তরিকুল ইসলাম সুমন: স্বাদের মাছ মহাশোল। এটি দেখতে অনেকটা মৃগেল মাছের মতো হলেও এই উপমহাদেশের ‘স্পোর্ট ফিশ’ হিসেবে পরিচিত। যা অন্য কার্প মাছ থেকে বেশি দামে বিক্রি হয়ে থাকে। বাংলাদেশে বিপন্ন প্রায় ৬৪ প্রজাতির মধ্যে এটিও একটি। তবে আশার কথা হলো এ মাছ নিয়ে বিস্তর গবেষণা শুরু করেছে ময়মনসিংহ মৎস্য ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিএফআরআই)।
বিএফআরআই সূত্র জানায়, এ-মাছের জন্ম ভারতের মেঘালয় রাজ্যের পাদদেশে নেত্রকোনার সীমান্তবর্তী সোমেশ্বরী এবং কংস নদীতে। কয়েক দশক আগেও বাংলাদেশের পাহাড়ি অঞ্চল ময়মনসিংহ, সিলেট, দিনাজপুর এবং পার্বত্য চট্টগ্রামের খরস্রোতা নদী, ঝরনা ও লেকে পাওয়া যেত। নদীর পাথর-নুড়ির ফাঁকে ফাঁকে পেরিফাইটন নামের শ্যাওলাই মহাশোলের প্রধান খাবার। কার্প জাতীয় অন্যান্য মাছের তুলনায় এর কম ডিম ধারণক্ষমতাই বিলুপ্তির অন্যতম কারণ হিসেবে দেখছেন মৎস্য বিজ্ঞানীরা।
বিএফআরআইয়ের মহাপরিচালক ড. ইয়াহিয়া মাহমুদ এই প্রতিবেদককে জানান, বাংলাদেশে মহাশোলের বিলুপ্তির কারণে বিএফআরআই নেপাল থেকে এ মাছের পোনা আমদানি করেছিল আশির দশকে। পরে পুকুরে পোনা ছেড়ে প্রজনন কৌশল ও জিনপুল সংরক্ষণ করা হয়। সম্প্রতি বিএফআরআই থেকে এ মাছের পোনা উৎপাদনসহ চাষাবাদ কৌশল উদ্ভাবন করা হয়। উৎপাদিত মহাশোলের পোনা এরই মধ্যে রাঙ্গামাটি কাপ্তাই লেক, সোমেশ্বরী নদী এবং কংস নদে অবমুক্ত করা হয়েছে। বর্তমানে ময়মনসিংহ এবং তার আশেপাশের বিভিন্ন জেলা ছাড়াও ভোলা, ফেনী, খুলনা এবং সিলেট অঞ্চলে এ মাছের চাষ করা হচ্ছে।
তিনি জানান, মহাশোল বাণিজ্যিকভাবে চাষের ব্যপক সম্ভাবনা রয়েছে। বিভিন্ন জায়গায় পোনা অবমুক্তকরণের দিকে আমরা বেশি জোর দিচ্ছি। মাছটি ব্যাপক পরিমাণে খাদ্য গ্রহণ করলেও দ্রুত বর্ধনশীলতা আর ডিম ধারণ ক্ষমতা বৃদ্ধির বিষয়ে আমরা গবেষণা করছি।
উল্লেখ্য, দেশে ২৬০ প্রজাতির মিঠা পানির মাছের মধ্যে ৬৪ প্রজাতির মাছ বিলুপ্তপ্রায়। বিএফআরআই এসব মাছ ফিরিয়ে আনতে মাছের কৃত্রিম প্রজনন, পোনা উৎপাদন, চাষ কৌশল ও জিনপুল সংরক্ষণে কাজ করছে। বেশ কিছু ক্ষেত্রে তারা সফলতার মুখও দেখেছে।
আপনার মতামত লিখুন :