শিরোনাম
◈ দক্ষিণ ভারতে ইন্ডিয়া জোটের কাছে গো-হারা হারবে বিজেপি: রেভান্ত রেড্ডি ◈ ইরানের ওপর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের নতুন নিষেধাজ্ঞা ◈ আবারও বাড়লো স্বর্ণের দাম  ◈ ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিনয় মোহন কোয়াত্রার ঢাকা সফর স্থগিত ◈ বিএনপি নেতাকর্মীদের জামিন না দেওয়াকে কর্মসূচিতে পরিণত করেছে সরকার: মির্জা ফখরুল ◈ ব্রিটিশ হাইকমিশনারের সঙ্গে বিএনপি নেতাদের বৈঠক ◈ মিয়ানমার সেনার ওপর নিষেধাজ্ঞা থাকায় তাদের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করা সম্ভব হচ্ছে না: সেনা প্রধান ◈ উপজেলা নির্বাচন: মন্ত্রী-এমপিদের আত্মীয়দের সরে দাঁড়ানোর নির্দেশ আওয়ামী লীগের ◈ বোতলজাত সয়াবিনের দাম লিটারে ৪ টাকা বাড়লো ◈ রেকর্ড বন্যায় প্লাবিত দুবাই, ওমানে ১৮ জনের প্রাণহানি

প্রকাশিত : ১৫ নভেম্বর, ২০১৮, ০৮:১৩ সকাল
আপডেট : ১৫ নভেম্বর, ২০১৮, ০৮:১৩ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

আটকে রেখে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড হয় না

সমকাল : নাইকো দুর্নীতি মামলার অভিযোগ গঠনের ওপর পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য করা হয়েছে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর আগামী বছরের ৩ জানুয়ারি। এ মামলার অভিযোগ গঠনের ওপর আংশিক শুনানির পর আসামি পক্ষের সময় আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকার নবম বিশেষ জজ আদালতের বিচারক মাহমুদুল কবির গতকাল বুধবার এ দিন নির্ধারণ করেন।

পুরান ঢাকার সাবেক কেন্দ্রীয় কারাগারের ভেতর স্থাপিত অস্থায়ী আদালতে গতকাল এ মামলার অভিযোগ গঠনের ওপর শুনানিতে হাজির হয়ে সময় প্রার্থনা করেন কারাবন্দি বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। তিনি আদালতকে বলেন, 'আমাকে জেলে এবং বিএনপির নেতাকর্মীদের আদালতে আটকে রেখে আরেক দলকে নির্বাচনী প্রচারণার সুযোগ দিয়ে নির্বাচনে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড হতে পারে না। নির্বাচনে সবাইকে সমান সুযোগ দিতে হবে।' তিনি বলেন, 'যদি সময় না দিতে পারেন, তা হলে আদেশ দিয়ে বলে দিন, বিএনপি নির্বাচন করতে পারবে না।'

সময় আবেদনের ক্ষেত্রে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) প্রসিকিউটর মোশাররফ হোসেন কাজলের বিরোধিতার পরিপ্রেক্ষিতে খালেদা জিয়া এ মামলায় আদালতের কাছে দেড় মাস সময় প্রার্থনা করেন।

দুপুর ১২টার দিকে এ মামলার কার্যক্রম শুরু হলে শুরুতেই অস্থায়ী এ আদালতের পরিবেশ নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেন খালেদা জিয়া। তিনি বলেন, 'এই কারাগারের ভেতরে বিচার হয় কীভাবে? এখানে তো পরিবেশ নাই।' এরপর মামলার অন্যতম আসামি ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদও কারাগারের ভেতর আদালতের পরিবেশ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, 'নাইকো মামলাকে এত বড় করে দেখার কী আছে? রায়ে না হয় আমার সর্বোচ্চ ১০ বছর সাজা হবে। সংবিধানে আছে, মানুষের মৌলিক অধিকার রক্ষা করতে হবে। অথচ একটি মামলার পাবলিক ট্রায়াল করার মতো পরিবেশ এখানে নেই। তা হলে কীভাবে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা হবে?'

এ সময় বিচারকের উদ্দেশে মামলার প্রধান আসামি খালেদা জিয়া জানতে চান, তাদের মামলাগুলোর এত দ্রুত বিচার হচ্ছে কেন। তিনি বলেন, 'অন্য মামলায় তো এ রকম চেষ্টা দেখি না। নারায়ণগঞ্জের সেভেন মার্ডার মামলায়ও দ্রুত বিচার হয়নি। বহু গুরুত্বপূর্ণ মামলার শুনানি হচ্ছে না। তা হলে কিসের জন্য এ মামলার বিচার অস্বাভাবিক দ্রুততার সঙ্গে করা হয়?' খালেদা জিয়া জানতে চান, এজলাস কক্ষে নিরাপত্তার কথা বলে পুলিশ কেন তার কাছাকাছি অবস্থান নেয়। তিনি জানান, এভাবে থাকলে তিনি আইনজীবীদের দেখতে পারেন না। তাদের সঙ্গে কথা বলতে পারেন না। তিনি বলেন, পুলিশ প্রবেশপথে থাকুক, এজলাসে নয়।

এ পর্যায়ে বিচারক বলেন, তাৎক্ষণিকভাবে এ বিষয়ে তিনি কোনো সিদ্ধান্ত দিতে পারছেন না। তবে প্রসিকিউটরকে এ বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য বলা হবে।

এ সময় খালেদা জিয়া বলেন, একদল নির্বাচন করবে আর অন্য দলকে আটক রাখা হবে, একদল নির্বাচন নিয়ে ব্যস্ত থাকবে, অন্য দল মামলা নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করবে- এটা তো হতে পারে না। ভোট শেষ না হওয়া পর্যন্ত এ মামলার শুনানি মুলতবি রাখার জন্য সময় প্রার্থনা করেন তিনি।

এ সময় ব্যারিস্টার মওদুদ বলেন, আদালত যেহেতু বিষয়টি উপলব্ধি করতে পেরেছেন, তাই আজ মামলার কার্যক্রম মুলতবি করে দিন। তিনি জানান, খালেদা জিয়া তাদের নির্বাচন করতে বলেছেন। বলেছেন, নির্বাচন না হলে আবার ২০১৪ সালের মতো অবস্থা হবে। এমন প্রেক্ষাপটে নির্বাচনের পর শুনানির তারিখ ধার্য করার জন্য আদালতের কাছে আবেদন করেন তিনি।

উভয় পক্ষের শুনানির পর আদালত ৩ জানুয়ারি পর্যন্ত শুনানি মুলতবি করেন। এ সময় মামলার অপর আসামিদের মধ্যে তারেক রহমানের বন্ধু গিয়াস উদ্দিন আল মামুন, সাবেক জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী একেএম মোশাররফ হোসেন, ঢাকা ক্লাবের সাবেক সভাপতি সেলিম ভূঁইয়া, সাবেক সিনিয়র সহকারী সচিব সিএম ইউছুফ হোসাইন উপস্থিত ছিলেন।

জামিনে মুক্ত অপর আসামি জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সচিব খন্দকার শহীদুল ইসলাম অনুপস্থিত ছিলেন। এ মামলার আসামি নাইকোর দক্ষিণ এশিয়াবিষয়ক ভাইস প্রেসিডেন্ট কাশেম শরীফ, তখনকার প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী ও বাপেক্সের সাবেক মহাব্যবস্থাপক মীর ময়নুল হক পলাতক রয়েছেন।

এর আগে দুপুর ১২টার দিকে পুরান ঢাকার নাজিমুদ্দিন রোডে সাবেক কেন্দ্রীয় কারাগারের ভেতরে স্থাপিত ঢাকার বিশেষ জজ আদালতে ১৭ বছরের সাজাপ্রাপ্ত সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে হুইলচেয়ারে হাজির করা হয়।

এ সময় আদালতে খালেদা জিয়ার পক্ষে অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন, মাহবুবউদ্দিন খোকন, মাসুদ আহমেদ তালুকদার, জয়নুল আবেদীন মেসবাহ, জাকির হোসেন ভূঁইয়া প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

খালেদা জিয়ার টিপ্পনী :নাইকো দুর্নীতির মামলার শুনানিতে খালেদা জিয়া দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) আইনজীবীকে নিয়ে টিপ্পনী কাটেন। ঢাকা কোর্টের মহানগর দায়রা জজ আদালত ভবন ও বকশীবাজার এজলাসের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ওখানেই তো স্বাভাবিক বিচার চলছিল। তবে এখানে বিচারের কারণ কী? এ মামলার বিচার অস্বাভাবিক দ্রুততায় হচ্ছে।

এক পর্যায়ে খালেদা জিয়ার অন্যতম আইনজীবী মাসুদ আহমেদ তালুকদার প্রতিপক্ষ দুদকের আইনজীবী মোশাররফ হোসেন কাজলকে কটাক্ষ করে বলেন, 'কাজল সাহেব আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন কিনেছেন। এমপি নির্বাচিত হওয়ার পর তাকে প্রতিমন্ত্রী বানিয়ে এ মামলা পরিচালনার পুরস্কার দেবে আওয়ামী লীগ।' তখন খালেদা জিয়া বলেন, 'না, তাকে ফুল মন্ত্রী করে দেবে।' এসব শুনে দুদকের আইনজীবী কাজল খালেদা জিয়ার উদ্দেশে বলেন, 'ম্যাডাম, আমার জন্য দোয়া করবেন।'

খালেদা জিয়ার সঙ্গে চার আইনজীবীর সাক্ষাৎ : দুপুর সোয়া ১টার দিকে মামলার শুনানি শেষ হলে আদালতের অনুমতি নিয়ে চার আইনজীবী কারাগারে খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। তারা হলেন- ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, সুপ্রিম কোর্ট বারের সভাপতি অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন ও সম্পাদক ব্যারিস্টার মাহবুবউদ্দিন খোকন এবং আহমেদ আজম খান।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়