নুসরাত খান : বাংলাদেশে মাসনিক রোগকে সাধারণত স্বাস্থ্যগত সমস্যা হিসেবে ধরা হয় না। সেজন্য স্বাস্থ্য সেবার মতো বিষয়টিকে প্রাধান্যও দেয়া হয় না। এদেশে মানসিক রোগ বা এ সংক্রান্ত কোন ডাটা বা পরিসংখ্যান পাওয়াটাও দুর্লভ। তবে আশার কথা বর্তমানে সীমিত সংখ্যক প্রবন্ধ বা প্রতিবেদনে বিভিন্ন মানসিক রোগ সম্পর্কে কিছুটা ধারণা পাওয়া যায়। ২০০৩ থেকে ২০০৫ সালে করা জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য জরিপ অনুযায়ী, দেশের মোট জনসংখ্যার ১৬ শতাংশ প্রাপ্তবয়স্ক জনগোষ্ঠী কোন না কোন মানসিক রোগে আক্রান্ত। ২০০৭ সালে প্রাকাশিত ডাব্লিউএইচও-এআইএমএস প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত এক দশকে এই সংখ্যা সাত শতাংশ থেকে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৩ শতাংশে। আর শিশু মানসিক রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৩ থেকে ২৩ শতাংশে। তবে এ সংখ্যা আরো বেশি হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। কারণ এদেশের সামাজিক প্রেক্ষাপটে মানসিক রোগের বিষয়টিকে সামনে আনা হয় না।
এদেশের একমাত্র নিবেদিত মানসিক হাসপাতাল হলো জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য কেন্দ্র-এনআইএমএইচ। প্রতি এক লাখ জনে এই হাসপাতালে বেড রয়েছে শূন্য দশমিক চারটি। তাও শিশু ও কিশোরদের জন্য আলাদা কোন বিভাগ নেই। দেশে মানসিক রোগের চিকিৎসার জন্য মাত্র ৫০ টি কেন্দ্র রয়েছে তবে সেগুলোতে ভর্তি থাকার ব্যবস্থা নেই। আবার এই ৫০ টির মধ্যে মাত্র দুইটিতে শিশু ও কিশোরদের চিকিৎসার ব্যবস্থা রয়েছে। অর্থাৎ এক লাখ মানুষের মধ্যে মাত্র ২৬ জন মানসিক চিকিৎসা সেবা পায়। এছাড়া এদেশে মানসিক রোগে আক্রান্ত রোগীদের জন্য আবাসিক ব্যবস্থাও কম। মাত্র ১১ থেকে ৩১টির মতো। সেগুলোতে প্রতি এক লাখ জনে মাত্র একজনের জন্য আবাসিক ব্যবস্থা রয়েছে। মানসিক রোগের চিকিৎসার জন্য সাইক্রিয়াটিস্ট ও প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত সাইকোলোজিস্টেরও অভাব রয়েছে। প্রতি এক লাখ জনের জন্য মাত্র ০.৪৯ জন। দুঃখজনক হলেও সত্যি যে, প্রতি এক লাখে এদেশে সাইক্রিয়াটিস্ট রয়েছে ০.০৭৩ জন, যাদের বেশিরভাগেরই অবস্থান রাজধানী ঢাকায়।
বিভিন্ন গবেষণায় দেখা যায়, বিশ্বের ১০ থেকে ২০ শতাংশ শিশু-কিশোর কোন না কোন সময়ে মানসিক সমস্যায় আক্রান্ত হয়েছে। এদের মধ্যে অর্ধেকই আক্রান্ত হয়েছে ১৪ বছর বয়েসে। তিন-চতুর্থাংশের মানসিক সমস্যা শুরু হয়েছে ২০ বছর বয়সে।
বাংলাদেশে বেশিরভাগ মানসিক রোগীই চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন না। আর এর জন্য সামাজিক কুসংস্কার, চিকিৎসকের কাছে যেতে ভয় পাওয়া ও চিকিৎসা ব্যবস্থার অপ্রতুলতাই দায়ী। স্বাস্থ্য সেবায় বাংলাদেশ বর্তমানে অনেকটাই এগিয়ে গেছে। সময় এসেছে মানসিক সুস্থতার দিকে নজর দেয়ার। আর এজন্য শুধু সরকার নয়, প্রাইভেট সেক্টরকেও এগিয়ে আসতে হবে। প্রাথমিকভাবে জনগণের মধ্যে মানসিক রোগ বিষয়ক সচেতনতা তৈরি করতে হবে।
লেখক পরিচিতি : ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের হেলথ ইউনিটের গবেষক। মূল ইংরেজি লেখা থেকে অনূদিত ও সংক্ষেপিত।
সম্পাদনা : ইকবাল খান
আপনার মতামত লিখুন :