শিমুল মাহমুদ : বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারবেন। এ নিয়ে এখন পর্যন্ত কোনো শঙ্কা নেই বলে জানিয়েছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
সোমবার দুপুরে গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী প্রার্থীদের সাক্ষাৎকার গ্রহণের বিরতিতে সাংবাদিকদের সঙ্গে মির্জা ফখরুল এ কথা বলেন।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, ‘আওয়ামী লীগের নেতারা কে কী বললেন, তার ওপর খুব বেশি কিছু নির্ভর করে না। তিনি এখন পর্যন্ত নির্বাচন করার যোগ্য আছেন। খালেদা জিয়া নির্বাচন করতে পারবেন বলে আমরা বিশ্বাস করি।’
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, গণতন্ত্র ফিরে পাওয়ার জন্যে এবং দেশের মানুষের ভোটের অধিকারকে ফিরিয়ে আনার জন্যে বিরোধী দলগুলো যে গণতান্ত্রিক আন্দোলন শুরু করেছে তার-ই অংশ হিসেবে আমরা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছি। এই নির্বাচনকে গণতান্ত্রিক আন্দোলনের হাতিয়ার হিসেবেই ব্যবহার করছি।
বিএনপির এই নেতা বলেন, নির্বাচন কমিশন এখনো লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করতে পারেনি। তফসিল ঘোষণার পরেও বিএনপির নেতা–কর্মীদের গ্রেপ্তার অব্যাহত রয়েছে। সরকার একটি নেতিবাচক পরিস্থিতি তৈরি করেছে। এভাবে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি হয় না।
তিনি বলেন, শত প্রতিকূলতার মধ্যেও ক্ষমতার পরিবর্তন আমরা বিশ্বাস করি। আর বিশ্বাস করি বলেই সবকিছু জেনেও একটা অসমতল ভূমিতে, একটা আনইভেন্ট প্লেইং ফিল্ড। যেখানে সরকার সম্পূর্ণভাবে কর্তৃত্ব করছে, এবং তার সমস্ত নীলনকশা কায়েম করছে।
তিনি বলেন, আপনারা জানেন যে এই প্রতিকূলতা কখনো এখন পর্যন্ত লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করার জন্য যথেষ্ট নয়। বিরোধী দলের কোনো দাবি তারা গ্রাহ্য করেনি, নির্বাচনকালীন সরকার গঠন করেননি, নিরপেক্ষ সরকার গঠন করেননি। তারা সংসদ ভাঙেন নি এবং প্রধানমন্ত্রী যে কথা দিয়েছিলেন নতুন করে তফসিল ঘোষণার পরে কোনো গ্রেপ্তার করা হবে না এবং নতুন করে কোনো মামলা দেয়া হবে না তা অব্যাহত রয়েছে। গতকালও আমরা খবর পেয়েছি যে সাক্ষাতকারে অংশ নেয়ার জন্য যশোরের ভাইস প্রেসিডেন্ট যে হোটেলে ছিলেন তাকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। এখন পর্যন্ত আমরা তার খবর পাইনি।
তিনি আরো বলেন, আমরা প্রায়ই দেখছি গ্রেপ্তার করা হচ্ছে এবং কারাগারে নেয়া হচ্ছে৷ আমাদের যারা সম্ভাব্য প্রার্থী, যারা যোগ্য তাদেরকে মামলা দিয়ে জামিন না দিয়ে, জামিন শুনানিকে আরো বিলম্বিত করা হচ্ছে এবং সেটা নির্বাচনের পরে দেয়া হচ্ছে। এটা একটি নতুন কৌশল।
ফখরুল বলেন, সরকার প্রশাসন নিম্ন আদালতকে ব্যবহার করে এই নির্বাচনের উপর প্রভাব বিস্তার করছে। আমরা এই বিষয়গুলো নির্বাচন কমিশনকে জানিয়েছি, সরকারের গোচরে এনেছি। কিন্তু এখন পর্যন্ত তাদের লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করার কোনো আগ্রহ দেখা যায়নি। তারা যে নেতিবাচক অবস্থা তৈরি করছে এই অবস্থায় কোনো নিরপেক্ষ নির্বাচন ও সুষ্ঠু হবে বলে আমি মনে করি না।
তিনি বলেন,আমরা আবারও বলছি অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য অবিলম্বে সমস্ত গ্রেপ্তার বন্ধ করা সমস্ত রাজবন্দিদের মুক্তি দেয়া। বিশেষ করে বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্তি দেওয়া অত্যন্ত জরুরি বলে আমরা মনে করি। এটাই আমাদের আহ্বান থাকবে সকলের প্রতি।
প্রার্থীতা নিয়ে কোনো কোন্দলের আশংকা আছে কিনা এমন প্রশ্নে ফখরুল বলেন, আমাদের প্রার্থীতা নিয়ে কোনো কোন্দল নেই। যিনি নমিনেশন পাবেন তার পক্ষে সবাই কাজ করবেন। এটাকে আমরা চূড়ান্ত আন্দোলনের পথ হিসেবে নিয়েছি। এই নির্বাচনে নির্ভর করছে বাংলাদেশে গণতন্ত্রের ভবিষ্যত।
বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘প্রার্থী বাছাইয়ের ক্ষেত্রে মানদণ্ড হবে নিঃসন্দেহে যার যার দলের প্রতি আনুগত্য সবচেয়ে বেশি থাকবে, গণতন্ত্রের আনুগত্য বেশি থাকবে, যারা বাংলাদেশে একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে চায়; সেই সকল প্রার্থীরাই এখানে নমিনেশন পাবেন। তবে বেশির ভাগ প্রার্থী আমাদের এই বিষয়টির প্রতি একমত, তারা ঐক্যবদ্ধভাবে এই আন্দোলনে অংশগ্রহণ করবেন বলে কথা দিয়েছেন’।
আজ গুলশান কার্যালয়ে বরিশাল ও খুলনা বিভাগের মনোনয়নপ্রত্যাশীদের সাক্ষাৎকার চলছে। সকাল থেকে বরিশাল বিভাগের ১৮৩ জন মনোনয়নপ্রত্যাশী সাক্ষাৎকার দিয়েছেন। দুপুরে বিরতির পর খুলনা বিভাগের মনোনয়নপ্রত্যাশীদের সাক্ষাৎকার শুরু হবে।
আপনার মতামত লিখুন :