুদ্ধিমানের কাজ নয়, ওটা সুযোগ সন্ধানী অর্থাৎ ধান্ধাবাজদের কাজ। আমাদের সমাজে রঙ বদলানো মানুষের দেখা হরহামেশাই মেলে। যে কোনো ঘটনায় চোখের পলকে রঙ বদল অর্থাৎ পক্ষ বা ভূমিকা বদলে ফেলতে এরা খুবই ওস্তাদ। আর সবচেয়ে মজার বিষয় হলো,সে রঙ বদলের পক্ষে এরা চমৎকার সব যুক্তি হাজির করতে পারঙ্গম।

খেলার সিজনকে সামনে রেখে বিভিন্ন ক্লাব খেলোয়াড় কেনায় ব্যস্ত হয়ে পড়ে। এটা স্বাভাবিক ঘটনা। আমাদের দেশ শুধু নয়, পৃথিবীর সব দেশেই খেলোয়াড় কেনা-বেচার প্রতিযোগিতা চলে ক্লাবগুলোর মধ্যে। আর খেলোয়াড়রাও নিজেদের দাম বাড়ানোর মওকা হাত ছাড়া করে না। চড়া দামের বিনিময়ে পুরানো ক্লাব ছেড়ে অন্য ক্লাবে যোগ দেয়। খেলোয়াড়দের এই জার্সি বদলকে কেউ অসঙ্গত, অনৈতিক বা অস্বাভাবিক মনে করেন না। কারণ, তারা টাকার জন্য খেলেন। যে ক্লাব টাকা বেশি দেবে, তারা সে ক্লাবের পক্ষেই এক বছর খেলবেন।

খেলার মাঠের সে ট্রেন্ড এবার আমাদের রাজনৈতিক মাঠে বেশ ভালোভাবেই আছড় করেছে। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে কতিপয় রাজনৈতিক নেতার অবস্থান বদল খেলোয়াড়দের দল বদলের কথাই মনে করিয়ে দেয়। সবচেয়ে বিস্ময়কর ব্যাপার হলো, দু’দিন আগেও যিনি ছিলেন বিশেষ একটি দলের অনুগত,নেতার আদর্শ বাস্তবায়নে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ এক সৈনিক, কী এক জাদুমন্ত্রের বলে একদিনেই তার আদর্শ বদলে যাচ্ছে! আজীবন লালিত আদর্শের সম্পূর্ণ বিপরীত মেরুতে অবস্থান নিতে এতোটুকু দ্বিধা করছেন না! আমাদের দেশের রাজনীতিতে দল বা পক্ষ বদল নতুন কিছু নয়। নানা কারণে নেতারা জার্সি বদল করেন। তবে,দোহাই দেন ‘দেশ, জাতি আর গণতন্ত্রে’র স্বার্থ রক্ষার। ভাবখানা এই- যেন তিনি পার্টি বদল না করলে দেশ, জাতি আর গণতন্ত্র কোনো এক মহাপ্লাবনে ভেসে যেতো!

তবে, নির্বাচনকে সামনে রেখে এবারের দল বদল যেন একটু ভিন্নমাত্রা ধারণ করেছে। রাজনীতির ভাষায় এটাকে অবশ্য বলা হয় ‘মেরুকরণ’। তবে, অনেকেই এটাকে নৈতিক স্খলনও বলছেন। যে ব্যক্তিটি আজীবন বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদের কথা প্রচার করেছেন, জ্ঞানগর্ভ বক্তৃতা দিয়ে শিশু-কিশোর-তরুণদের সে মতবাদ সম্বন্ধে বুঝিয়েছেন এবং ওই মতবাদে বিশ্বাসী হতে উদ্বুদ্ধ করেছেন, তিনি এক বা দুটি সংসদীয় আসনে মনোনয়নের লোভে এখন দাঁড়িয়েছেন সে মতবাদের সম্পূর্ণ বিপরীত মেরুতে। আজীবন নিন্দা করে এসেছন যে দলটির এবং নেত্রীর, এখন সে দলের এবং নেত্রীর নেতৃত্ব মেনে নিতে বিন্দুমাত্র দ্বিধা করছেন না! আবার বাঙালী জাতীয়তাবাদের ধারকহিসেবে যিনি এতোকাল নিজেকে পরিচয় দিয়েছেন, বঙ্গবন্ধুর আদর্শ তার বুকের গভীরে ঠিক ব্যাংকের লকারে রাখা দ্রব্যের মতো সুরক্ষিত আছে বলে বুক ফুলিয়ে বলেছেন, তিনি গিয়ে উঠেছেন এমন এক মঞ্চে, যেখানে বাঙালি জাতীয়তীয়তাবাদ পরিত্যাজ্য, বঙ্গবন্ধুর আদর্শ যেখানে অনুসরণীয় নয়। রঙ বদলের এ তালিকায় আছেন সাবেক রাষ্ট্রপতি, রাষ্ট্রপতি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী, মন্ত্রী. এমপিসহ অনেকেই। স্বল্প এ পরিসরে তাদের নামধাম উল্লেখ নিষ্প্রয়োজন। রাজনীতির হাল নাগাদ খবর যারা রাখেন, তাদের কাছে ওই মুখগুলো অত্যন্ত সুপরিচিত।

ভাবুন তো একবার, যে ব্যক্তিটি তার বক্তৃতায় বলে বেড়াতেন-‘ সুন্দরবনের একটি বাঘ এসে যদি বলে- আমি এখন থেকে রক্ত-মাংস কিছুই খাবো না, শুধু লাবড়া খাবো, সেটা যেমন বিশ্বাসযোগ্য নয়, তেমনি আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় গিয়ে গণতান্ত্রিক আচরণ করবে তাও বিশ্বাসযোগ্য নয়।’ এ অবিস্মরণীয় বাণীদাতা এখন নৌকায় চড়ে আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় নেওয়ার জন্য ব্যাকুল। আজ যদি তাকে প্রশ্ন করা হয়, সুন্দর বনের বাঘগুলো কি এখন লাবড়া খেতে শুরু করেছে? কী জবাব দেবেন তিনি?

রঙ বদলের এই ভরা মৌসুমে আমরা আরো যে কতো লীলা খেলা দেখবে কে জানে!

লেখক: সাংবাদিক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক।

 

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়