শিরোনাম
◈ ফরিদপুরে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহতদের মধ্যে একই পরিবারের পাঁচজন ◈ স্থায়ী জামিন না পাওয়ায় ক্ষুব্ধ হয়েছি ড. ইউনূসের আইনজীবী ◈ উপজেলার ভোটে এমপি-মন্ত্রীদের হস্তক্ষেপ না করতে প্রধানমন্ত্রী নির্দেশ দিয়েছে: ওবায়দুল কাদের  ◈ শ্রম আইন লঙ্ঘন: ড. ইউনূসসহ ৪ জনের জামিন ২৩ মে পর্যন্ত বৃদ্ধি ◈ ময়মনসিংহে দুই বাসের মুখোমুখি সংঘর্ষে নিহত ২, আহত ২৬ ◈ ফরিদপুরে বাস-পিকআপের মুখোমুখি সংঘর্ষ, নিহত বেড়ে ১৩  ◈ ইরানের হামলার জবাব দেবে ইসরায়েল: সেনাপ্রধান ◈ সৌদিতে কোরবানি ঈদের সম্ভাব্য তারিখ ঘোষণা ◈ স্বাস্থ্যখাতে নতুন অশনি সংকেত অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স: স্বাস্থ্যমন্ত্রী  ◈ কৃষি খাতে ১০ শতাংশ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যে তিন  বছরে সাড়ে ৩৮ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ

প্রকাশিত : ১৪ নভেম্বর, ২০১৮, ০২:৩১ রাত
আপডেট : ১৪ নভেম্বর, ২০১৮, ০২:৩১ রাত

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

৩০ হাজার টাকা তো কোনো বিষয়ই না!

প্রভাষ আমিন : আমার এক বোকা বন্ধু জানতে চাইছিলেন, আচ্ছা মানুষের কী টাকাপয়সার মায়া নেই? আমি জানতে চাইলাম, কেন, কী হয়েছে? তিনি বললেন, এই যে একটি আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাবেন একজন; কিন্তু একেক আসনে দলের মনোনয়ন ফরম কিনছেন ১৬-১৭ জন। আমি বললাম, এটাই তো হয়, এটাই তো স্বাভাবিক। অনেকেই মনোনয়ন চাইবেন। দল একজনকে দেবে। তিনি তবু নাছোরবান্দা, মনোনয়ন না পেলে, ৩০ হাজার টাকা দিয়ে ফরম কিনলো, সেটা তো পুরোটাই লস। তার কথা শুনে আমি উচ্চস্বরে হাসলাম, ও এই কথা। তারপর তাকে সান্ত¡না দিয়ে বললাম, ভাই আপনি ৩০ টাকা যতোটা নির্ভাবনায় খরচ করতে পারেন, তাদের অনেকে ৩০ হাজার টাকা ততোটাই অবহেলায় উড়িয়ে দিতে পারেন। তবে তার এই প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন চট্টগ্রামের এক তরুণ ব্যবসায়ী। পত্রিকায় দেখলাম নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এই ব্যবসায়ী বলেছেন, ইতিমধ্যে এলাকায় কয়েক কোটি টাকা খরচ ফেলেছেন। ৩০ হাজার টাকার মনোনয়ন ফরম কেনা তো কোনো বিষয়ই নয়। এবার না পেলেও আগামীর জন্য বিনিয়োগ করে রাখছেন তিনি। চতুর এই ব্যবসায়ী অল্প কথায় সব কথা বলে দিয়েছেন।

এই যে হাজার হাজার মানুষ ধানমন্ডি অচল করে দিয়ে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন ফরম কিনেছেন, তাদের অনেকেই নিশ্চিত জানেন তারা মনোনয়ন পাবেন না। তারপরও তারা ৩০ হাজার টাকা জলে যাবে জেনেও মনোনয়ন ফরম কিনছেন। হিসেবটা কিন্তু শুধু ৩০ হাজার টাকার নয়। অনেকেই ব্যাপক শোডাউন করে মনোনয়ন ফরম কিনতে এসেছেন। তাতেই কয়েক লাখ টাকা খরচ হয়ে গেছে অনেকের। মনোনয়ন পাবেন না জেনেও এত আয়োজন কেন, কেন এত অর্থ ব্যয়? নিট লাভ হলো সংসদীয় বোর্ডের সামনে আসার সুযোগ পাওয়া। এ বোর্ডের সভাপতি শেখ হাসিনা। মাত্র ৩০ হাজার টাকায় শেখ হাসিনার দেখা পাওয়া তো বেশ সস্তাই। তার চেয়ে বড় কথা হলো, মনোনয়ন কেনা মানে ভবিষ্যতের জন্য ইট রাখা। আর শোডাউন হলো, নিজের সম্ভাবনাকে বাড়িয়ে রাখা। সংসদ নির্বাচনে মনোনয়ন না পেলেও ভবিষ্যতে কোনো স্থানীয় সরকার নির্বাচনে মনোনয়ন দৌড়ে এগিয়ে থাকা। তাও না পেলে দলে পদ বা বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা পাওয়ার ক্ষেত্রেও নিজের দাবি জানান দিয়ে রাখা। দল ক্ষমতায় গেলে ব্যবসা-বাণিজ্য, টেন্ডারবাজিতেও এগিয়ে থাকার সুযোগ থাকছে। আর যিনি শেষ পর্যন্ত দলের মনোনয়ন পাবেন, তার কাছ থেকে খরচটা তুলে নেয়ারও সুযোগ থাকছে। ফলে লস নেই। সবই লাভ। ভবিষ্যতের জন্য বড় বিনিয়োগ। আর কারো মনোনয়ন শেষ মুহূর্তে বাতিল হয়ে গেলে হঠাৎ করে কপালে ভাগ্যের শিকে ছিঁড়ে যেতেও তো পারে।

এসব কারণেই ধানমন্ডি এলাকায় প্রার্থীর ঢল নেমেছে। চারদিনে বিক্রি হয়েছে ৪ হাজার ২৩টি মনোনয়ন ফরম। গড়ে প্রতি আসনে ১৩.৪১ জন। ৭টি আসনে একজনই মনোনয়ন ফরম কিনেছেন, তবে একটি আসনে ৫২ জন কিনেছেন, এমন উদাহরণও আছে। শুনলাম একজন ফরম কিনেছেন, ¯্রফে প্রধানমন্ত্রীর কাছে একটা তদ্বির করতে। কোনোভাবেই দেখা করার সুযোগ পাচ্ছিলেন না তিনি। ছাত্রজীবনে শিবির করতেন, এমন অনেকেও আওয়ামী লীগের ফরম কিনেছেন। মনোনয়ন হয়তো পাবেন না, কিন্তু আওয়ামী লীগের ফরম কিনে তিনি শিবির করার পাপ ঢাকতে চাইছেন। ৪০২৩ জনের বেশিরভাগেরই এমন নানান লুকানো লক্ষ্য-উদ্দেশ্য আছে।

আমার সেই বন্ধুর মতো বোকারাই কেবল ৩০ হাজার টাকা নিয়ে ভাবে। যাদের দল ১০ বছর ক্ষমতায় আছে, তাদের কাছে ৩০ হাজার টাকা ¯্রফে হাতের ময়লা।

লেখক : হেড অব নিউজ, এটিএন নিউজ

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়