মন্ডল বাচ্চু
রাস্তার অনেক দিনের বোবা কষ্ট।
সে একটু নির্ভার হতে চায়।
যন্ত্রের গাড়িগুলোর নায়লোনের চাকা,
পথচারীর জুতার ছোল,
ভিক্ষুকের লাঠির ক্ষয় হওয়া তলা,
পাগলের জমানো কাগজের বস্তা,
প্রেমিক প্রেমিকাদের ফেলা দেওয়া বাদামের খোসা,
বৃক্ষরাজীর শুকনো পাতা আর মরা ডাল,
ভোজন বিলাসের উচ্ছিষ্ট ডাস্টবিনের সারি,
বেকারের ছুড়ে ফেলা চাকুরীর বিজ্ঞপ্তি
এমন হাজার জন্জালের ভারে
রাস্তার অনেক কষ্ট হয়।
ভাষাহীন জড় রাস্তা বড় নিরুপায়,
তাই রাস্তা নিজেকে নিজে ভাঙে,
বুকের মধ্যেখানে গর্ত করে,
যত্ন করে ক্ষত পালে।
একটু ভারমুক্ত থাকার আশায়।
অথচ নির্বোধ গাড়িগুলো
ধীরে ধীরে কৌশলে আঘাত করে,
যন্ত্রণার বীনা বাজিয়ে যায়।
স্যাতস্যাতে বুকের ক্ষত নিয়ে,
রাস্তা অপেক্ষা করে এবং স্বপ্ন দেখে।
যেদিন হরতাল হবে,কার্ফু হবে।
সেই দিন আমি নির্ভার হবো,
দু দন্ড বিশ্রাম নেবো, ধরিত্রী মায়ের কোলে।
অবশেষে একদিন তুমুল হরতাল,
রাস্তার সে কি আনন্দ?
তার বুকে আজ কোন যন্ত্রদানবের
গর্জন নেই, নেই পারপারের ভিড়।
সে আজ ঘুমাতে চায়,
শত দিনের, শত সাধনার ঘুম।
হঠাৎ রাস্তার শুকনো বুকে,
নরম শীতল তুলির আচড়ে,
একদল সভ্য মানুষ লিখে চলেছে।
গাড়ি চালকের ফাসি দেওয়া চলবে না।
আমাদের দাবি মানতে হবে।
গাড়ি চালকের মুক্তি চায়।
গাড়ি চালকের কিছু হলে জ্বলবে আগুন ঘরে ঘরে।
রাস্তার ভাবনায় উকি দিলো,
মিশুক মনিরের ছিন্ন ভিন্ন দলিত লাশ।
হাজারো পথচারির আহাজারি।
রাস্তা কষ্ট পেলো, চিৎকার করলো,
হরতালের বিরুদ্ধে হরতাল ডাকলো।
আমি তো এমন হরতাল চায় নি,
যারা আমার বুকের উপর নির্মমভাবে,
নরপিশাচের মতো মানুষকে দলিত করেছে।
তাদের ফাসি বাচাতে হরতাল!
আমি হাজর বছর নির্ঘুম থাকবো,
স্যাতস্যাতে ক্ষতোর উপর দীর্ঘ অপেক্ষার চাষ করবো।
তবু কুৎসিত হত্যাকারীর মুক্তির
স্লোগান আমার বুকে মানবো না।
আজ মানুষকে ডেকে যায়,
আমার বুকের উপর প্রলয় নিত্য করো,
শত পায়ের আঘাতে মাড়িয়ে যাও
ঠুনকো মিথ্যে দাবির হুংকার।
চাপিয়ে দাও শত যন্ত্রের ভার।
এভাবে আমি নির্ভার হতে চায় না,
শুধু চায় রক্তহীন চিরদিন বয়ে যেতে।
তাই আজ হরতালের বিরুদ্ধে
বোবা রাস্তার হরতাল না মানা হরতাল।
সম্পাদনায় : সৌরভ নূর
আপনার মতামত লিখুন :