শিরোনাম
◈ অনিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল বন্ধে বিটিআরসিতে তালিকা পাঠানো হচ্ছে: তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী ◈ পাবনায় হিটস্ট্রোকে একজনের মৃত্যু ◈ জলাবদ্ধতা নিরসনে ৭ কোটি ডলার ঋণ দেবে এডিবি ◈ ক্ষমতা দখল করে আওয়ামী শাসকগোষ্ঠী আরও হিংস্র হয়ে উঠেছে: মির্জা ফখরুল ◈ বেনজীর আহমেদের চ্যালেঞ্জ: কেউ দুর্নীতি প্রমাণ করতে পারলে তাকে সব সম্পত্তি দিয়ে দেবো (ভিডিও) ◈ চুয়াডাঙ্গায় তাপমাত্রা ৪২ দশমিক ৩ ডিগ্রি, হিট স্ট্রোকে একজনের মৃত্যু ◈ আইনজীবীদের গাউন পরতে হবে না: সুপ্রিমকোর্ট ◈ তীব্র গরমে স্কুল-কলেজ ও মাদরাসা আরও ৭ দিন বন্ধ ঘোষণা ◈ সিরিয়ায় আইএসের হামলায় ২৮ সেনা নিহত ◈ সরকার চোরাবালির ওপর দাঁড়িয়ে, পতন অনিবার্য: রিজভী 

প্রকাশিত : ১৭ নভেম্বর, ২০১৮, ০২:৫৩ রাত
আপডেট : ১৭ নভেম্বর, ২০১৮, ০২:৫৩ রাত

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

ডাইলেমা ইন হ্যাশ ট্যাগ মি টু

যায়নুদ্দদিন সানী : হ্যাশট্যাগ মি টু, এদেশে কতোটা সফল হবে, এখনই বলা যাচ্ছে না। কেবল যাত্রা শুরু করেছে। আপাতত ফ্লপই বলা যায়। একটা দু’টা ছিটে ফোঁটা যা ও আসছে, সেসব সেভাবে প্রচার পাচ্ছে না। ভোটের মৌসুম। সেটাও একটা কারণ হতে পারে। বাট আই থিঙ্ক, এদেশের মেয়েরা এখনও ততোটা সাহস অর্জন করে উঠতে পারেনি। ‘মি টু’ তে যোগ দেয়া মানেই, ‘বাজে মেয়ের’ তকমা মেনে নিয়ে যাত্রা শুরু করা। সেটায় সম্মতি দেয়া মেয়েদের সংখ্যা এদেশে এখনও কম। তবে আশা করা যায়, বাড়বে।

‘মি টু’ তে সমস্যার সমাধান কিছু হবে কি না, বলা যায় না। তবে কিছু তো অবশ্যই কমবে। বিশেষ করে ভীতু গ্রুপটা এসব করার আগে দু’বার ভাববে। ‘এই মেয়ে যদি বলে দেয়!’ মনে হয়, এযাত্রা একমাত্র প্রাপ্তি হবে, এই ভীতি। আরেকটা প্রাপ্তি অবশ্য চোখে পড়েছে। যদিও খুব আর্লি, তারপরও মনে হয় এটাকে প্রাপ্তি বলা যায়, তা হচ্ছে, মুখোশ উন্মোচন। না, আক্রমণকারীর না,সেলেব্রেটি বুদ্ধিজীবীদের।

মুখোশ উন্মোচন প্রাপ্তিটার শুরু সেলিম আল দীন দিয়ে। কাহিনী খুবই সাধারণ। লাইজু নামের একজন মেয়ে অভিযোগ করেছেন, সেলিম আল দীন, একদিন সন্ধ্যার সময় তাকে বাসায় আসতে বলেন, একটি বই নিয়ে যাওয়ার জন্য। এরপরে! না, রেপ হয়নি, চুম্বনের চেষ্টা। সো, অনেকের মতে, তেমন তো কিছু হয়নি।

কাহিনী যথারীতি হিট। ফেসবুক স্ট্যাটাসটা উইমেন চ্যাপ্টার প্রকাশ করে। ফেসবুক স্ট্যাটাসটা, আমার ধারণা, শ’য়ে শ’য়ে শেয়ার হয়েছে এবং যথারীতি, পক্ষে এবং বিপক্ষে বক্তব্য এবং পাল্টা বক্তব্য শুরু হয়ে গেছে। এতোদূর পর্যন্ত কাহিনীতে নতুনত্ব বলতে তেমন কিছু নেই। কাহিনী শুরু হয় এর পর থেকে।

সেলিম আল দীন, মানেই একরাশ ভাবশিষ্য। গুণী ব্যক্তি। এবং অবশ্যই ট্যালেন্টেড। সো, উনার কাছে শিখেছে, এমন লোকের অভাব নেই। তাকে ঈশ্বরের মতো ভক্তি শ্রদ্ধা করে এমন মানুষও অগণিত। আর উনি যে ধারাকে রিপ্রেজেন্ট করেন, সেই ধারা নারীর প্রতি মহা মহা এবং মহা শ্রদ্ধাশীল । এবার কি হবে? গুরুর পক্ষে নামবে? না নারীর যৌন হয়রানির বিপক্ষে দাঁড়াবে?

সম্প্রতি এই ডাইলেমা ভেঙ্গে নিজের অবস্থান প্রকাশ করেছেন জনৈক কথা সাহিত্যিক। সেলিম সাহেবের কাছে অনেক শিখেছেন। উনাকে গুরু জ্ঞান করেন। সো, তিনি তার এই গুরুর বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। যেহেতু তিনি পরলোকগত, যেহেতু তার আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ নেই, তাই তিনি তার স্মৃতি হাতড়ে বেশ কিছু তথ্য এনে প্রমাণ করার চেষ্টা করেছেন, উনি এমন কাজ করতেই পারেন না।

এবার শুরু হলো সমস্যা। তিনি যেসব যুক্তি দাড় করালেন, তার একটা হলো, প্রমাণ নেই। বেশ যুক্তিসংগত কথা। আইনও তাই বলে। ভিক্টিমকেই প্রমাণ করতে হবে, ‘আমার সঙ্গে ঐ লোক… ’। যদি প্রমাণ করতে পারেন, তবে শাস্তি আর প্রমাণ না করা গেলে, বেকসুর খালাস।

প্রশ্ন হচ্ছে, যৌন নিগ্রহ, যেখানে ফরেনসিক কোনো এভিডেন্স পাওয়া যাচ্ছে না, কোনো সাক্ষী নেই, এমন পরিস্থিতিতে একজন নারীর করণীয় কি? আর ফেসবুকের এই যুগে, যেখানে একটা স্ট্যাটাস একজনের সামাজিক সম্মানকে এক লহমায় ধুলায় মিশিয়ে দিতে পারে, সেখানে কোনো প্রমাণ ছাড়া এমন অভিযোগ করা জাস্টিফাইড কি না।

যুক্তি আসলে দুদিকেই আছে। যিনি আক্রান্ত, প্রমাণ না থাকলে তিনি কি করবেন? গায়ে হাত দেয়া, সেটা সোশ্যাল টাচ না অন্যকিছু, কীভাবে প্রমাণ করবে? সেসময়ে সেখানে কেউ না থাকলে, কীভাবে প্রমাণ আনবে? আক্রমণকারী স্বনামধন্য কেউ হলে? যিনি এমনটা করতে পারেন, তা কেউ বিশ্বাস না করলে, তখন কি করবে? ঘটনাটা অনেকদিন আগের হয়ে থাকলে? এসব প্রশ্নগুলোর উত্তর যদি নেতিবাচক হয়, তাহলে তো আজই ‘মি টু’ আন্দোলনের যবনিকা টানা উচিত। যে যুক্তিতে সেলিম সাহেবের বিরুদ্ধে অভিযোগকে ফেইম সিকিং বলা হচ্ছে, সেই অভিযোগে ইভ টিজিংয়ের বিরুদ্ধেও কথা বলা অনুচিত। ‘কিছু একটা ঘটা’ পর্যন্ত ওয়েট করতে হবে। ফরেনসিক এভিডেন্স পাওয়া যায়, এমন কিছু না ঘটা পর্যন্ত নো ‘মি টু’।

কাহিনীর উল্টো দিকও আছে। ‘মি টু’ ইউজ করে কেউ কাউকে জনসমক্ষে অসম্মান করতেই পারে। ব্যাপারটা খুব স্বাভাবিক না, তারপরও অসম্ভব না। এমনটা হলে? সত্যিই যদি কেউ ফেইম শিকার হয়, তাহলে? আর ফেসবুকে একটা ফিমেল আইডি বানানো কি এমন অসম্ভব ব্যাপার? তাহলে? কীভাবে জানা যাবে, সত্য ঘটনা?

ফেইক নিউজ আর দলবাজির এই যুগে, সেই অর্থে কাউকেই বিশ্বাস করা যায় না। ভারতে যখন ‘মি টু’ শুরু হয়, তখন বেশ বড় বড় লোক সেটার শিকার হন। একজন মন্ত্রী পদত্যাগ করেন। বেশ কিছু ডিরেক্টর। অভিযোগকারীর চরিত্র নিয়ে কটাক্ষ সেখানেও হয়। তনুশ্রী দত্তকে তখন কেউই সিরিয়াসলি নেয়নি। একজন অ্যাক্ট্রেস, যে ফিল্মে ক্যারিয়ার গড়তে না পেরে বিদেশে চলে যায়, এমন একজনের অভিযোগের একটাই মানে ধরা হয়, ফেইম শিকার। লাইম লাইটে আসতে চায়। নানা পাটেকারের মতো অভিনেতার নামে অভিযোগ এনে তনুশ্রীর একটাই প্রাপ্তি প্রচার। প্রথমে কেউই ব্যাপারটাকে পাত্তা দেয়নি। মিডিয়ায় তেমন কাভারেজ পায়নি। এরপরে?

এরপরে কাহিনী হঠাৎ করেই পাল্টে যায়। একে একে অনেকে এগিয়ে আসে। এরপরে যখন মন্ত্রী সাহেবের বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠে, তখন কাহিনী অন্যরূপ নেয়। সেখানে আরেকটা ব্যাপারও ঘটে। মন্ত্রী মহোদয় যেদিন হুমকি দেন যে ,তিনি অভিযোগ কারিনির বিরুদ্ধে ডিফেমেশান কেস করবেন, সেদিন আরও একঝাঁক মেয়ে মন্ত্রীর কাছে নিজেদের যৌন নিগ্রহের কাহিনী প্রকাশ করে। অনেকে স্বঃপ্রনোদিত হয়ে কোর্টে সাক্ষী দিতে রাজী হয়।

আমদের দেশে এখনও এমনটা হয়নি। অন্তত খুব বেশি দৃশ্যমান না। দুএকজন মিডিয়া প্রফেশনালকে নিয়ে অভিযোগ এসেছে। সেসবও তেমন প্রচার পায়নি। প্রথম বড় ধামাকা বোধ হয় সেলিম সাহেব। গুরুর উপকার করতে গিয়ে ব্যাপারটায় ঘি ঢালেন, সেই কথা সাহিত্যিক। সাহিত্যিকের স্ট্যাটাস একটা ব্যাপার উন্মোচিত করে দিয়েছে, ‘আমার ঘরের কারো বিপক্ষে না বললে, আমি নারীবাদী। তোমাদের সব আন্দোলনে আমাকে পাশে পাবা। বাট যদি আমাকে আঘাত করো, তাহলে আমি আসল চেহারায় সামনে আসবো।’ কমবেশি এদেশের সব সেলিব্রেটি বুদ্ধিজীবীদেরই এই দশা। যতোক্ষণ আমার পক্ষে আছ, নো প্রবলেম।

যা হোক, সাহিত্যিক সাহেব যা ভেবেছিলেন, তা পুরোপুরি ঘটেনি। কেউ কেউ বিরোধিতা করলেও, অনেকেই দেখলাম উনাকে সমর্থন করেছেন। সেলিম সাহেবের গায়ের দাগ ধুতে গিয়ে যেসব যুক্তির আমদানি তিনি করেছেন, সেসব খুব একটা ধোপে টেকেনি। তসলিমা নাসরিনও মাঠে নেমে পড়েছেন। স্ট্যাটাস দিয়েছেন।

আর উনার স্ট্যাটাসের শেয়ারও যেমন হচ্ছে, বিরোধও তেমন হচ্ছে। বিরোধিতা করে দেয়া এক স্ট্যাটাসে দেখলাম, সেলিম সাহেবের বিপক্ষেও অনেকে কলম ধরেছে। থ্যাংকস টু সাহিত্যিক মশাই। ওয়েল ডান। স্ট্যাটাসটা না দিলে হয়তো এতোজন মুখ খুলতো না।

মোদ্দা কথা, সেলিম সাহেব দোষী, না নির্দোষ, এই মুহূর্তে আমরা কেউই জানি না। লাইজু সত্য বলছেন কি না, তা ও আমরা জানি না। এটাও ঠিক, উনি মৃত, তাই আত্মপক্ষ সমর্থনও করতে পারছেন না। আর সেই একই কারণে উনাকে এই মুহূর্তে শাস্তি দেয়া যাচ্ছে না। তাহলে? কি করণীয়? স্পিকটি নট? না এমনটি যেন আর না হতে পারে, তাই এখনই কলম ধরা?

পরিশেষে একটা কথাই বলবো, এমন ব্যক্তিরা সাধারণত একটা ঘটনা ঘটান না। আর তা ই যদি হয়, তবে এমন অভিযোগ আরও অনেকের মনে আছে। এমন অনেকেই আছেন, এবিষয়ে আরও অনেক তথ্য দিতে পারবেন। এসব বেরিয়ে আসলে, তখন হয়তো এবিষয়ের সত্য প্রতিষ্ঠিত হবে। ‘মিটু’ সফল করতে হলে, একত্র হতে হবে। আর সেটা হলে, একজন পুরুষ হলেও, ওসব করার আগে একবার ভাববে। সেটাই প্রাপ্তি এই ‘মিটুর। লেটস হোপ ফর দ্যা বেস্ট।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়