ব্যারিস্টার জাঈমা খান : সাম্প্রতিক বছর গুলোতে সারা বিশ্বেই সমন্বিত ও সার্বিক উন্নয়নের ওপর বেশি জোর দেয়া হচ্ছে। বাংলাদেশ সেই দেশগুলোর মধ্যে অন্যতম, যারা ধারাবাহিক ও প্রত্যক্ষ উদ্যোগের মাধ্যমে নারীর জীবনমান উন্নয়নের মাধ্যমে দেশের চেহারা পাল্টে দিয়েছে। আমদের দেশের নারীরা নারীর ক্ষমতায়নের প্রভাব ও সফলতার মূর্ত দৃষ্টান্ত হিসেবে নিজেদের প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছেন। ঘরে বসে না থেকে তারা এখন বাবা বা স্বামীর মতই অর্থ উপার্জন করে পরিবারের প্রয়োজন মেটাচ্ছেন। শিক্ষা, রাজনীতি, পেশা, ক্রীড়া – সব ক্ষেত্রেই নিজেদের সার্থকতার প্রমাণ দিচ্ছেন।
২০১০ সালে দেশে কর্মজীবী নারীর সংখ্যা ছিলো এক কোটি বাষট্টি লাখ। ২০১৬-১৭ সালে তা দাঁড়ায় এক কোটি ছিয়াশি লাখ। পরিসংখ্যান বলছে, ভারত, পাকিস্তান বা নেপালের তুলনায় বাংলাদেশে নারীর জন্য কাজের সুযোগ অনেক বেশি। নারীকে এখন ঘরের ও বাইরের দায়িত্বের মধ্যে সমন্বয় তৈরি করে চলতে হয়। ভাবতে অবাক লাগে, কিভাবে একজন নারী একই সঙ্গে একজন কর্তব্যপরায়ণ স্ত্রী, ভালবাসায় পূর্ণ কন্যা এবং স্নেহময়ী মায়ের ভূমিকা পালন করে যেতে পারেন! সেই সঙ্গে তাঁকে লড়ে যেতে হয় সামাজিক মর্যাদার জন্য।
সাংস্কৃতিক, সামাজিক ও ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থোকে বাংলাদেশ পশ্চাদপদ পুরুষতান্ত্রিক মূল্যবোধ ধারণ করলেও, সরকারের তরফ থেকে নারীকে সহায়তা দিতে বেশ কিছু সাংবিধানিক ও আইনী সুরক্ষার ব্যবস্থা আছে।
যৌতুক প্রতিরোধ আইন, পারিবারিক সহিংসতা প্রতিরোধ আইন, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন, মুসলিম পারিবারিক আইনের মত বেশ কিছু আইন প্রণীত হয়েছে নারীকে নিরাপত্তা দিতে।
বাংলাদেশে রাজনৈতিক ক্ষেত্রে নারীর নেতৃত্বের জয়জয়কার, উন্নয়ন প্রক্রিয়ায় নারীর অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে অনেক বড় ভূমিকা রেখেছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নারী অধিকার রক্ষায় অসাধারণ ভূমিকা রাখায় বেশ কয়েকবার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি ও পুরস্কার পেয়েছেন।
এক্ষেত্রে ব্যারিস্টার সারা হোসেনের ভূমিকা উল্লেখযোগ্য। নারী অধিকার রক্ষায় আইনগত লড়াই চালিয়ে তিনি অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন।
নারী অধিকার রক্ষায় আরেক দিকপাল ড. রাবেয়া ভূঁইয়া। আইন শিক্ষায় বড় ভূমিকা রেখে তিনি আন্তর্জাতিক খ্যাতি পেয়েছেন।
গত ১০ বছরে লিঙ্গ বৈষম্য কমিয়ে আনতে অসামান্য অর্জন আছে বাংলাদেশের। গ্লোবাল জেন্ডার গ্যাপ সুচকে ১৪৪ টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান এখন ৪৭।
নারীর ক্ষমতায়নের ফলেই বাংলাদেশ নবজাতক ও শিশু মৃত্যুহার এবং দারিদ্রের হার কমানোর ক্ষেত্রে নতুন নজির সৃষ্টি করেছে।
নতুন নতুন নারী উদ্যোক্তা অর্থনীতিকে দিয়েছে নতুন প্রাণ।
নারী অধিকার ও সামজিক উপস্থিতি নিশ্চিত করতে তাঁদের জন্য নতুন নতুন সুযোগ সৃষ্টি অব্যাহত রাখতে হবে। নারীর উত্তরনের বর্তমান ধারা জোরেশোরে জানান দিচ্ছে, বাংলাদেশের নারীর জন্য ও সব মিল বাংলাদেশের জন্যই সামনে একটা উজ্জ্বল ভবিষ্যত অপেক্ষা করছে।
লেখক পরিচিতি :অ্যাসোসিয়েট, এফ এম এ্যাসোসিয়েটস।
সম্পাদনা : ইকবাল খান
আপনার মতামত লিখুন :