শিরোনাম
◈ এলডিসি উত্তরণের পর সর্বোচ্চ সুবিধা পাওয়ার প্রস্তুতি নিতে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ ◈ ড. ইউনূসকে নিয়ে শিক্ষামন্ত্রীর বক্তব্য দুঃখজনক: আইনজীবী  ◈ ত্রিশালে বাসের ধাক্কায় বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রসহ অটোরিকশার ৩ যাত্রী নিহত ◈ জলদস্যুদের হাতে জিম্মি জাহাজ মুক্ত করার বিষয়ে  সরকার অনেক দূর এগিয়েছে: পররাষ্ট্রমন্ত্রী  ◈ এসএসসি পরীক্ষায় আমূল পরিবর্তন, বদলে যেতে পারে পরীক্ষার নামও ◈ পঞ্চম দিনের মতো কর্মবিরতিতে ট্রেইনি ও ইন্টার্ন চিকিৎসকরা ◈ অর্থাভাবে পার্লামেন্ট নির্বাচনে লড়বেন না ভারতের অর্থমন্ত্রী ◈ কখন কাকে ধরে নিয়ে যায় কোনো নিশ্চয়তা নেই: ফখরুল ◈ জনপ্রিয়তায় ট্রাম্পের কাছাকাছি বাইডেন ◈ আদালত থেকে জঙ্গি ছিনতাই মামলার তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়ার নতুন তারিখ ৮ মে

প্রকাশিত : ১১ নভেম্বর, ২০১৮, ০৩:০৯ রাত
আপডেট : ১১ নভেম্বর, ২০১৮, ০৩:০৯ রাত

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে হবে বিএনপিকে

মহিউদ্দিন খান মোহন : একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষিত হবার পর দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে প্রাণচাঞ্চল্য দেখা দিতে শুরু করেছে। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ গত শুক্রবার থেকে দলীয় মনোনয়ন ফরম বিক্রি শুরু করেছে। প্রথম দিনেই তিন শ’ আসনের বিপরীতে ১৩০০ ফরম বিক্রি হয়েছে বলে সংবাদ মাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার জন্য দুটি ফরম কেনা হয়েছে। পত্রিকার খবরে আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে উৎসবের আমেজ বিরাজ করছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। অন্যদিকে আওয়ামী লীগের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপি কার্যালয়ে বিরাজ করছে সুনসান নিরবতা। খবরে বলা হয়েছে, বিএনপি অফিসে নির্বাচন সংক্রান্ত তেমন কোনো কার্যক্রম এ মুহূর্তে নেই। দাবি পূরণ না হওয়ায় দলটি নির্বাচনে আদৌ অংশ নেবে কিনা তা নিশ্চিত নয়। বিশেষ করে দলীয় চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি ও তার নির্বাচনে অংশ গ্রহণের বিষয়টির ফয়সালা না হওয়ায় দলটি সিদ্ধান্ত নিতে পারছে না। এ নিয়ে দলটির মধ্যে মতভেদ রয়েছে এবং তা ধীরে ধীরে প্রকট আকার ধারণ করছে। একটি অংশ চেয়ারপার্সনকে ছাড়া নির্বাচনে যাবার ঘোর বিরোধী, অপর অংশটি আন্দোলনের অংশ হিসেবে নির্বাচনে অংশ নিতে ইচ্ছুক। এ নিয়ে কেন্দ্রীয় নেতাদের মধ্যে টানাপোড়েন চলছে।

অনেকেই বলছেন যে, বিএনপি এখন ঊভয় সঙ্কটে রয়েছে। নির্বাচন বর্জন করলে দলের অস্তিত্ব সঙ্কট সৃষ্টি হতে পারে। আবার চেয়ারপার্সনকে কারাগারে রেখে নির্বাচনে গেলে তৃণমূল নেতাকর্মীদের রোষাণলে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। তাছাড়া নির্বাচন বর্জন করে চেয়ারপার্সনের মুক্তি আন্দোলনের সাফল্য নিয়েও রয়েছে সংশয়। বরং নির্বাচনে অংশ নিয়ে সংসদে গিয়ে বেগম জিয়াকে কারামুক্ত করার বিষয়টি নিয়ে সরকারের সাথে জোরদার লড়াই করা যাবে-এমনটি মনে করছেন নির্বাচনে অংশ নিতে ইচ্ছুক নেতারা। তবে, তাদের এ যুক্তিকে মানতে নারাজ অপর অংশটি। তারা বলছেন, নেত্রী কারারুদ্ধ হবার পর ‘শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে’র তত্ত্ব প্রচার করে নেতাকর্মীদের নিরব থাকতে বাধ্য করেছেন শীর্ষ নেতারা। এখন বেগম জিয়াকে কারাগারে রেখেই নেতারা নির্বাচনে যাবার পাঁয়তারা শুরু করেছেন। আর সেটাকে জায়েজ করার জন্যই ‘নেত্রীর মুক্তির জন্য নির্বাচন’ তত্ত্ব বাজরে ছাড়ার চেষ্টা করছেন।

অপরদিকে বিএনপি ২০ দলীয় জোটের বাইরে বর্তমানে ঐক্যফ্রন্টের শরিক দল। ঐক্যফ্রন্ট নেতারা নির্বাচনে অংশ নেয়ার জন্য যে এক পায়ে খাড়া স্মর্তব্য যে, জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট কোনো আদর্শিক প্ল্যাটফরম নয়, এটা একটি নির্বাচনী জোট। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে উপলক্ষ্য করেই এই জোটের আত্মপ্রকাশ। তাছাড় বিএনপি এ জোটের নেতৃত্বে নেই। নেতৃত্বে আছে ড. কামাল হোসেনের গণফোরাম। ঐক্যফ্রন্ট যদিও এখনও পর্যন্ত নির্বাচনের ব্যাপারে কোনো সিদ্ধান্ত দেয়নি। তবে তারা নির্বাচন পিছিয়ে দেওয়ার দাবি জানিয়েছে। বুঝা যাচ্ছে, নির্বাচন কমিশন যদি তাদের দাবি মেনে নির্বাচন কিছুদিন পিছিয়ে দেয়, তাহলে তারা অংশ নেবে। আর যদি বিএনপি ঐক্যফ্রন্টের সিদ্ধান্তে দ্বিমত করে নির্বাচন বর্জন করতে চায়, তাহলে জোট ত্যাগ করা ছাড়া তাদের সামনে কোনো পথ থাকবে না। আর নির্বাচন বর্জন করে যদি তা প্রতিহত করা না যায়, তাহলে আম ছালা দুটোই হারানোর মতো অবস্থা সৃষ্টি হবে।

তবে, অনেকেই অভিমত দিচ্ছেন যে, বিএনপি শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে যাবে। তার আগে তারা দাবি আদায়ের জন্য শেষ চেষ্টাটি করবে। গত ১০ নভেম্বরের সমকাল এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে- বিএনপি তথা ঐক্যফ্রন্ট নির্বাচনে অংশ নিতে যাচ্ছে। এ ব্যাপরে দু একদিনের মধ্যেই সিদ্ধান্ত নেবে দলটি। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ঐক্যফ্রন্ট এবং ২০ দলীয় জোটের অন্যান্য শরিকদের ইচ্ছা এবং দেশি-বিদেশিদের পরামর্শে বিএনপি নির্বাচনে অবতীর্ণ হচ্ছে।

এদিকে নির্বাচন কমিশনের একটি ঘোষণা অধিকতর বিপাকে ফেলে দিয়েছে বিএনপিকে। কোন কোন দল জোটবদ্ধ নির্বাচন করতে চায়, কারা সেসব জোটে থাকবে, তার তালিকা রবিবারের মধ্যে ইসি সচিবালয়ে জমা দেয়ার জন্য রাজনৈতিক দলগুলোকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এছাড়া প্রতীক বরাদ্দের জন্য চিঠিতে কে স্বাক্ষর করবেন তার নাম এবং নমুনা স্বাক্ষরও জমা দিতে বলা হয়েছে। নির্বাচন কমিশনের এসব নির্দেশনা অনুযায়ী দ্রুত সিদ্ধান্ত নেয়া ছাড়া বিএনপির গত্যন্তর নেই। কারণ তফসিল না পেছালে সব কাজ গোছানোর জন্য হাতে আছে মাত্র নয় দিন।

এ কথা সত্যি যে, জাতীয় নির্বাচনে অংশ নেওয়ার মতো সার্বিক প্রস্তুতি বিএনপির নেই। এ ক্ষেত্রে তারা আওয়ামী লীগের চেয়ে অনেকটাই পিছিয়ে আছে। তবে, ভবিষ্যত রাজনীতি এবং দলের অস্তিতের প্রয়োজনে বিএনপির নির্বাচনে অংশ নেওয়া উচিত বলেও মনে করছেন কেউ কেউ। আর সেজন্যই দলটির শীর্ষ নেতৃত্বকে দ্রুত সুচিন্তিত সিদ্ধান্ত নিতে হবে। সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে ভুল করলে দলটি এবার কিনারা থেকে খাদে পড়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন রাজনৈতিক অভিজ্ঞমহল।

লেখক: সাংবাদিক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়