মোঃ জয়নুল আবেদীন, আমতলী (বরগুনা): ২০০৭ সালের ১৫ নভেম্বর রাতে ঘন্টায় ২১৫ কিলোমিটারগতির প্রলয়ঙ্কারী ঘূর্ণিঝড় সিডরের আঘাতে লন্ডভন্ড করে দিয়েছিল দক্ষিণের জনপদ। আমতলী ও তালতলী উপজেলায় ২৯৭ জন মানুষের প্রাণহানী হয়েছিল। সিডরের ১১ বছর পূর্ণ হচ্ছে কাল। সুপার সাইক্লোন সিডরের ক্ষত চিহৃ আজও বয়ে বেড়াচ্ছেন স্বজনরা।
বরগুনার আমতলীর লোচা গ্রামের সুফিয়া বেগম ঘূর্ণিঝড় শুরু হলে দু’পুত্র ও শিশুকন্যাকে কোলে নিয়ে আশ্রয় কেন্দ্রে যাচ্ছিল তখন ৪ বছরের শিশু কন্যা বিউটিকে জলোচ্ছাসে ভাসিয়ে নিয়ে যায়। আড়পাঙ্গাশিয়া গ্রামের আবদুল হাই মিয়া তার স্ত্রীকে নিয়ে বাড়ি থেকে ঝড়ের রাতে বাজারে আসছিল বানের পানিতে দু’জনকে ভাসিয়ে নিয়েছিল। আবদুল হাই বেচেঁ গেলেও স্ত্রী বাঁচতে পারেনি। উপজেলা ঘটখালী ও বৈঠাকাটা গ্রামের ১৪ জন দিন মজুর সাগর মোহনা ট্যাংরাগিরি বনাঞ্চলে পানের বরজের ধানশি লতা সংগ্রহে ট্রলার নিয়ে যায়। সিডরের ভয়াল রাতে তাদের ভাসিয়ে নিয়ে যায়। ৫ জন ফিরে আসলেও ইউসুফ,জব্বার, ছোবাহান, হোসেন, খলিল, রতন, মনিরুল , দেলোয়ার ও আলতাফ ফিরে আসতে পারেনি। আড়পাঙ্গাশিয়া ইউনিয়নের চরকগাছিয়া গ্রামের জাকির হোসেন ওরফে আবদুর রহিম ধানসি কাটতে গিয়ে হারিয়ে যায়।
আজও ফিরে আসেনি। স্বজনদের হারিয়ে অসহায় পরিবারগুলো মানবেতর জীবন কাটাচ্ছে। আজও তারা স্বজন হারা বেদনায় কাতর। ২০১৭ সালের জুন মাসে সাড়ে নয় বছর পরে দক্ষিণ ঘটখালী গ্রামের সোহেল বাড়িতে ফিরে আসে কিন্তু সে বাকরুদ্ধ। অর্থাভাবে চিকিৎসা করাতে পারছে না। সোহেল বাকরুদ্ধ হলেও খুশিতে পরিবার। বৈঠাকাটা গ্রামের একই পরিবারের দু’ভাই দেলোয়ার ও আলতাফ নিহত হয়েছে। তাদের বড় ভাই প্রতিবন্ধী বাবা আলী আজম গত বছর মারা গেছে। দেলোয়ারের দু’ছেলে এখন অসহায়ের মধ্যে দিন কাটাচ্ছে। আজও সন্তানহারা মায়ের আহাজাড়িতে আকাশ বাতাস ভারি হয়ে উঠছে।
নিহত রত্তনের পিতা আঃ বারেক মিয়া কান্নাজড়িত কন্ঠে বলেন, “মোর চাওয়া পাওয়ার কিছুই নাই, মোর পোয়ায় দু’ছেলে রাইখ্যাগেছে, হ্যাগো ল্যাহাপাড়া হরাইতে বড় কষ্ট অইতেছে, সরকার এই এতিম সন্তানদের দিকে তাহাইলে বড় ভাল অইতো”।
আপনার মতামত লিখুন :