কৃতী রায় : হিংসা, ক্রুরতা বা নিষ্ঠুরতা কোনোদিনই প্রশ্রয় পায়নি বরং এর বিপরীতে শুভ শক্তিগুলোকে একজোট হতে সহায়তা করে। জালিয়ানওয়ালাবাগ হত্যাকা-ের প্রতিবাদের পর রবীন্দ্রনাথের সাথে রম্যাঁ রলাঁর সখ্যতা নতুন মাত্রা পায়। এই ইতিহাসই আবার ঝালিয়ে নেওয়ার চেষ্টা।
দুই জীবনশিল্পীর সংলাপ
জালিয়ানওয়ালাবাগ হত্যাকা-ের প্রতিবাদে নাইটহুড প্রত্যাখ্যানের কয়েক দিন পর, ক্ষুব্ধ ও বিষণœ রবীন্দ্রনাথের হাতে এসে পৌঁছলো বিশিষ্ট ফরাসি ঔপন্যাসিক ও মানবভাবুক রম্যাঁ রলাঁর চিঠি, ‘মুক্তমনের স্বাক্ষরপত্র’-তে সই করার আর্ত আবেদন নিয়ে। রবীন্দ্রনাথ মুহূর্তমাত্র চিন্তা না করে সই করলেন (২৪ জুন ১৯১৯)।
ফুলের আগুন লাগলো নীল দিগন্তে। শুরু হলো এক ধ্বংসোন্মুখ পৃথিবীকে বাঁচানোর জন্য তাদের আশ্চর্য কথোপকথন। ‘হে আমার অতি প্রিয় বন্ধু’, রবীন্দ্রনাথ লিখছেন, ‘আমি তো মহাত্মা গাঁধীর হাতে হাত রাখতে চাই, যাতে জনসাধারণ খুশি হয়। কিন্তু আমি তো বেশিদিন লুকিয়ে রাখতে পারবো না যে আমাদের সত্যানুসন্ধান ও ভাবনা সম্পূর্ণ আলাদা।’ (১৯২৫) রলাঁ লিখছেন, ‘আমরা যে নীড় বেঁধেছি অনন্ত বৃক্ষের ওপর।’ তার আন্তর্জাতিকতাকে ভারতবর্ষে কেউ বুঝলো না বলে রবীন্দ্রনাথ এ দেশ ছেড়ে চিরকালের মতো ঘর বাঁধতে চাইছেন রলাঁর বাড়ির কাছে, জেনিভা হ্রদের তীরে। এই উপলক্ষে নতুন করে বই প্রকাশ। ব্রিজিং ইস্ট অ্যান্ড ওয়েস্ট: রবীন্দ্রনাথ টেগোর অ্যান্ড রম্যাঁ রলাঁ করেসপন্ডেন্স ১৯১৯-১৯৪০ (অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি প্রেস), বিশ শতকের অন্যতম শ্রেষ্ঠ দুই জীবনশিল্পীর অবিস্মরণীয় সংলাপ। শঙ্খ ঘোষের কথায়, ‘এই প্রায়-বিস্মৃত চিঠিপত্র হয়তো আজকের পৃথিবীতে এই ক্রমবর্ধমান পাশবিক জাতীয়তাবাদের প্রতিষেধক হিসেবে কাজ করবে।’
আপনার মতামত লিখুন :