ডেস্ক রিপোর্ট : ‘ব্ল্যাক বেঙ্গল’ জাতের ছাগলের জীবনরহস্য উন্মোচন (ছাগলের জিনোম সিকোয়েন্সিং) করেছেন ময়মনসিংহে অবস্থিত বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীরা। পশু পালন অনুষদের পোলট্রি বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. বজলুর রহমান মোল্লার নেতৃত্বে একদল তরুণ বিজ্ঞানীর প্রচেষ্টায় এ সফলতা আসে।
গত রবিবার (১১ নভেম্বর) যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক জৈব প্রযুক্তিবিষয়ক সংস্থা এনসিবিআইয়ের পক্ষ থেকে তারা জিনোম সিকোয়েন্সিংয়ের নিবন্ধন পেয়েছেন। আর মঙ্গলবার (১৩ নভেম্বর) জীবনরহস্য উন্মোচনের বিষয়টি বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের পশু পালন অনুষদের পোলট্রি বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. বজলুর রহমান মোল্লা আনুষ্ঠানিকভাবে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন।
তিনি বলেছেন, চলতি বছরের এপ্রিল মাসে বাংলাদেশ প্রাণিসম্পদ গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বিএলআরআই) কাছ থেকে বংশ ইতিহাস (পেডিগ্রি) জানা ও সংরক্ষিত বিশুদ্ধ ব্ল্যাক বেঙ্গল জাতের ছাগলের কানের টিস্যু সংগ্রহ করা হয়। বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘পোলট্রি বায়োটেকনোলজি জেনোমিকস’ ও ‘এনিমেল ব্রিডিং অ্যান্ড জেনেটিকস’ ল্যাবেরটরিতে তা থেকে উচ্চ গুণগত মানের জিনোমিক ডিএনএ প্রস্তুত করা হয়।
পরবর্তীতে জিনোম সিকোয়েন্সিং সেন্টারে নেক্সট জেনারেশন ডিএনএ সিকোয়েন্স ইলোমিনা হাই সিকোয়েন্স ব্যবহার করে সংগৃহীত ব্ল্যাক বেঙ্গল জাতের ছাগলের ১২৫.০২০ গিগা বেজ প্রাথমিক নিউক্লিওটাইড ডেটা সংগ্রহ করা হয়।এরপর বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের ‘হাই পারফরমেন্স কম্পিউটিং ফ্যাসিলিট’ ব্যবহার করে সংগৃহীত প্রাথমিক ডেটা থেকে ছাগলের পূর্ণাঙ্গ রেফারেন্স গাইডেড এসেম্বলি সম্পন্ন করা হয়।
তিনি আরও জানান, এসেম্বলকৃত ব্ল্যাক বেঙ্গল ছাগলের জিনোমে প্রায় ২.৯ গিগা বেজ নিউক্লিওটাইড রয়েছে। এর মাইটোকন্ড্রিয়াল জিনোম সাইজ ১৬,৬৪০টি নিউক্লিওটাইড যাতে আছে ৩৭টি জিন। পূর্ণাঙ্গ সিকোয়েন্স এনালাইসিস করে ২৬ লক্ষ ৫ হাজার ৩০০টি সিঙ্গেল নিউক্লিওটাইড পলিমরফিজম পাওয়া গেছে। বর্তমানে পূর্ণাঙ্গ জিনোম সিকোয়েন্স বিশ্লেষণ করে ব্ল্যাক বেঙ্গল ছাগলের জিনোমে জিনের সংখ্যা ও তার গঠন জানার কাজ অব্যাহত রয়েছে।
ব্ল্যাক বেঙ্গলের জীবনরহস্য উন্মোচনে প্রফেসর ড. বজলুর রহমান মোল্লাকে সহযোগিতা করেছেন বাকৃবির পশুপ্রজনন ও কৌলি বিজ্ঞান বিভাগের প্রফেসর ড. এমএএম ইয়াহিয়া খন্দকার, প্রফেসর ড. মো. সামছুল আলম ভূঞা, বাংলাদেশ প্রাণিসম্পদ গবেষণা ইনস্টিউিটের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মো. আব্দুল জলিল, ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. গৌতম কুমার দেব, বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মো. পনির চৌধুরী ও নূরে হাছনি দিশা।
প্রফেসর ড. বজলুর রহমান মোল্লা বলেছেন, জীবনরহস্য উন্মোচনের সুফল পেতে হলে আবিষ্কার করা মার্কারগুলো প্রয়োগ করে ব্ল্যাক বেঙ্গল ছাগলের দৈহিক বৃদ্ধি, দুধ উৎপাদন, মাংসের গুনাগুণ, রঙ ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার সাথে সম্পর্কিত জিনগুলোকে চিহ্নিত করতে হবে। মাঠ পর্যায়ে ব্ল্যাক বেঙ্গল ছাগলের জেনেটিক ভিন্নতা নিরূপণ করা এবং তা থেকে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে প্রজনন ঘটাতে হবে।
তাছাড়া, জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেওয়ার জন্য ব্ল্যাক বেঙ্গল ছাগলের নিয়ামক জিন আবিষ্কার করতে হবে। এসব ছাড়াও, ব্ল্যাক বেঙ্গল ছাগলের উপরোক্ত গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্যের সঙ্গে আবিষ্কার করা জিনের সম্পর্ক নিরূপণের মাধ্যমে আরও বেশি উৎপাদনশীল ছাগল বাছাই ও উৎপাদন করতে হবে।
আপনার মতামত লিখুন :